
বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব একটি ভয়াবহ সমস্যা
বাংলাদেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর বেকারত্ব একটি ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরও কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় লাখ লাখ তরুণ হতাশায় ভুগছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট বেকারের ১২ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত, যেখানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে বেকারত্বের হার মাত্র ১.০৭ শতাংশ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনকারীদের মধ্যে ৬৬ শতাংশই বেকার বলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) জানিয়েছে।
এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা আজও বাস্তবমুখী হতে পারেনি। শিক্ষা জীবন শেষে চাকরির প্রতিযোগিতা এতটাই কঠিন হয়ে পড়েছে যে, একটি পদের জন্য শত শত আবেদন পড়ছে। কিন্তু চাকরিতে যোগদানের সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র কয়েকজন। অপরদিকে, সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর এক জরিপে দেখা যায়, ৭৮ শতাংশ তরুণ মনে করেন, পড়াশোনা করেও চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এই হার আরও বেশিÑ ৯০ শতাংশ।
কেন বাড়ছে শিক্ষিত বেকারত্ব
এই সমস্যার পেছনের অন্যতম কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন Ñ শিক্ষার সঙ্গে চাকরির বাজারের সংযোগ নেই : আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো তাত্ত্বিক জ্ঞাননির্ভর, যেখানে বাস্তব দক্ষতা অর্জনের সুযোগ কম। ফলে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অনেকের থাকছে না। কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষার ঘাটতি : উন্নত বিশ্বে শিক্ষার্থীদের একাংশ উচ্চশিক্ষার পরিবর্তে দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার দিকে ঝোঁকে। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো কারিগরি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় না।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত চাকরির অভাব : প্রতিবছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হলেও নতুন কর্মসংস্থান তেমনভাবে সৃষ্টি হচ্ছে না। উদ্যোক্তা ও স্বনির্ভরতার অপ্রতুলতা : দেশে ফ্রিল্যান্সিং, স্টার্টআপ বা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এখনো পর্যাপ্ত সহায়তা নেই। ব্যাংকঋণের জটিলতা ও বিনিয়োগের ঝুঁকির কারণে অনেকেই নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করতে ভয় পান।
সমাধানের সম্ভাব্য উপায়
কর্মমুখী ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা চালু করা : সিলেবাসের মধ্যে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ ও বাস্তবমুখী দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানো : চীন, জাপান, জার্মানি দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশকেও একই পথে হাঁটতে হবে। উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ বাড়ানো : সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ, প্রশিক্ষণ ও সরকারি সহায়তার মাধ্যমে তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ফ্রিল্যান্সিং ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসের প্রসার : বর্তমানে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ অনেক বেশি। সরকারের উচিত তরুণদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
বাংলাদেশের উন্নয়ন টেকসই করতে হলে শিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতেই হবে। শুধু সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষার পরিবর্তে বাস্তবমুখী ও দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার প্রসারই হতে পারে এই সংকট থেকে উত্তরণের মূল চাবিকাঠি।