
সম্প্রতি ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঢেলে সাজিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতে গ্রহণ করেছে নানা উদ্যোগ। দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বসানো হয়েছে বিশ্বের সুখ্যাত বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপকও। কিন্তু তারপরও দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন শান্ত থাকছে না। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেই চলেছে। কোনো কোনো ঘটনা দেশকে নাড়িয়েও দিচ্ছে। যেমন- কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমির কারাগার থেকে পালানোর খবরে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাস। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রতিষ্ঠাকালীন নাম ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরাও নানা দাবির প্রেক্ষিতে আন্দোলন করেন, যার চূড়ান্ত সুরাহা হয়নি এখনো। দেশের প্রথম সারির উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এমন অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় অভিভাবকরা যেমন সন্তানদের শিক্ষাজীবন নিয়ে দুচিন্তায় আছেন, তেমনি সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আছেন অস্বস্তিতে। সম্প্রতি বেশ কিছু বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ক্যাম্পাসগুলোতে চলমান অস্থিরতা সন্তানদের ভর্তি করানোর ক্ষেত্রে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে তুলেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের প্রক্রিয়ায় যেভাবে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হতো, সেই প্রক্রিয়ার কোনো পরিবর্তন হয়নি। যারা নিয়োগ দেন তাদের পরিচিত হলেই ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমেই ধুঁকছে। কাজেই অশান্ত ক্যাম্পাসগুলো যেকোনো মূল্যে শান্ত করা জরুরি। এ বিষয়ে সরকারের বিশেষ নজর দেওয়া এবং উচ্চ পর্যায় থেকে গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তারা।
বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক সদস্য জানান, সমস্যা সমাধানে ইউজিসির কিছুই করার নেই। তার মতে, বিশ^বিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন বিষয় দেখার জন্য রয়েছে সিন্ডিকেট। এ বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশের বাইরে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেক্ষেত্রে কিছু করার আছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। সামগ্রিক উচ্চ শিক্ষায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে স্ব স্ব বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকেই উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সমস্যা সমাধানে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে তারা। সেইসঙ্গে ইউজিসি এক্ষেত্রে একেবারেই কিছু করতে পারবে না বিষয়টি এমন নয় বলে তাদের অভিমত।
শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাঙ্গনের অনুকূল পরিবেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের পরিবেশের প্রতি বিশেষ সতর্ক থাকা চাই। আজকের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের দেশ ও জাতির পথনির্দেশক। অস্থিতিশীল তথা প্রতিকূল পরিবেশ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়। তাই ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ স্থিতিশীল রাখা প্রয়োজন। দেশ, জাতি ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থে যে কোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা আবশ্যক। সামনের দিনগুলোতে শিক্ষার্থীরা কল্যাণের পথে হাঁটুক, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে কাঁধে তুলে নিক দেশমাতৃকার ভার- এটাই প্রত্যাশা।