ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

বিচারপতি আবদুর রউফ একটি চেতনার নাম

ডা. মো. রুহুল আমিন

প্রকাশিত: ২০:৩২, ২ মার্চ ২০২৫

বিচারপতি আবদুর রউফ একটি চেতনার নাম

সদ্য প্রয়াত বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ (১৯৩৪-২০২৫)  বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। তিনি একটি  সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। সবাইকে শোক বিহ্বল করে একজন কর্মময় জীবনের চিরস্থায়ী প্রস্থান ঘটল অতি সম্প্রতি। পড়ে রইল উত্তরসূরিদের জন্য তার কর্মময় নানা নিদর্শন। বিচারপতি আব্দুর রউফ আইন ও আদালত অঙ্গনে দীর্ঘ পেশাগত জীবনে পেশাদারিত্ব, স্বচ্ছতা এবং দায়িত্ববোধের যে উদাহরণ স্থাপন করেছেন তা একেবারেই বিরল। তিনি কখনো কারও সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টির পরোয়া করেননি। অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে আইনের যে সহযোগিতা প্রদান করেছেন তা একেবারেই অনন্য। তার এ লড়াই ইতিহাসের স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ১৯৯১ সালে জাতীয় একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন।
আর্তমানবতার সেবায় নিবেদিতপ্রাণ, তরুণ চিকিৎসক ওমর ফারুকের সঙ্গে বিচারপতি আবদুর রউফের প্রথম পরিচয় ঘটে ১৯৯৬ সালে  সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে কর্মরত বিচারক থাকা অবস্থায় তিনজন তরুণ চিকিৎসকসহ। তাদের উৎসাহ উদ্দীপনায় বিচারপতি আবদুর  রউফ স্বাস্থ্য সেবায় মানবকল্যাণের মহান ব্রত নিয়ে জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসেও কর্মবিমুখ হননি। মূলত তিনি তরুণদের খুব পছšদ করতেন, তরুণদের নিয়ে আগামীর অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন। এই চেতনা থেকেই অবসর জীবনে তরুণ চিকিৎসকদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন আমৃত্যু। বিচারাঙ্গন থেকে ১৯৯৯ সালে অবসর নিয়ে রাজধানীর মগবাজারে স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন, ইনসাফ বারাকাহ্ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতাল। যা বারাকাহ ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত। আমৃত্যু এ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন বিচারপতি আবদুর রউফ। মানব সেবার এই দর্শন  বিচারপতি মো. আবদুর রউফের অবসর জীবনে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঘুমাতে দেয়নি। ডা. ওমর ফারুকের লো-কস্ট হাইটেক মেডিকেল সার্ভিস কনসেপ্টটি গ্রহণ করে এগিয়ে যাচ্ছে বারাকাহ ফাউন্ডেশন। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চ উচ্চবিত্তরাও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা পেয়ে কৃতজ্ঞ হবেন সবসময়।
একবিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে হেল্থ সেক্টরে লো-কস্ট হাইটেক কনসেপ্টের গ্রহণযোগ্যতার পেক্ষিতে বারাকাহ ফাউন্ডেশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্ববধানে রাজধানীর  মগবাজার, রাজারবাগ  এবং নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে ‘দি বারাকাহ হাসপাতাল’ প্রকল্প চলমান। স্বাস্থ্য সেবার এই প্রকল্পগুলো চলমান অবস্থায় যত বাধা কিংবা প্রতিবন্ধকতা আসুক না কেন, বিচারপতি আবদুর রউফ ইস্পাত কঠিন হয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াতেন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে। তিনি সব সময় বলতেন ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে কখনো সাগর পাড়ি দেওয়া যায় না। সাগর পাড়ি দিতে হলে বড় নৌকাই লাগবে। যা আমাদের সব সময় অনুপ্রাণিত করেছে, উৎসাহ দিয়ে উজ্জীবিত করেছে। তার অমীয় বাণী ছিলÑ সার্ভিস ফাস্ট প্রফিট নেক্সট। তার দর্শনকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে, মালিবাগে তৈরি হতে যাচ্ছে ৪৫তলা বিশিষ্ট বারাকাহ স্পেশালিস্ট হসপিটাল লিমিটেড। যেখানে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবেন।
বিচারপতি আবদুর রউফের স¦প্ন ছিল, বাংলাদেশী রোগীরা বিদেশে চিকিৎসা করাতে যাবেন না। বরং বিদেশী রোগীরা বাংলাদেশে এসে আমাদের স্বাস্থ্য সেবা পেয়ে ধন্য হবেন। মানব কল্যাণে আমরা হব বিশ্বের সেরা দেশগুলোর একটি। অবসরে থাকাকালীন বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ মানব সেবা ও কল্যাণে বারাকা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনুপ্রেরণার একটি উৎস কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। মানব হিতৈষী কল্যাণকামী আমাদের অনেক পথ প্রদর্শক কালের পরিক্রমায় চলে গেছেন না ফেরার  দেশে। এটাই প্রকৃতির ধ্রুব সত্য বিধান। বিচারপতি আবদুর রউফ আজ আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু রয়েছে তার প্রেরণা ও স্বপ্নগুলো। তার স্বপ্নের বারাকাহ ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ গবেষণার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠুক। আগামীর শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে, নির্বিঘ্ন জনস্বাস্থ্য সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বিচারপতি আবদুর রউফের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়রন হোকÑ এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা।


লেখক : ভাইস চেয়ারম্যান, দি বারাকাহ ফাউন্ডেশন, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

×