
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বেশ কিছুদিন থেকে অস্থিরতা-উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক বাণিজ্য পরিস্থিতি ব্যাহত হচ্ছে। আরাকান পরিস্থিতির অবনতির কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থীর অনুপ্রেবেশও ঘটেছে বাংলাদেশে। ফলে কক্সবাজার, উখিয়া ও সংলগ্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। সম্প্রতি এসব এলাকায় অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায় এবং মাদকের বিস্তার ঘটেছে, যা উদ্বেগজনক। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত শনিবার কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ কথা বলেন। সার্বিক পরিস্থিতির অবনতির কারণে এবং স্বাভাবিক ব্যবসাবাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার ফলে বাংলাদেশে সীমান্ত সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গাদের আরাকান রাজ্যে পুনর্বাসনের নিমিত্তে বাংলাদেশ আরাকান আর্মির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। কেননা, দীর্ঘদিন থেকে মিয়ানমারে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি গোষ্ঠী সশস্ত্র গৃহযুদ্ধে লিপ্ত। এমনকি তারা রাখাইন রাজ্যের সিংহভাগ দখল করে নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এও বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। কাগজে-কলমে ১২ লাখ রোহিঙ্গার কথা বলা হলেও প্রকৃত রোহিঙ্গার সংখ্যা আরও বেশি। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের জন্য ‘গলার কাঁটা’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, এরা সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় মাদক পাচার ও চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অপরাধ কার্যত বন্ধ করা প্রায় দুঃসাধ্য। অন্যদিকে, মিয়ানমারে দ্রুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনও সম্ভব নয়। কেননা, গৃহযুদ্ধে লিপ্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যাও বর্তমানে বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তাও কমছে দিন দিন। তবে আশার কথা এই যে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছেন। রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। তবে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রবেশের ঘটনা রীতিমতো উদ্বেগজনক। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ পর্যন্ত অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে এও বলা হয়েছে যে, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ আরও বাড়তে পারে।
মিয়ানমারে ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা দীর্ঘদিন থেকে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দমনের নিমিত্ত। বর্তমানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত ও কোণঠাসা। বাংলাদেশ কক্সবাজার-উখিয়া-টেকনাফে ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে এমনিতেই বিপর্যন্ত ও দিশেহারা। গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টিও ঝুলে আছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের চাপ সত্ত্বেও। সেক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে মিয়ানমার সরকারকেই। সে অবস্থায় মিয়ানমারে চীন ও ভারতের প্রভাব এবং ভূরাজনৈতিক বিষয়টি আমলে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে পারে, যেটি হবে বাংলাদেশের জন্য অনুকূল।