ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

মানুষের দাবি ও জনদুর্ভোগ

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মানুষের দাবি ও জনদুর্ভোগ

মানুষ যখন তার প্রাপ্য অধিকার হতে বঞ্চিত হয়, তখন তার দাবি আদায়ের প্রয়োজন পড়ে। তবে যে দাবি মৌলিক অধিকার ও প্রয়োজন বহির্ভূত, জনগণের  দুর্ভোগ ও অশান্তির কারণ হয়, সে দাবি নিঃসন্দেহে  অযৌক্তিক ও স্বার্থান্বেষী। জুলাই বিপ্লবের পর রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্র করে, প্রতিনিয়ত দল বেঁধে রাস্তা অবরোধ করার পালা যেন প্রতিনিয়তই চলছে। রাজধানীর শাহবাগ, গুলিস্তান, মহাখালী, নিউমার্কেট মোড়, গুলশান ও অন্যান্য প্রধান সড়ককে কেন্দ্র করে চলছে দাবি আদায়ের মিছিল। যা সাধারণ ব্যবসায়ী ও খেটে খাওয়া মানুষের জীবনকে ঠেলে দিচ্ছে অন্ধকারে। অনেকের দৈনন্দিন আয়ে জীবন চলে। মৌলিক চাহিদার জন্য তারাও দাবি জানাতে পারত। তাদের সংখ্যা শহরে অগণিত। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে, খেঁটে খাওয়া মানুষই আগে না খেয়ে থাকে। তাদের ডিঙিয়ে কোনো কিছু হাসিল করা অধিকার লঙ্ঘন করার সমান। শিক্ষায় বিলাসিতা নেওয়ার আগের দাবিগুলো এখনো আনাচে-কানাচে ঘোরে। পেটে ভাত না থাকলে গলায়ও জোর থাকে না অনেকের, শিক্ষা তো বিলাসিতা। অন্যদিকে প্রতিনিয়ত আন্দোলনকারীরা আসে দলগত বা শ্রেণিবদ্ধ হয়ে। একপর্যায়ে আন্দোলনকে গতিশীল করতে তারা জনদুর্ভোগকে বেছে নেয়। ব্যস্ত শহরে যানজটের মাত্রা দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কেন্দ্র করে, উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দেওয়া হয়। তারই সূত্র ধরে, অসচেতন, বিবেক বর্জিত ও লোভের বশবর্তী হয়েও কয়েক শ্রেণির মানুষ দাবিদার হয়ে যায়। রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে, অন্তর্বর্তী সরকারকে উত্তেজিত ও পথভ্রষ্ট করতে অপপ্রচেষ্টা চালনাকারীরা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সচেতনতা ও সুশিক্ষার অভাব, সংকুচিত মনোভাব নিয়ে থাকা নাগরিক দেশের জন্য অভিশাপ ও উন্নয়নে বড় বাধা। সরকার ও আইনের প্রতি উদাসীনতা দিন দিন দেশের শৃঙ্খলা ধ্বংস করে দিচ্ছে। সম্প্রতি, কলেজকে ভার্সিটি বানানোর জন্য রাজধানী ঢাকার তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আমৃত্যু অনশন করতে বসেছিল। এর আগে তারা আন্দোলনরত অবস্থায় মেট্রোরেলে হামলা চালায়। জুলাই বিপ্লবের পরপরই ঘটার কারণে বিষয়টা ধামাচাপা হয়। শিশু, বৃদ্ধা অনেকে আহত হন। আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পুনরায়, তারই সুযোগ নিয়ে এরা আবার অযৌক্তিক দাবি নিয়ে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে। জুলাই পরবর্তী, সময় জিনিসপত্রের দাম যথেষ্ট বেড়েছে।
অর্থনীতির এ দুরবস্থায় জনগণের খামখেয়ালির শেষ নেই। জনগণের সেবা সুনিশ্চিত করতে, সরকারের উচিত মৌলিক চাহিদার প্রথম স্তরগুলো পূরণ করা। আর বিলাসিতার জন্য করা আন্দোলন বন্ধ করা, আপাতত হলেও। যারা দেশের এ দুরবস্থায় ব্যক্তিকেন্দ্রিক, দলকেন্দ্রিক, রাজনৈতিক গোঁড়ামি বজায় রাখে, তারা কখনো এদেশের সুফল বয়ে আনতে পারে না। এদেশে এখনো সচেতনতা, নিরাপত্তার অভাব। শহরের বেহাল অবস্থার জন্য শিক্ষার্থীরাই বেশি দায়বদ্ধ। এমন বিশৃঙ্খলা, জনদুর্ভোগের জন্য দায়ী ব্যক্তিরা এ দেশকে কি দেবে? সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত দেশের এ নাজেহাল অবস্থায় কঠোরভাবে পদক্ষেপ নেওয়া।
দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি সকলেরই কাম্য। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে সরকারের উচিত, জনগণকে অবহিত করা। সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার স্তর বৃদ্ধি করার বিকল্প নেই বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে। জনসচতেনতা, নাগরিকদের জীবন নিরাপত্তায় নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর নজরদারি বাড়াতে হবে। দিনেদুপুরে মোহাম্মদপুর এলাকায় সন্ত্রাসী, ডাকাতরা হামলা চালায়। ওই এলাকার পুরো মানুষ আতঙ্কে থাকে। তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে? সার্বক্ষণিক, ওই এলাকায় পুলিশ বাহিনীর মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে। মানুষের জীবনে নিরাপত্তার নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। আর তার প্রতি সজাগ থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো। দেশের শান্তি ফেরাতে তারা যেন সরকারের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকে।

রুমা হাওলাদার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

×