
বর্তমানে আমাদের দেশ প্রায় ৮৬ হাজার গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত (জনশুমারি ২০২২ অনুযায়ী)। দেশের প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষ গ্রামের বাস এবং তার মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ কৃষি কাজ করে। তাই একথা সবাই অবগত যে দেশের সার্বিক উন্নয়নে গ্রাম এবং গ্রামীণ উন্নয়ন হওয়া জরুরি। আর এই উন্নয়নে যুবসমাজের অংশগ্রহণ হতে পারে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কেননা যুবকরাই পারে সমাজকে তাদের নিজেদের মতো করে সাজাতে। মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে যুবক বয়স। এ বয়সেই যুবকরা দেশ ও জাতির উন্নয়নে এগিয়ে থাকে। এই যুবকরাই ৭১ এ দেশ স্বাধীন করেছিল, সেই যুবকরাই ২৪ এর স্বৈরাচারী শাসককে নির্মূল করেছে। যুবকরা চাইলেই দেশকে পরিবর্তন করতে পারে, দেশকে শুধরে দিতে পারে। আর দেশকে শুধরাতে হলে দেশের একদম মূল থেকে কাজ শুরু করতে হবে। প্রতিটি সমাজকে সুন্দর করে সাজাতে পারলেই তা দেশের উন্নয়নের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাই এ কাজে যুবকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়াও স্থানীয় সরকারেরও দায়িত্ব থাকে সমাজের উন্নয়নে সবাইকে সার্বিক সহযোগিতা করার। সবার সার্বিক সহায়তায় দেশ এগিয়ে যাবে দুর্বার গতিতে। ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে ধাপে ধাপে।
যেমনÑ
১. স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা : উন্নয়নের পূর্বশর্ত হলো স্থানীয় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা। একমাত্র তারাই জানে কিসে তাদের ভালো-মন্দ। কিসে তাদের ভালো আর কিসে মন্দ হবে সে ব্যাপারে সমাজের সবাইকে অবগত করতে হবে। সবার কাছ থেকে মতামত গ্রহণ করতে হবে।
২. অবকাঠামো নির্মাণ : স্থানীয় সরকারের উচিত গ্রামে প্রয়োজনীয় সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে শিক্ষিত জনবল তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া গ্রামের অন্যান্য সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধান করা।
৩. সচেতনতা বৃদ্ধি : গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর হওয়ায় তারা উন্নত জীবনযাপনের ব্যাপারে উদাসীন। গ্রামের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে সচেতনতা জাগ্রত করতে হবে। যেন সকলে তাদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করতে পারে।
৪. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ : উচ্চ জন্মহার একটি দেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই স্থানীয় সরকারের উচিত জন্মনিরোধক ও পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত জ্ঞান সবার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া।
৫. নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও শিক্ষা বিস্তার : শিক্ষাই জাতির মেরুদÐ। শিক্ষিত ব্যক্তি জানে কিভাবে সমাজকে এগিয়ে নিতে হবে। শিক্ষা মানুষকে সচেতন করে, নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত করে, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করে। তাই গ্রামে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য আলাদা করে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে সমাজের যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে।
০৬. স্বাস্থ্য সচেতনতা : গ্রামের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদাসীন। কোনো রোগ হলে তারা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। ফলে হিতে বিপরীত হয়। রোগ কমার বদলে বাড়তে থাকে। সমাজের শিক্ষিত যুবকদের উচিত এ ব্যাপারের সমাজে সচেতনতা বিস্তার করা। এ ছাড়া সরকারের উচিত গ্রাম্য এলাকায় থাকা চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোর সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি এবং অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে এগুলো পরিচালনা করা।
৭. কর্মসংস্থান : বর্তমানে অনেক যুবক পড়াশোনা শেষ করে বেকার ঘোরাঘুরি করে। সরকারের উচিত আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে গ্রামের যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া।
৮. কৃষি আধুনিকীকরণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার : গ্রামের অধিকাংশ কৃষক এখনো আদিম পদ্ধতিতে লাঙ্গল-গরুর সাহায্যে জমিতে চাষাবাদ করে থাকে। শিক্ষার জ্ঞান না থাকায় তারা আধুনিক যন্ত্রপাতি সম্পর্কে ধারণা কম। স্থানীয় সরকারের উচিত উৎপাদন বৃদ্ধি করে এসব কৃষকের মধ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালার ব্যবস্থা করা এবং সুলভ মূল্যে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা।
৯. কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি : বাংলাদেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ দাঁড়িয়ে আছে কৃষির ওপর। স্থানীয় সরকারের উচিত প্রয়োজনীয় বীজ, সার, কীটনাশক, প্রশিক্ষণ এবং ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
১০. ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠা : গ্রামের নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং এর উন্নয়ন করতে হবে। গ্রামীণ নারীদের কারুশিল্পের প্রতি নজর দিতে হবে।
গ্রামীণ উন্নয়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি ও জটিল পরিকল্পনা। যা বাস্তবায়ন করতে হলে সমাজের প্রতিটি মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এর সঙ্গে স্থানীয় সরকারকেও তাদের যথোপযুক্ত ভ‚মিকা পালন করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় গ্রামীণ উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশ, জাতি ও দেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