ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১

রাজধানীর খাল উদ্ধার এবং পানি প্রবাহ

প্রকাশিত: ১৯:৪১, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজধানীর খাল উদ্ধার এবং পানি প্রবাহ

সামনে বর্ষা মৌসুম। তাই তড়িঘড়ি করে চলছে ঢাকার আশপাশের খাল উদ্ধার এবং খননের কাজ। প্রথাগত পদ্ধতির বাইরে গিয়ে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান খাল খনন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। তার  প্রচেষ্টা যে বর্তমান সময়ের জন্য অত্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি সরকারি নিয়মের বাইরে গিয়ে বাস্তবতার ভিত্তিতে কাজটি যে এগিয়ে নিতে যাচ্ছেন, এতে তিনি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে খনন কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের অতি উৎসাহী কিছু ভূমিকা যাতে সুন্দর কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে, তার জন্য যথেষ্ট সতর্কতা প্রয়োজন। আমাদের দেশে খনন কাজের অনিয়মের কোনো জুড়ি নেই। এ খাতে লুটপাট হয় হিসাব ছাড়া। তাই খনন কাজ পরিদর্শনের সময় উপদেষ্টাকে লালগালিচা বিছিয়ে দিয়েছেন যারা, তাদের এহেন অতিউৎসাহী কর্মকাণ্ড দেশের মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। বর্ষার আগে যদি ঢাকার আশপাশের ১৯ খাল উদ্ধার করা যায় এবং তাতে পানি প্রবাহিত করা হয়, তাহলে ঢাকার জলাবদ্ধতা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে।
২০ মিনিটের বৃষ্টিতেই যেখানে পুরো ঢাকা শহর তলিয়ে যায়, সেখানে অরাজকতা যে অনেক দিনের জমানো, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। তাই খাল উদ্ধার এবং খননের পাশাপাশি যাতে করে ঢাকা শহরের ড্রেনেজ এবং কালভার্টগুলোর ময়লাও যাতে পরিষ্কার করা হয়। তাহলে সড়কের পানি দ্রুতগতিতে ড্রেন এবং কালভার্ট দিয়ে খাল হয়ে নদীতে মিশতে পারবে। আগের সরকারের আমলে ১ হাজার কোটি টাকার খাল এবং নদী খনন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল এবং তাতে বারবার সময়ক্ষেপণ এবং প্রকল্পের খরচ বাড়িয়ে লুটপাট করা হয়েছিল। তাইতো ঢাকা শহর সামান্য বৃষ্টিতেই নদীতে রূপ ধারণ করেছিল। তবে বর্তমানে কাজের ধরন এবং পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই খাল কনন এবং উদ্ধার কাজে সব প্রতিষ্ঠানকে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাজ করতে হবে। কারও জন্য যেন কাজের চলমান ধারা বাধাগ্রস্ত হয়ে না পড়ে। একটি দেশের জন্য বর্ষার জলাবদ্ধতা লজ্জায় ফেলে দেয় আমাদের। ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন বিশাল টাকা খরচের পরও ড্রেনগুলো সচল করতে পারে না। কিছু কাজ করলেও তো জলাবদ্ধতার শিকার হয় না রাজধানীবাসী। তবে তাদের অনিয়ম এবং দুর্নীতির পরও যারা এহেন পরিস্থিতির জন্য দায়ীও তারা হলো-ঢাকাবাসী। তাদের নীতি ও নৈতিকতাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দেখা দিয়েছে। তারা খালগুলোকে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের পরিণত করে তুলেছে। বাড়ির লেপ-তোষক থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ ময়লা খালে নিক্ষেপ করে। আবার সড়কে চলতে গিয়ে পানি বোতল এবং পলিথিন দিয়ে ড্রেনের নালা বন্ধ করে দেয়। তারা যদি নিজেরাই সচেতনতার পরিচয় দিতে না পারেন তাহলে বারবার টাকা খরচ করার পরও ঢাকার খাল এবং ড্রেনেজ সচল রাখা সম্ভব হবে না। তাই বলব বর্ষা মৌসুম আসার আগেই সব দপ্তরের সমন্বয়ে একটি পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে ঢাকার প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। তাতে বর্ষা মৌসুম হবে নিরাপদ এবং জঞ্জালমুক্ত।

অলিউর রহমান ফিরোজ
রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ

×