
রমজানের আগে হঠাৎ করেই দেশের জাতীয় রাজনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে অন্যতম বড় দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বর্ধিত সভা করেছে প্রায় সাত বছর পর। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ সমন্বয়করা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি নামের দলটির ঘটা করে আত্মপ্রকাশও ঘটেছে শুক্রবার মানিক মিয়া এভিনিউতে বিশাল সভা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। এই তোড়জোড় যে সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। পবিত্র রমজান মাসে রাজনৈতিক কার্যক্রম অনেকটা সীমিত থাকে। যদিও ইফতার পার্টি আয়োজনের মধ্য দিয়ে জনসংযোগ ও রাজনীতিকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। যাহোক, সুস্থ রাজনীতি দেশবাসী চায়, সেইসঙ্গে চায় রাজনৈতিক সুস্থ প্রতিযোগিতাও। সব দল তাদের নীতিমালা উদ্দেশ্য আদর্শ নিয়ে জনগণের কাছে যাবে। মানুষ সেসব বিচার বিবেচনা করে কোনো একটি দলকে সমর্থন জানাবে, বা দলের মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দেবে। যে দল বেশি সংখ্যক সংসদীয় আসনে জয়লাভ করতে পারবে, তারাই সরকার গঠন করবে। যেটি হবে জনতার ভোটে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার। এটাই প্রত্যাশিত এবং স্বাভাবিক গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।
প্রসঙ্গত, বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপির সভার স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলো সংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এই আয়োজন। যেখানে সারাদেশ থেকে চার হাজারের বেশি প্রতিনিধি সমবেত হন। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, বিএনপি যে সংসদীয় রাজনীতির দল এবং তাদের ভাবনায় যে নির্বাচনমুখী রাজনীতি, সেই বার্তা দেওয়া হলো সংসদ ভবন এলাকায় সভা করে। এটা শুভলক্ষণ।
সাত বছরে প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বক্তব্যে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সরকারকে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের তাগিদ দেন। তিনি বলেন, ‘দেশ আজ এক সংকটময় সময় অতিক্রম করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা।’ উল্লেখ করা দরকার, বিএনপির শীর্ষ নেতারা অতীত দিনের মতো প্রতিপক্ষ দলকে দোষারোপ করে কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে বিরত ছিলেন।
পক্ষান্তরে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দলটিকে ঘিরে মানুষের রয়েছে বিপুল কৌতূহল। এই দল সংগঠিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ ছেড়ে জনতার কাতারে এসেছেন নাহিদ ইসলাম। তাকে নিয়েও রয়েছে দেশবাসীর অনেক কৌতূহল। তরুণরা দেশবাসীর সামনে কী রাজনৈতিক দর্শন ও সংস্কার এবং সমাজ বদলের রূপরেখা নিয় উপস্থিত হন, সেটিই দেখার বিষয়। এটা ঠিক যে, সুপরিচিত রাজনৈতিক দলগুলো সম্পর্কে মানুষের সম্যক ধারণা রয়েছে। অন্যদিকে তরুণদের নতুন দল সবে যাত্রা শুরু করল। তাই তাদের ভাবনাচিন্তা মানুষের জন্য একেবারে নতুন হবে। মানুষ সব সময় নতুনের জন্য মনের জানালা খুলে রাখে। তাই সবারই প্রত্যাশা ভালো কিছুর।
মানুষ অতীতমুখী হতে চায় না। সামনের দিকে এগোতে চায়। চায় রাজনৈতিক স্থিরতা ও সহনশীলতা, চায় সব মানবিক প্রয়োজন মিটিয়ে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে। যেখানে থাকবে না হানাহানি ও যাবতীয় চেনা ভীতি। মানুষ সুদিনের অপেক্ষায় আছে। আছে সুশাসনের প্রতীক্ষায়। সেজন্য চাই অংশগ্রহণমূলক মুক্ত অবাধ নির্বাচন এবং রাজনীতিতে সুবাতাস। বাংলাদেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে।