
বিশ্বের অনেক দেশেই বইমেলা হয়। কোথাও কোথাও তা হয় নিছক বাণিজ্যের প্রয়োজনে। বাংলাদেশে অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল উদ্দেশ্য হলো ভাষা আন্দোলনের চেতনা এবং ভাষা শহীদদের স্মৃতি তুলে ধরা। বলা যায়, দেশের প্রকাশনা শিল্পের কর্মকাণ্ড অনেকটাই অমর একুশে গ্রন্থমেলাকেন্দ্রিক। এই গ্রন্থমেলাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত থাকেন পাঠক, লেখক ও প্রকাশকরা। সর্বস্তরের মানুষের পদচারণায় মুখর হয় মেলা প্রাঙ্গণ। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন হাজারো গ্রন্থপ্রেমী মানুষ। এ বইমেলায় সৃজনশীল বইয়ের প্রদর্শন ও বিপণনের উদ্যোগে প্রতি বছর যোগ হচ্ছে সাফল্যের নতুন মাত্রা।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বইমেলা উপলক্ষে মানসম্মত বই প্রকাশিত হচ্ছে খুবই কম। হাজার হাজার বই প্রকাশিত হচ্ছে, সে তুলনায় ভালো বইয়ের সংখ্যা কম। ফলে কমছে পাঠক সংখ্যা। একটি সময় বই ছিল বাঙালির মনের তৃষ্ণা নিবারণ ও অবসর যাপনের অনুষঙ্গ।
মানুষের আর্থিক সামর্থ্য কম থাকায় এবং বইও সহজলভ্য না থাকায় পাঠাগারে গিয়ে বই পড়ার একটি সুন্দর চর্চা গড়ে উঠেছিল। একইসঙ্গে ছিল ধার করে বই পড়ার রেওয়াজ। একটি বই হাতে হাতে ঘুরতে ঘুরতে জীর্ণ হয়ে যেত। কালের বিবর্তনে আজ এমন রেওয়াজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেলায় বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না মানসম্মত বই। অনেক বই মলাটবন্দি হয়ে আসছে কোনো সম্পাদনা ছাড়াই। মানহীন, তথ্য ও মুদ্রণ ত্রুটিযুক্ত বইয়ে বাজার ভরে যাচ্ছে। এ ধরনের বই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা পাঠকদের পীড়া দেয়। এ বিষয়ে প্রকাশকসহ সংশ্লিষ্ট সবার আরও মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বিগত শতাব্দীর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিকের পর সেই মাপের উল্লেখযোগ্য কোনো বাঙালি লেখকের আবির্ভাব ঘটেনি। পরবর্তী পর্যায়ের কবি-সাহিত্যিক ছিলেন যারা, তাদেরও বেশিরভাগ গত হয়েছেন।
বর্তমানে কিছু উদীয়মান লেখক পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী লেখার চেষ্টা করছেন। তবে দেখা যায় পাঠকরা নতুন লেখকদের বই সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে না। ফলে উদীয়মান লেখকরা লেখালেখির উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। সর্বোপরি বলা যায়, বইমেলায় যেমন রয়েছে ভালো বইয়ের অভাব, তেমনি রয়েছে পাঠকের মূল্যায়নের ঘাটতিও।
কে এম ছালেহ আহমদ জাহেরী
নাঙ্গলকোট, কুমিল্লা