ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ৩ মার্চ ২০২৫

ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাই চ্যালেঞ্জ

বিশ্বব্যাপী  গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মানুষ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করে, এমনটিই সারা পৃথিবীতে সভ্য সমাজের সংস্কৃতি। যত ঝামেলা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয়। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ’৭১-এ স্বাধীনতার পর দেশবাসী দেখেছে বাকশালী শাসন, সামরিক শাসন ও কথিত গণতন্ত্রের নামে স্বেচ্ছাচারিতা। যে যখন ক্ষমতায় ছিল, সে তার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে প্রচেষ্টা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের       শাসনামলে ক্যাঙ্গারু নির্বাচন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশের নির্বাচনী কাঠামো বিপর্যস্ত করেছে। এমনকি ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনও ছিল অনিয়ম এবং ভোট কারচুপির অভিযোগে দুষ্ট। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনও ছিল একতরফা, যা দেশের সব বিরোধী দল বর্জন করেছে।
২০১৮ সালে মন্ত্রিসভায় ১ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০২০ সালে একদিন পিছিয়ে ২ মার্চ পালন করা হয় ভোটার দিবস। সেই থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন হয়ে আসছে। অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা দেখেছি, দলীয় সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হয়নি। ভোটের সময় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসন। দলীয় সরকারের অধীনে তারাও সরকারি দলের পক্ষে কাজ করে। নির্বাচন কমিশনও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। অন্যদিকে, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন মোটামুটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন নির্বাচন হবে বিধায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন দেশের নাগরিক সমাজ। দেশটা আমাদের সবার। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ সকলের। বহুমত ও পথের মানুষ একই মোহনায় মিশেছে এই সোনার বাংলাদেশে। এ দেশে কেউ সংখ্যালঘু, কেউ সংখ্যাগুরু এমন বিভাজন আমরা চাই না। দেশের প্রতিটি মুক্তিসংগ্রাম ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ করেছি।
জাতীয় সংবিধানও প্রত্যেক নাগরিকের সমান সুযোগ-সুবিধার অধিকার নিশ্চিত করেছে। কাজেই, একটা পক্ষকে সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত করা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সার্বিক নির্বাচনী ব্যবস্থা ও প্রচারণায় কালো টাকার খেলা বন্ধ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিশুদ্ধতা প্রয়োজন। প্রার্থীদের হলফনামার তথ্য যাচাইয়ের মতো বেশকিছু জটিল কাজও রয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও জবাবদিহির অধীনে নিয়ে আসা জরুরি। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণ বন্ধ করার নিশ্চয়তা পেতে হবে। এসব করতে কিছু আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে সবার আগে। দেশের নাগরিক সমাজ মনে করেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান আদৌ সম্ভব নয়। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার করা না হলে, অতীতের মতো আর দশটা নির্বাচনের মতো হবে আগামীর জাতীয় নির্বাচন, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এমনটি হলে হাজারো শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হবে। কার্যকর একটি নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।

×