ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

সুইজারল্যান্ড

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি

মাহবুবউদ্দিন চৌধুরী

প্রকাশিত: ১৯:৫৭, ৩ মার্চ ২০২৫

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি

সুইস চকোলেট, সুইস ঘড়ি এবং সুইস ব্যাংকখ্যাত সুইজারল্যান্ড সত্যিই অভূতপূর্ব। সুইজারল্যান্ডের ছোট একটি শহর জেনেভা। ছোট শহর হলেও শহরটি গুরুত্বের দিক থেকে অন্যতম। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার অফিস ও সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত। যেমনÑ ওয়ার্ল্ড টেলিকমিনিকেশনের সদর দপ্তর, বিশ্বের বিজ্ঞানীদের রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিশ্ব আবহাওয়া দপ্তর, রেডক্রসের সদর দপ্তর, আইএলও, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সদর দপ্তর ইত্যাদি মূলত বিশ্ব সম্মেলনের ক্ষেত্রে জেনেভা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সিটি। জেনেভা সুইজারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহতম জনবহুল শহর। জেনেভা বিশ^ব্যাপী এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু এবং অনেক সময়ই এটিকে গ্লোবাল সিটি হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস থেকে ফ্রান্সের দ্রুততম ট্রেন টিজিবি ডুপ্লেক্সে (যা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩১৯ কিলোমিটার বেগে ছুটে থাকে) করে সুইজারল্যান্ডের সুন্দর ও ছবির মতো চমৎকার শহর জেনেভায় মাত্র ৩ ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। টুরিস্ট বাসে করে জেনেভা শহর ঘুরতে সময়  লাগে মাত্র ২ থেকে ৩ ঘণ্টা। বলে রাখা ভালো, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে যোগদানের পর সুইজারল্যান্ড ও বেলজিয়াম ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেই। টিজিভি ট্রেনে আমার এই প্রথমবারের মতো সফর ছিল। দ্রুতগামী এ ট্রেন সংযুক্ত করেছে ফ্রান্সের প্রধান শহরগুলো ছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশের রাজধানীকে। এ ট্রেন তৈরিতে ব্যবহার হয়েছে উচ্চমানের অ্যালুমিনিয়াম। ফলে ওজন কমেছে। প্রতিটি বগি এতটাই সহনশীল যে সর্বোচ্চ গতিতে চলাচলের সময় একটি টিজিভি ট্রেন দুর্ঘটনা কবলিত হলে এর বগিগুলো একেবারে দুমড়ে-মুচড়ে যাবে না। ফ্রান্সের এসএনসিএফ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে এ ট্রেন ২০১১ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন রুটে চলাচল শুরু করছে। বর্তমানে জেনেভায় প্রচুর ঠান্ডা। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জাঁকজমকপূর্ণ শহরটিতে মানুষের আতিথেয়তা সবাইকে মুগ্ধ করবেÑ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
জেনেভায় প্রায় ৩ লাখ লোকের বসবাস। মাত্র হাজার খানেক বাংলাদেশীর অবস্থান সেখানে। তাদের প্রায় সবাই রেস্টুরেন্ট ব্যবসা, শপিংমল, দোকানে কর্মরত এবং অনেক বাংলাদেশী ভালো চাকরির খোঁজে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক অধিবাসী জেনেভা শহরে বোম্বে রেস্টুরেন্ট, বোম্বেজি গ্লাস ও কারি হাউস নামে কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি সেখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির প্রধান হিসেবে দেশী মানুষের কল্যাণে অভূতপূর্ব সহযোগিতা একসময় করেছেন। লেক লেমন জেনেভা শহরের পর্যটন প্রসিদ্ধ এলাকা। তবে এখন জেনেভায় প্রচণ্ড শীত এবং স্নো পড়ছে। দেখে এসেছি গুঁড়ি গুঁড়ি বরফের বৃষ্টি পড়ছে। আবার নিমেষেই শেষ। এ সময় রৌদ্র বেশ উপভোগ্য। দেশটিতে অপরাধ বলে কিছু নেই বললেই চলে। শান্তির দেশ। তবে অবৈধদের থাকার তেমন কোনো সুযোগ নেই। সারা সুইজারল্যান্ডে ৭ থেকে ৮ হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। আশার আলো এই যে, জেনেভা শহরে বাংলাদেশী কমিউনিটি স্থাপিত ‘বাংলা পাঠশালা’ নামে সোনামণিদের একটি স্কুল রয়েছে। যার তত্ত্বাবধানে প্রবাসী মাহবুবুর রহমান, শাহাদাত, রিয়াজুল হক ফরহাদ এবং হোসেইন প্রমুখ রয়েছেন। বাংলায় লেখাপড়া ও বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি এ স্কুলের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়ে থাকে। জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ডে কোনো দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না। ফ্রান্সের আলমাস শহর জেনেভার নিকটতম সীমান্ত শহর। তবে গ্রীষ্মকালে সুইজারল্যান্ড ভ্রমণ করা চমৎকার সময়। বলে রাখা ভালো ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সুইজারল্যান্ড সবচেয়ে সৌন্দর্যময় দেশ। এর প্রাকৃতিক দৃশ্য ইউরোপের সব দেশকে হার মানায়। পাহাড়, পর্বত, লেক, ভ্যালি এবং আলপাইন বনাঞ্চল ঘেরা এই দেশটিকে আল্লাহ যেন সৌন্দর্যের সব কিছু উজাড় করে দিয়েছেন। জেনেভা শহর থেকে তিন-চার ঘণ্টার মধ্যে জুরিখ, বার্ন, ব্রাসেল, লুজান শহর থেকে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রিয়ার যে  কোনো শহরে বাস-ট্রেনে যাতায়াত করা সহজ। জেনেভা শহরের চতুর্দিকই মনোরম। প্রতিটি প্রান্ত চোখ জুড়ানো। ভ্রমণের ক্ষেত্রে দর্শনীয় স্থানগুলো বাছাই করা মুশকিল। জেনেভার লেক চমৎকার ও বিশাল। এছাড়াও প্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্যে ভরপুর জেনেভা শহর। ভ্রমণ যেন শেষ হতে চায় না। যদি কোনো সময় জেনেভা কেন, সারা সুইজারল্যান্ড সফরে আসেন তবে গ্রীষ্মকাল ভ্রমণের জন্য ভালো সময়। সুযোগ ও সময় করে দেখে আসুন জেনেভা শহর বা গোটা সুইজারল্যান্ড। দেশটি কোনোভাবেই ভুলে থাকার নয়।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী

×