
সম্প্রতি, যমুনায় হজ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘পবিত্র হজ পালন সহজ করার জন্য মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে একটি সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগ যেন আমরা সর্বোচ্চ কাজে লাগাই। একজন হজযাত্রীও যেন কোনো ধরনের ভোগান্তির শিকার না হন, সে প্রচেষ্টা থাকতে হবে।’ হজ ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ ধর্মানুসারীদের অর্থপূর্ণ ইবাদত। কেবল আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং শারীরিকভাবে সক্ষম ও সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন বালেগ মুসলিমদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ বা অত্যাবশ্যক ইবাদত। ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির দুটি ইবাদত হলো ব্যক্তির অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতার ওপর নির্ভরশীল, একটি হজ অন্যটি জাকাত।
বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছরই হজ নিয়ে ঘটে থাকে তুঘলকি কাণ্ড। ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সারা জীবনের সঞ্চয়, গবাদিপশু কিংবা ভিটেমাটি বিক্রি করে শেষ সম্বলটুকু হজ এজেন্সিগুলোর স্থানীয় এজেন্টের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপরও কখনো কখনো পবিত্র মক্কানগরীতে পৌঁছাতে পারেন না পুণ্যার্থীগণ। দুঃখজনক হলো, পবিত্র হজযাত্রা সহজ, সুন্দর ও নিরাপদ করতে ‘হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার’ চালু করে হজযাত্রীদের সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এখানে সার্বক্ষণিক একটি কল সেন্টার চালু থাকবে, সেখানে যেসব অভিযোগ আসবে, সেগুলো ঢাকা থেকেই যেন তৎক্ষণাৎ তদারকি করা যায়। এমন একটি ওয়েবসাইট থাকবে, যেখানে প্রত্যেক হজযাত্রী যুক্ত থেকে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। সৌদিতে কেউ হারিয়ে গেলে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তার অবস্থান স্বজনরা খুঁজে পাবেন। কলসেন্টারে কী ধরনের অভিযোগ আসছে, সেগুলো লিপিবদ্ধ করে তার ভিত্তিতে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ সহজ হবে। হজের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যে সমস্যাগুলো পাওয়া যাবে, তার কতটা সুরাহা হলো এবং হলো নাÑ সে তথ্য থাকতে হবে। নীতিনির্ধারকরা আলোচনার মাধ্যমে যথাযথ সিদ্ধান্ত নেবেন, যেন এ অভিযোগগুলো পরের বছর আর না আসে। নিঃসন্দেহে এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একটি মহৎ উদ্যোগ, যা বাংলাদেশী হজযাত্রীদের জন্য বড় সুসংবাদ।
বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রীরা জেদ্দা কিংবা মদিনায় নেমেই পড়েন বিপাকে। অধিকাংশ বেসরকারি এজেন্সি হজযাত্রীদের যেখানে যে মানের হোটেলে রাখার কথা, সেখানে না উঠিয়ে অন্য হোটেলে পৌঁছে দেন। কখনো এমন হয়, এজেন্সির কোনো লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে অথৈ সাগরে ভাসতে হয় ভাষা না জানা অনারবদের। কোথায় অভিযোগ জানাতে হবে, তাও তারা জানেন না। প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে হজযাত্রায় অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা দৃশ্যমান। অধিকাংশ অব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা। এ ছাড়া হাজিদের সেবায় নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তারাও নানা অনিয়মে জড়িয়ে থাকেন অর্থের বিনিময়ে। ফলে, ভোগান্তির শিকার হন সরলমনা ধর্মপ্রাণ হজযাত্রীরা। দীর্ঘসময়ের ভ্রমণ ক্লান্তির পরও নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। হজযাত্রায় শুরুর পর থেকেই দেশে ও সৌদি আরবে হজযাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। পবিত্র কাবা লাগোয়া হোটেল দেওয়ার কথা বলে কাবা ঘর থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের শাওকিয়া নামক এলাকার কমদামের হোটেলে বয়োবৃদ্ধ হজযাত্রীদের রাখা হয়। ফলে, বাংলাদেশীরা পবিত্র মক্কায় পাঁচওয়াক্ত সালাত আদায় করতে পারেন না। সরকারি কর্মকর্তারা ত৭াদের সেবা না দিয়ে সৌদির বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ ও কেনাকাটায় থাকেন ব্যস্ত। হজ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এমন অরাজকতা থেকে যেন পরিত্রাণ পেতে পারেন পুণ্যার্থীরাÑ সেটাই প্রত্যাশা।