ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪ ফাল্গুন ১৪৩১

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ॥ দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার অভাব ও চ্যালেঞ্জ

মাকফুর রহমান

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ॥ দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষার অভাব ও চ্যালেঞ্জ

‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’- এই বাক্যটি আমরা ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা কি আদৌ জাতির মেরুদণ্ড শক্তিশালী করছে, নাকি এটি শুধুই সার্টিফিকেট নির্ভর, দক্ষতাহীন শিক্ষিত বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে? বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার অকার্যকরতা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যবস্থা তরুণ প্রজন্মকে বাস্তব জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হচ্ছে।
শিক্ষাব্যবস্থার বর্তমান চিত্র : বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থীকে স্নাতক শেষ করতে গড়ে ২৫-২৭ বছর বয়স হয়ে যায়। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে তারা যে জ্ঞান অর্জন করে, তা চাকরির বাজারে তেমন কোনো কাজে আসে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা স্নাতক শেষ করে চাকরির জন্য আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করে। এতে সময়, অর্থ এবং শক্তির অপচয় ঘটে। শিক্ষাব্যবস্থা শুধু একটি সার্টিফিকেট দিচ্ছে, কিন্তু সেই সার্টিফিকেটের বাস্তব জীবনে কোনো মূল্য নেই। চাকরির বাজারে দক্ষতার চাহিদা থাকলেও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই দক্ষতা প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে।
দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার অভাব : একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্ব দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বাড়ছে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখনও সেই পুরনো ধাঁচে আটকে আছে। বর্তমান বিশ্বে একাডেমিক শিক্ষার মূল্য তখনই, যখন তা দক্ষতা ভিত্তিক হয়। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষার অভাব প্রকট। ফলে, শিক্ষিত যুবকরা চাকরির বাজারে পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনো ব্যক্তি বিশেষ কোনো বিষয়ে দক্ষ হয়, তাহলে চাকরি তাকে খুঁজে নেবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সেই দক্ষতা অর্জনে সহায়ক নয়।
সমাধানের পথ : এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের বিশেষ দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাঠ্যক্রমের সঙ্গে দক্ষতাভিত্তিক বিভিন্ন কোর্স যুক্ত করে শিক্ষাকে আরও বাস্তবমুখী করতে হবে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাব্যবস্থাকে সংক্ষিপ্ত করে কার্যকর ও প্রাসঙ্গিক করতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং আইসিটির উপর জোর দিয়ে আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
শিক্ষা শুধু সার্টিফিকেটের জন্য নয় : শিক্ষা শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য নয়, এটি জীবনের জন্য। আমাদের তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন, আশা এবং সম্ভাবনাকে বাঁচাতে হলে শিক্ষাব্যবস্থায় বড় ধরনের সংস্কার প্রয়োজন। দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষাই পারে তরুণদের হতাশা দূর করে নতুন করে স্বপ্ন দেখাতে। এই পরিবর্তন শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির জন্যও অপরিহার্য।
জাগরণের সময় : সময় এসেছে জেগে উঠার, সময় এসেছে পরিবর্তনের। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে দক্ষতা ভিত্তিক ও বাস্তবমুখী করে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তরুণ প্রজন্ম বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে। এই পরিবর্তন আনতে সরকার, শিক্ষাবিদ এবং সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একযোগে কাজ করতে হবে।

শিক্ষার্থী, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

×