
ছবি:সংগৃহীত
কপি (Copy):
কপি হচ্ছে সেই লেখার অংশ যা বিজ্ঞাপন বা প্রচারণার মাধ্যমে পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাকে ক্রয় বা অন্য কোনও পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করে। এটি বিজ্ঞাপনের মূল বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যম।
কপিরাইটিং (Copywriting):
কপিরাইটিং হচ্ছে বিজ্ঞাপন, প্রোডাক্ট প্রোমোশন, ব্র্যান্ডিং বা মার্কেটিং উপকরণের জন্য সৃজনশীল লেখালেখি। এটি এমনভাবে লেখা হয় যাতে পাঠক বা দর্শক পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আগ্রহী হয় এবং ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
কপিরাইটিংয়ের উদ্দেশ্য (Objectives of Copywriting):
মনোযোগ আকর্ষণ করা (Attract Attention):
কপি এমনভাবে লেখা উচিত যাতে তা পাঠকের বা দর্শকের নজর আকর্ষণ করে।
রুচির সৃষ্টি করা (Generate Interest):
মনোযোগ পাওয়ার পর পাঠক বা দর্শকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে হবে, যাতে তারা আরও জানতে চায়।
কর্তব্য সঞ্চালনা করা (Prompt Action):
কপির লক্ষ্য হল পাঠক বা দর্শককে ক্রিয়া করতে উৎসাহিত করা, যেমন পণ্য কেনা বা সেবা গ্রহণ।
বিশ্বাস তৈরি করা (Build Trust):
কপি অবশ্যই প্রমাণ দিতে হবে যে পণ্য বা সেবা ব্যবহার করা নিরাপদ এবং উপকারী।
কপিরের উপাদান (Elements of a Copy):
হেডলাইন (Headline):
এটি কপির প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হেডলাইন এমনভাবে লেখা উচিত যে তা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং কপির বাকী অংশ পড়ার জন্য পাঠককে উদ্বুদ্ধ করে।
সাব-হেডলাইন (Sub-Headline):
এটি হেডলাইনের পরবর্তী অংশ, যা আরও বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে।
বডি কপি (Body Copy):
এটি কপির মূল অংশ, যেখানে পণ্য বা সেবার বিস্তারিত, সুবিধা, বৈশিষ্ট্য এবং পরবর্তী পদক্ষেপের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কল টু অ্যাকশন (Call to Action):
এটি সেই অংশ যেখানে পাঠককে একটি নির্দিষ্ট কাজ (যেমন পণ্য কেনা, সেবা গ্রহণ) করতে উৎসাহিত করা হয়।
ব্যবহারকারীর সুবিধা (Benefit Statements):
এটি কপির অংশ যেখানে পণ্য বা সেবার উপকারিতা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, যা গ্রাহকের জন্য আকর্ষণীয় হয়।
ভাল কপি লেখার বৈশিষ্ট্য (Characteristics of a Good Copy):
স্পষ্টতা (Clarity):
কপি সহজ ভাষায় এবং সোজা উপায়ে লেখা উচিত যাতে পাঠক সহজে বুঝতে পারে।
আকর্ষণীয়তা (Appeal):
কপি এমনভাবে লেখা উচিত যা পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং তাকে প্রভাবিত করে।
সংক্ষিপ্ততা (Conciseness):
কপি সংক্ষিপ্ত হওয়া উচিত, যাতে বার্তা পরিষ্কারভাবে পৌঁছায় এবং পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখা যায়।
প্রমাণযোগ্যতা (Credibility):
কপি বিশ্বাসযোগ্য হওয়া উচিত, যাতে পাঠক বিশ্বাস করে যে পণ্য বা সেবা তাদের প্রয়োজন পূরণ করবে।
ক্রিয়াশীলতা (Creativity):
কপি যেন সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী হয়, যা পাঠকের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে।
হেডলাইন এবং বডি কপি শ্রেণিবিন্যাস (Classifications of Headline/Body Copy):
হেডলাইন শ্রেণি:
প্রশ্ন ভিত্তিক হেডলাইন (Question Headline):
উদাহরণ: "আপনি কি জানেন কেন এই ফোনটি সবচেয়ে ভালো?"
ফায়দা ভিত্তিক হেডলাইন (Benefit Headline):
উদাহরণ: "৩ মাসে ৫ কেজি ওজন কমান!"
তথ্যভিত্তিক হেডলাইন (Informative Headline):
উদাহরণ: "নতুন প্রজন্মের স্মার্টফোন, এখন ২০% ছাড়ে!"
