ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩ ফাল্গুন ১৪৩১

চরমপন্থি আতঙ্ক

প্রকাশিত: ২০:২৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চরমপন্থি আতঙ্ক

সম্পাদকীয়

চরমপন্থি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ঝিনাইদহ জেলা ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর গ্রামের শ্মশানঘাটে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গুলি করে হত্যা করা হয় পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির আঞ্চলিক কমান্ডার হানিফসহ দুই সহযোগীকে। হত্যার দায় স্বীকার করে আরেক চরমপন্থি সংগঠন জাসদ গণবাহিনী পরিচয়ে আগের মতো কর্মীদের হোয়াটসঅ্যাপে খুদে বার্তা পাঠিয়েছে।

আকস্মিক চরমপন্থিদের এই উত্থানে জনপদে স্বভাবতই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আতঙ্ক ও শঙ্কা। নিহত তিনজনের ময়নাতদন্ত শেষে গত শনিবার পুলিশ মৃতদেহ হস্তান্তর করেছে স্বজনদের কাছে। এ নিয়ে রবিবার তিন পক্ষই মামলা দায়ের করেছে ঝিনাইদহ থানায়। এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। 
ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, ‘ট্রিপল মার্ডারের পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনও ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেছে’। পুলিশ এও জানায়, তাদের কাছে নানা ধরনের তথ্য আসছে। সেসব চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ হত্যাকা-কে ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হরিণাকু-ুর কায়েতপাড়া বাঁওড় নিয়ে বিবদমান দুই চরমপন্থি দলের মধ্যে এ খুনাখুনি কিনা, তাও দেখা হচ্ছে। খুব দ্রুতই পুলিশ এই ট্রিপল মার্ডারের ক্লু উদ্ধার করতে সক্ষম হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। অপরাধীরা পার পাবে না কিছুতেই। 
উল্লেখ্য, এক সময় বিশেষ করে ৯০-এর দশকে দক্ষিণ-পশ্চিমের রক্তাক্ত জনপদ হিসেবে খ্যাত ঝিনাইদহে দাপিয়ে বেড়াত জাসদ গণবাহিনী, বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি ও সর্বহারা চরমপন্থি দলগুলো। দীর্ঘদিন থেকে এদের আধিপত্য ছিল ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জনপদে। নিষিদ্ধ চরমপন্থি দলগুলোর নৃশংসতা ছিল চরম পর্যায়ে। পারস্পরিক বিবাদ,  হানাহানি ও গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভাঙত মানুষের। বিরাজমান ছিল চরম ভীতি ও আতঙ্ক।

মাথা কেটে পরিবারের স্বজনদের সামনে খেলা হতো ফুটবল। এমনকি পুলিশও তাদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পায়নি। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভিন্ন এলাকায় স্থাপন করা হয় পুলিশ ক্যাম্প। মানবাধিকার লঙ্ঘন পৌঁছে যায় চরম পর্যায়ে। ফলে, প্রশাসন ও পুলিশি তৎপরতায় নির্মূল হয়ে যায় চরমপন্থি দলগুলো। অনেকেই চলে যান আত্মগোপনে। 
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বলছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চরমপন্থি দলগুলোর তৎপরতা দুঃখজনক। চরমপন্থি দমনে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। স্বীকার করতে হবে যে, চরমপন্থি দলগুলোর আদৌ কোনো রাজনৈতিক আদর্শ বা নীতি-নৈতিকতা নেই। এদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো পারস্পরিক কোন্দল, হানাহানি ও গোলাগুলিতে লিপ্ত হওয়া।

এর পাশাপাশি অপেক্ষকৃত সচ্ছলদের বাড়িতে ডাকাতি করা। মানুষ খুন তাদের কাছে নিতান্তই ছেলেখেলা মাত্র। তাই জনপদে বিরাজমান ভীতি ও আতঙ্ক দূর করার জন্য পুলিশ ও প্রশাসনের অবিলম্বে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করা বাঞ্ছনীয়।

×