
রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের পরেই অবস্থান করছে শব্দদূষণ, যা মহানগরীর অন্যতম একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিভিন্ন রকমের যানবাহনের নানা শব্দের হর্ন থাকলেও এবারে আলোচনায় উঠে এসেছে হাইড্রোলিক হর্নের বিষয়টি। উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী হাইড্রোলিক হর্ন আগে বিশেষ করে মালবাহী ট্রাক ও যানবাহনে লাগানো হলেও, পরে তা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে, এর ব্যবহার কমে যায় বহুলাংশে। তবে ইদানীং কতিপয় কিশোর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের বাইক তথা মোটরসাইকেলে হাইড্রোলিক হর্ন লাগিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজধানীর রাজপথ ও অলিগলি। এরা না মানে ট্রাফিক আইন, না মানে কোনো নিয়মকানুন। একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর বাইক বা মোটরযানের লাইসেন্স পাওয়ার কথা থাকলেও বেপরোয়া এসব কিশোর বিশেষ করে অভিভাবকদের আশকারায় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বাগিয়ে নিয়েছে লাইসেন্স। আবার অনেকেই আছে লাইসেন্সবিহীন। ফলে, তাদের দৌরাত্ম্য ও শব্দদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে দিন দিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুই থেকে ছয় লাখ টাকা দামের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বাইকগুলো মোডিফাই করে এরা লাগিয়ে নিয়েছে উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী হলার। কেটে বাদ দিয়েছে সাইলেন্সার। ফলে তীব্র শব্দদূষণ সৃষ্টিকারী হাইড্রোলিক হর্নের ভয়ংকর অত্যাচারে অতিষ্ঠ মহানগরবাসী। অধিকাংশই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অপ্রাপ্তবয়স্ক। কেউ কেউ এমনকি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। ফলে, একদিকে যেমন বাড়ছে শব্দদূষণ, অন্যদিকে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনাসহ অপরাধের মাত্রা। উল্লেখ্য, বিভিন্ন যানবাহনের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার শীর্ষে অবস্থান করছে মোটরবাইক। মৃত্যুর হারও কম নয়। অবিলম্বে এই বেপরোয়া শ্রেণির বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে তা ক্রমাগত বাড়তেই থাকবে। বৃদ্ধি পাবে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য ও অপরাধের মাত্রা।
রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ শহরের অন্যতম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় নিরাপদ শব্দসীমা ৫৫ ডেসিবল। বাণিজ্যিক ও যানজটপ্রবণ এলাকায় এই মাত্রা ৭০ ডেসিবল নির্ধারিত। সেখানে ঢাকায় গড় শব্দের মাত্রা ১১৯ ডেসিবলÑ এমনটাই জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক-কান ও গলা বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ঢাকা শহরে প্রায় ১ কোটি মানুষ শব্দদূষণের কারণে রয়েছেন সমূহ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। অন্য এক গবেষণায় জানা যায়, প্রায় ৯১ শতাংশ মানুষ তাদের আশপাশে শব্দদূষণের সমস্যা অনুভব করেন, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শব্দদূষণের কারণে কানে সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, ঘুমের ব্যাঘাত, হার্টে সমস্যা ইত্যাদি তো আছেই। নিয়মিত শব্দদূষণে এক সময় এমনকি বধির হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, নদীদূষণ, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি প্রতিরোধে সরকারের আইন রয়েছে। বাস্তবে এসব আইনের প্রয়োগ অত্যন্ত সীমিত অথবা নেই বললেই চলে। সেক্ষেত্রে সার্বিক দূষণ প্রতিরোধে সর্বস্তরের জনগণের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি ও অপরিহার্য। সেসব বিবেচনায় রেখে পর্যায়ক্রমে পুরো ঢাকাকে হর্নমুক্ত তথা শব্দদূষণমুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আপাতত গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে যেমনÑ হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, সচিবালয়, বিমানবন্দর এলাকায় শব্দদূষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরে পুরো ঢাকা শহর ও বিভাগীয় শহরে শব্দদূষণ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা এবং সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে এর বিকল্প নেই।