বডি কপি শ্রেণি:
তথ্যভিত্তিক কপি (Informative Copy):
যেখানে পণ্য বা সেবা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়।
ইমোশনাল কপি (Emotional Copy):
যেখানে গ্রাহকের অনুভূতি বা আবেগের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হয়।
সোশ্যাল প্রুফ কপি (Social Proof Copy):
যেখানে গ্রাহক পর্যালোচনার বা রেটিংয়ের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি করা হয়।
অ্যালিগরি বা রূপক ব্যবহার (Use of Allegories or Metaphors):
কপি লেখার সময় রূপক ব্যবহার করা, যা পাঠকদের ভাবনায় নতুন দৃষ্টিকোণ সৃষ্টি করে।
হিউমার ব্যবহার (Humor):
বিজ্ঞাপনে মজাদার কপি ব্যবহার করা যাতে এটি আরও আকর্ষণীয় এবং স্মরণীয় হয়ে ওঠে।
কথোপকথন শৈলী (Conversational Style):
কপি এমনভাবে লেখা যায় যেন এটি পাঠকের সঙ্গে কথোপকথন করছে, যা আরও ব্যক্তিগত অনুভূতি সৃষ্টি করে।
টেস্টিমোনিয়াল বা গ্রাহকের অভিজ্ঞতা (Testimonials or Customer Experiences):
গ্রাহকদের মন্তব্য বা অভিজ্ঞতা ব্যবহার করা যাতে পণ্য বা সেবার প্রতি আস্থা তৈরি হয়।
কপি লেখার সাধারণ ভুল (Common Pitfalls of Writing Copy):
অস্পষ্টতা (Vagueness):
কপি যদি পরিষ্কার না হয় বা কঠিন ভাষায় লেখা হয় তবে তা পাঠকের মনোযোগ হারিয়ে ফেলতে পারে।
অতিরিক্ত তথ্য (Information Overload):
একাধিক অপ্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করলে পাঠক বিভ্রান্ত হয়ে যেতে পারে।
অত্যধিক সেলসী বা চাপ দেওয়া (Overly Salesy or Pushy):
পাঠককে খুব বেশি চাপ দিলে বা শুধুমাত্র বিক্রির দিকে মনোযোগ দিলে তা বিরক্তিকর হতে পারে।
এথিক্যাল বিষয় উপেক্ষা (Ignoring Ethical Issues):
কপি যদি সত্যের বিপরীতে লেখা হয় বা মিথ্যা দাবি করে, তবে তা ব্র্যান্ডের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে।
মার্কেটিং মিক্স (Marketing Mix):
মার্কেটিং মিক্স একটি কৌশলগত কাঠামো যা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত ৪P's এবং ৭P's এ বিভক্ত।
৪P’s (4Ps of Marketing):
পণ্য (Product):
পণ্য বা সেবা যা গ্রাহকদের প্রয়োজন পূরণ করে।
মূল্য (Price):
পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা, যা বাজারে গ্রহণযোগ্য এবং লাভজনক হয়।
স্থান (Place):
পণ্যটি গ্রাহকদের কাছে কীভাবে পৌঁছানো হবে (বিক্রয় চ্যানেল, বিতরণ মাধ্যম ইত্যাদি)।
প্রচার (Promotion):
পণ্য বা সেবার প্রচারণা এবং বিপণন কৌশল, যেমন বিজ্ঞাপন, অফার, প্রচারমূলক কর্মকাণ্ড।
৭P’s (7Ps of Marketing):
১. পণ্য (Product): ২. মূল্য (Price): ৩. স্থান (Place): ৪. প্রচার (Promotion): ৫. লোক (People): গ্রাহক পরিষেবা, বিক্রয়কর্মী, এবং অন্যান্য লোকজন যারা গ্রাহকের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
৬. প্রক্রিয়া (Process):
পণ্য বা সেবা প্রদান প্রক্রিয়া, যা গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করে।
৭. প্রমাণ (Physical Evidence):
গ্রাহকদের কাছে ব্র্যান্ডের অভিজ্ঞতা এবং তার পরিবেশ (যেমন দোকানের অভ্যন্তরীণ নকশা, প্যাকেজিং ইত্যাদি)।
মার্কেটিং মিক্সের সিদ্ধান্ত (Decisions in Marketing Mix):
পণ্য সিদ্ধান্ত:
পণ্যটি কী হবে, তার বৈশিষ্ট্য, গুণগত মান, এবং প্যাকেজিং কি হবে।
মূল্য সিদ্ধান্ত:
মূল্য নির্ধারণের কৌশল (উচ্চ মূল্য বা সস্তা মূল্য)।
প্রচার সিদ্ধান্ত:
বিজ্ঞাপন, প্রচারণা, বা অফারের মাধ্যমে পণ্য প্রচারের কৌশল।
বিক্রয় স্থান সিদ্ধান্ত:
পণ্য কোথায় বিক্রয় হবে এবং কীভাবে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাবে।
প্রক্রিয়া সিদ্ধান্ত:
পণ্য বা সেবা সরবরাহের প্রক্রিয়া কীভাবে হবে, যাতে গ্রাহক সন্তুষ্ট হন।
লোক সিদ্ধান্ত:
কোন লোকজনকে ভাড়া করা হবে গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার জন্য।
প্রমাণ সিদ্ধান্ত:
পণ্য বা সেবার গুণগত মান প্রমাণ করতে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মুহাম্মদ ওমর ফারুক