ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ২০ ফাল্গুন ১৪৩১

দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্জন

-

প্রকাশিত: ২০:২৬, ৪ মার্চ ২০২৫

দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্জন

সম্পাদকীয়

পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতরসহ বিভিন্ন ছুটি মিলিয়ে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, গত রবিবার (২ মার্চ) শুরু হয়েছে ছুটি। খুলবে আগামী ৮ এপ্রিল। সরকারি শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী এ ছুটি, যা সরকারি ও  বেসরকারি সব স্কুলের জন্য প্রযোজ্য। দীর্ঘ ছুটিতে ঘরে বসে পাঠ চালিয়ে যাওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গরমে ও রমজানে বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে, কিন্তু পড়ালেখা থেমে থাকবে না, এটাই প্রত্যাশিত। তবে পাঠ্যবই প্রাপ্তিতে অচলাবস্থার কারণে এ বছর ছুটিতে ঘরে বসে শিক্ষা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
একটু পেছনে ফিরে নতুন বছরের শুরুর সময়গুলোতে তাকানো যাক। বছরের শুরুতে বিদ্যালয়ে নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে নতুন বই নিয়ে বিপুল আগ্রহ ও কৌতূহল থাকে। তারা আশা করে, নতুন ক্লাসে যোগদানের আগেই তাদের হাতে আসবে নতুন ক্লাসের এক সেট বই। সেটি না পেলে স্বভাবতই তারা দমে যায়। সময়ক্ষেপণে তাদের ভেতরে হতাশা তৈরি হওয়াও বিচিত্র কিছু নয়।

এবার সময়মতো ছাপানো সম্ভব না হওয়ায় দেশের বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর হাতে বই পৌঁছায়নি, অথচ ক্লাস শুরু হয়ে যায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক যখন পড়াচ্ছেন, তখন শিক্ষার্থীদেরও মুখে হাত। শিক্ষক যখন পড়ান, তখন শিক্ষার্থীরা বই খুলে বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু চলতি বছর পাঠ্যবই সংকটে এবার তার কিছুই হচ্ছে না। এতে ক্রমেই তারা পিছিয়ে পড়ছে। 
বাস্তবতা এরকম, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম থেকে নবম-দশম শ্রেণির সব পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো সরবরাহ করতে পারেনি পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছে কিছু বই। পরে আরও কিছু বই সরবরাহ করা হলেও বহু শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই পৌঁছায়নি। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনেই উঠে এসেছিল চড়া দামে নতুন বইয়ের ফটোকপি বিক্রির তথ্য।

সপ্তম শ্রেণির যে গণিত বই বিনামূল্যে পাওয়ার কথা, সেটির ফটোকপি অনেকে কিনেছেন ৫০০ টাকার বেশি দিয়ে। এটা ঠিক যে, এবার বছরের শুরুতে নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে কর্তৃপক্ষ কিছুটা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ৪০ কোটি বই ছাপাতে কত হাজার টন কাগজ প্রয়োজন, দেশে এই পরিমাণ কাগজ মজুত আছে কিনা তথা সার্বিক পরিস্থিতি অনুধাবনে অসফল হয়েছে কর্তৃপক্ষ। বই ছাপানোর জন্য ছাপাখানা নির্বাচনও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এক্ষেত্রেও সমস্যা লক্ষ্য করা গেছে।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ সক্রিয় হওয়া। এবারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিলে আগামী বছরের শুরুতেই নিয়ম অনুযায়ী নতুন বই বিতরণে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। যেহেতু স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্জন যাতে বিঘিœত না হয়, সেজন্যে অভিভাবকরা সক্রিয় হলেই আপাত সমাধান মিলতে পারে।

আধুনিক এই ডিজিটাল সময়ে ৪০ দিন পাঠাভ্যাস বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা-উপকরণ কষ্ট করে সংগ্রহ করে নেওয়ার বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে যাদের হাতে বই পৌঁছেছে, তাদেরও সহায়তা নিতে হবে।

×