
প্রতিদিন সড়কে ঝরছে তাজা প্রাণ। পত্রিকার পাতায় নিয়মিত এসব মর্মান্তিক ঘটনা দেখতে দেখতে আমরা অনেকটা সয়ে গেছি। প্রযুক্তির এই যুগে আরও মর্মান্তিক বিষয় হলো, যে কোনো দুর্ঘটনায় সাহায্য না করে ছবি তোলা ও ভিডিও নিয়েই ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় অধিকাংশ মানুষকে। সম্প্রতি উত্তরা পূর্ব থানাধীন বিএনএস সেন্টারের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দম্পতির বন্ধু বলেছেন, ‘আমার বন্ধু এবং স্ত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিল, কেউ ছবি তুলছে, কেউ ভিডিও করছে, অথচ অনুরোধ করলেও কেউ সহায়তা করেনি। পরে পুলিশ এবং একটি মেয়ের সহায়তায় তাদের মেডিক্যালে নেওয়া সম্ভব হয়।’ এক্ষেত্রে প্রশ্ন আসে, আমরা কি সত্যিই উন্নতির পথে এগোচ্ছি! নাকি মানবিক মূল্যবোধ বিবর্জিত হয়ে অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছি দিন দিন। সড়কে নিহত হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেক দুর্ঘটনায়ও আমরা একই বিষয় দেখতে পাই। একটা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে আর পথচারীরা নির্বিকার। এগুলো যেন হওয়ারই ছিল। অথচ যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় সচেতনতার পাশাপাশি সহায়তাও একান্ত প্রয়োজন।
মৃত্যু নিশ্চিত হলেও অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু কারও কাম্য নয়। যে পরিবার থেকে তরতাজা এক একটি প্রাণ ঝরে, তাদের জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়ের খবর আর জানা হয় না। নিহতের স্বজনদের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করলেও আমাদের বিবেককে নাড়া দিতে পারছে না। যে মানুষটি ছিল পরিবারের একমাত্র অবলম্বন, একটি সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু সেই পরিবারের অন্য সদস্যদের সব স্বপ্ন-আশা-আকাক্সক্ষা ভেঙে চুরমার করে দেয়। তাদের ভবিষ্যৎ হয়ে পড়ে অনিশ্চিত। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, রাজধানীতে ২০২৪ সালে ৩৯৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪৬ জন নিহত এবং ৪৮২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৬ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে নারী ১৩ এবং শিশু প্রায় ১০ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পথচারী ৫১ শতাংশের বেশি। এ ছাড়াও আছে মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী ৩৯ শতাংশ এবং বাস, রিক্সা, সিএনজি ইত্যাদি যানবাহনের চালক ও আরোহী ৯ শতাংশের বেশি। রাজধানীতে সংঘটিত দুর্ঘটনার মধ্যে ৪০ শতাংশের বেশি হয় রাতে।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো কমবেশি সবারই জানা। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা, বেপরোয়া বা অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়। যার ফলে, এক সময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। তাই চালকদের এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কোনোভাবেই অসুস্থ বা ক্লান্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো যাবে না। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ ওভারটেকিং প্রবণতা। সাধারণত রাস্তায় ধীরগতির গাড়িগুলোকে ওভারটেকিংয়ের প্রয়োজন পড়ে। এ সময় হর্ন বাজিয়ে সামনের গাড়িকে সঙ্কেত দিতে হয়। কিন্তু অনেক সময় সঙ্কেত না দিয়ে একজন আরেকজনকে ওভারটেক করার চেষ্টা করে দুর্ঘটনা ঘটায়। তাই সঠিক নিয়ম মেনে সতর্কতার সঙ্গে ওভারটেক করা উচিত। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি কারণ হলো, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক ব্যবস্থা। মহাসড়কগুলোতে বাঁক থাকার কারণে সামনের দিক থেকে আসা গাড়ি দেখতে না পেয়ে অনেক চালক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। ট্রাফিক আইন অমান্য করার কারণেও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কগুলোকে ডিজিটাল নজরদারির আওতায় নিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন।