ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রমজানে দ্রব্যমূল্য

প্রকাশিত: ২০:১৬, ২ মার্চ ২০২৫

রমজানে দ্রব্যমূল্য

পবিত্র রমজান যখন দোরগোড়ায়, বরাবরের মতো ঠিক তখনই নিত্যপণ্যের দামে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। পবিত্র মাসটিকে কেন্দ্র করে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুরনো অসাধু সিন্ডিকেট। সবজির ভরা মৌসুমেও বিশেষ করে বেগুন, লেবু, শসাসহ যেসব পণ্য ইফতারির আইটেম হিসেবে বেশি চলে, সে সবের দামে অস্থিরতা বিরাজমান। ভোজ্যতেলের সংকট চলছে বেশ কিছুদিন থেকে। বোতলজাত সয়াবিন তেলও প্রায় উধাও বাজার থেকে। তেল কিনতে ভোক্তাকে প্রতি লিটারে ব্যয় করতে হচ্ছে কমবেশি ২০০ টাকা। অনেক দোকানে ভোজ্যতেল পাওয়াও যাচ্ছে না। বাজারে প্রায় সবরকম চালের দাম বেড়েছে। অথচ ভোজ্যতেল আমদানিতে দুই দফায় কমানো হয়েছে শুল্ককর। এখন ভোজ্যতেল আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই। চাল আমদানি বৃদ্ধির জন্য প্রায় সম্পূর্ণ শুল্ককর প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবু এই দুটো পণ্যের দাম বেশ অস্থিতিশীল বলা যায়।
এবারে রমজানে বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। পণ্য মজুদকারীদের বিরুদ্ধে সারাদেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বাজার তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি ভর্তুকি মূল্যে শুরু করেছে পণ্য সামগ্রী বিক্রয় কার্যক্রম। এর পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে মাসব্যাপী ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে দুধ, ডিম, মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রি করা হচ্ছে নিম্নবিত্ত ৫০ লাখ পরিবারের কাছে। তবু নিত্যপণ্যের বাজারে এসবের তেমন ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় না। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)Ñ এর মতে, বাজারে আমদানিকারক যখন গুটিকতক তখন আমদানি ও নিত্যপণ্যের দাম তাদের মর্জির ওপর নির্ভরশীল। সেক্ষেত্রে বাজারে পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।
বরাবরই রোজার তিন-চার মাস আগে থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে শুরু হয় কারসাজি। এবার অন্তর্বর্তী সরকারের নানামুখী উদ্যোগেও কমছে না সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি। আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এসব চক্র। প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। অন্তর্বর্তী সরকার শুল্ক ও কর ছাড়ের মতো অনেক পদক্ষেপ নিলেও সেই সুবিধা লুফে নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, চাঁদাবাজ ও সিন্ডিকেট চক্রে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতবদল হয়েছে। পাঁচ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নিত্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করলেও কিছুদিনের মধ্যে আবার বাড়তে থাকে বলে জানিয়েছেন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)  সহসভাপতি।  যেভাবেই হোক এই অপসংস্কৃতি থেকে দেশকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাজারে অস্থিরতা কমাতে প্রয়োজনে সমবায় পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে এবং সক্রিয় করতে হবে টাস্কফোর্স। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

×