ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

মিডিয়া লিটারেসি কি? ক্রিটিকাল লিটারেসি থিওরির ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ২১:৩৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মিডিয়া লিটারেসি কি? ক্রিটিকাল লিটারেসি থিওরির ব্যাখ্যা

ছবিঃ সংগৃহীত।

মিডিয়া লিটারেসি হলো এমন একটি দক্ষতা বা জ্ঞানের স্তর, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মিডিয়া, যেমন সংবাদ, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, সামাজিক মাধ্যম, এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত তথ্যের বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন এবং ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জন করে। এটি শুধুমাত্র মিডিয়া কনটেন্টের প্রতি সচেতনতা তৈরি করে না, বরং সেই কনটেন্টের উৎপত্তি, উদ্দেশ্য এবং প্রভাব সম্পর্কে একটি গভীর ধারণা প্রদান করে।

মিডিয়া লিটারেসির উদ্দেশ্য হলো, একজন মানুষ যেন মিডিয়া টেক্সট (যেমন সংবাদ প্রতিবেদন, বিজ্ঞাপন, চলচ্চিত্র, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ইত্যাদি) সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারে এবং এই টেক্সটগুলো থেকে আসল উদ্দেশ্য, অস্পষ্টতা, এবং গোপন প্রচেষ্টা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। এটি মানুষের চিন্তা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও সচেতন এবং সমালোচনামূলক করে তোলে।

মিডিয়া লিটারেসি কীভাবে আন্তঃবিষয়ক (Interdisciplinary)?
মিডিয়া লিটারেসি একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র, কারণ এটি বিভিন্ন শাখার জ্ঞান এবং দক্ষতার সমন্বয়। এটি বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা প্রয়োজন, যেমন:

সামাজিক বিজ্ঞান: মিডিয়া এবং সমাজের সম্পর্কের গভীর বিশ্লেষণ করার জন্য সামাজিক বিজ্ঞান, যেমন সোসিওলজি, পলিটিক্যাল সাইন্স ইত্যাদি, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মনোবিজ্ঞান: মিডিয়া কনটেন্ট মানুষের মনোজগৎ এবং আচরণের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলে, তা বোঝার জন্য মনোবিজ্ঞান গুরুত্বপূর্ণ।
কমিউনিকেশন স্টাডিজ: মিডিয়া কনটেন্ট এবং জনসাধারণের মধ্যে যোগাযোগের ধরণ এবং প্রভাব বুঝতে এটি অপরিহার্য।

দর্শনশাস্ত্র (Philosophy): মিডিয়া লিটারেসি দর্শনশাস্ত্রের মৌলিক তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত, যেমন নৈতিকতা, সত্যের ধারণা, এবং বাস্তবতার বিশ্লেষণ।
সংস্কৃতিবিজ্ঞান: মিডিয়া কনটেন্টের মাধ্যমে একেকটি সংস্কৃতি, সামাজিক মূল্যবোধ এবং প্রথা কিভাবে প্রকাশিত হয়, তা বুঝতে সংস্কৃতিবিজ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এভাবে মিডিয়া লিটারেসি একাধিক শাখার সমন্বয়ে কাজ করে, যা একজন মানুষকে মিডিয়া কনটেন্টের গভীরে প্রবেশ করতে সাহায্য করে।

ক্রিটিকাল লিটারেসি থিওরি (Critical Literacy Theory)
ক্রিটিকাল লিটারেসি থিওরি হলো এমন একটি ধারণা, যা মূলত গণমাধ্যম, শিক্ষা, এবং সামাজিক কাঠামো সম্পর্কে সমালোচনামূলক ধারণা প্রদান করে। এই তত্ত্ব অনুসারে, একজন ব্যক্তি শুধুমাত্র তথ্য গ্রহণকারী নয়, বরং মিডিয়া কনটেন্টের বিশ্লেষক এবং সমালোচকও হওয়া উচিত।

কেন এটি মিডিয়া লিটারেসিতে গুরুত্বপূর্ণ?

ক্রিটিকাল লিটারেসি মিডিয়া লিটারেসির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কারণ এটি শিক্ষার্থীদের বা ব্যবহারকারীদের কেবল মিডিয়া কনটেন্টের প্রতি প্যাসিভ (নির্লিপ্ত) অভিগমন থেকে বের করে এনে সক্রিয় ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা করতে উৎসাহিত করে। এর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি বুঝতে পারে যে মিডিয়া কনটেন্ট কিভাবে এবং কেন তৈরি হয়, তার উদ্দেশ্য কি, এবং সেই কনটেন্টের প্রভাব সমাজে বা তার ব্যক্তিগত জীবনে কী হতে পারে।

ক্রিটিকাল লিটারেসি থিওরি অনুসরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ:

মিডিয়া প্রোপাগান্ডা থেকে রক্ষা: মিডিয়া অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য পরিবেশন করে, যা কোনো নির্দিষ্ট মতবাদ বা রাজনৈতিক আদর্শকে প্রচার করতে পারে। ক্রিটিকাল লিটারেসি এমন দক্ষতা প্রদান করে, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি এই ধরনের প্রোপাগান্ডা চিনে ফেলতে পারে।

সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা: এটি মানুষকে সামাজিক অসমতা, বৈষম্য এবং অন্যায় সম্পর্কে সচেতন করতে সহায়ক। মিডিয়া অনেক সময় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে একপেশে গল্প প্রচার করতে পারে, কিন্তু ক্রিটিকাল লিটারেসি তা সমালোচনামূলকভাবে বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে।

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব: বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের জীবনে বড় প্রভাব ফেলছে, এবং এটি কিভাবে কাজ করে, তার মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক প্রভাবগুলো সম্পর্কে সমালোচনামূলক চিন্তা করার জন্য ক্রিটিকাল লিটারেসি প্রয়োজন।

ভুল তথ্য ও মিথ্যা সংবাদ: ক্রিটিকাল লিটারেসি মানুষকে ভুল তথ্য বা ফেক নিউজ শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা সামাজিক বিভেদ সৃষ্টি করতে পারে।

এই সব কারণেই ক্রিটিকাল লিটারেসি মিডিয়া লিটারেসির একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে কাজ করে, এবং এটি আমাদের বিশ্বকে আরও সচেতন, শিক্ষিত এবং সমালোচনামূলকভাবে চিন্তা করতে সক্ষম করে তোলে।

 

×