
ছবি: সংগৃহীত
“জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই” এই ডাক শুনলেই হৃদয়ে এক প্রশান্তির স্রোত বয়ে যায়। উত্তরবঙ্গের কোটি মানুষের হৃদয়ের আবেগ আর চাওয়ার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে তিস্তা পাড়ে অভিনব কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। যখন ক্ষমতাসীন সরকার তিস্তা সংকট নিয়ে নীরব, তখন তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি এই ইস্যুকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরছে, যা মানুষের প্রতি বিএনপির দায়বদ্ধতার প্রমাণ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে কাজ করে আসছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি ছিল দেশের স্বার্থ রক্ষার অনড় প্রতিশ্রুতি। তিনি কখনোই জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দেননি। তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমানও উত্তরবঙ্গের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা গভীরভাবে অনুভব করেছেন।
সম্প্রতি বিএনপির উদ্যোগে দেশের উত্তরাঞ্চলের পাঁচটি জেলায় তিস্তা নদীর তীরবর্তী ১১টি পয়েন্টে দুই দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এটি শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত একটি জাতীয় সমস্যার প্রতি জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর সচেতন প্রয়াস। বিএনপি কখনোই কোনো আধিপত্যবাদকে মেনে নেয়নি। তারা বরং সমতার ভিত্তিতে বৈদেশিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে বিশ্বাস করে।
বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। তবে এই আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল তিস্তাপাড়ের সাধারণ মানুষ। তাঁদের সরব অংশগ্রহণই এই আন্দোলনকে ঐতিহাসিক মাত্রা দিয়েছে।
তিস্তা নদী শুধু একটি জলপ্রবাহ নয়; এটি লাখো মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উত্তরাঞ্চলের কৃষি, মৎস্যসম্পদ ও দৈনন্দিন পানির সরবরাহের জন্য এই নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ভারত একতরফাভাবে এই নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করছে, ফলে বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে উত্তরবঙ্গে ভয়াবহ খরা দেখা দিচ্ছে, কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং হাজার হাজার পরিবার অর্থনৈতিক দুরবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। আবার ভারতের অতিবৃষ্টির সময় ঘোষণা না দিয়েই বাঁধ খুলে দেওয়ায় আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তীরবর্তী এলাকা।
একজন জাতীয় নেতা শুধু কথায় নয়, কাজে প্রমাণ করেন তাঁর নেতৃত্বের যোগ্যতা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সেই যোগ্যতার অনন্য উদাহরণ। দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে তিনি সাহসী নেতৃত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “প্রতিবেশী দেশ যদি তিস্তার ন্যায্য হিস্যা দিতে দেরি করে, তাহলে নদী পাড়ের মানুষ ও কৃষিকে বাঁচাতে আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে সব পথ বেছে নিতে হবে। প্রয়োজনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।”
তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি কৌশলগত গণসংযোগ ও আন্তর্জাতিক মহলে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যা এই আন্দোলনকে শুধু রাজনৈতিক বক্তব্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তব লড়াইয়ের রূপ দিয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “তিস্তার পানি বাংলাদেশের মানুষের অধিকার। আজ সারা বিশ্বের মানুষ দেখছে, কিভাবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ তিস্তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে গেলে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারেক রহমান। এতে থাকবে—তিস্তা নদীর পুনঃখনন, পানির প্রবাহ স্বাভাবিককরণ, নতুন জলাধার তৈরি, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও কৃষকদের জন্য টেকসই সমাধান। পাশাপাশি নদীকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন নৌপরিবহন ও পর্যটন শিল্পকে প্রসারিত করা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা হবে।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যেভাবে খাল খনন করে দেশের কৃষি উন্নয়নে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিলেন, সেভাবেই তারেক রহমান আবারও খাল কাটা কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করেছেন। তিনি স্মরণ করেন এক ঐতিহাসিক স্লোগান—“খাল কাটা হলে সারা, দূর হবে বন্যা-খরা।”
ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনে অপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ করছে। তারেক রহমান মনে করেন, ১৯৯২ সালের ব্রাদার কনভেনশন ও ১৯৯৭ সালের পানি প্রবাহ কনভেনশনে বাংলাদেশের স্বাক্ষর করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, “তিস্তা বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেশী দেশ নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখছে, যার ফলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগে পড়ছে।”
একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতার দায়িত্ব কী হওয়া উচিত, তা তারেক রহমানের কর্মকাণ্ডের মধ্যেই স্পষ্ট। বিএনপি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, অর্থাৎ বিএনপি বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে। এর আগে বিজয় দিবসে তারেক রহমান ঘোষণা করেছিলেন “সবার আগে বাংলাদেশ”—যে শিরোনামে ১৬ই ডিসেম্বর মানিক মিয়া এভিনিউতে একটি কনসার্টও অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির এই “জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই” কর্মসূচি শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৌশল নয়, এটি জনগণের জীবন ও ভবিষ্যৎ রক্ষার লড়াই। তারেক রহমানের নেতৃত্বে তিস্তা আন্দোলন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে, যা জাতীয় স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে। তিস্তার পানি বাংলাদেশের বহু বছরের ন্যায্য দাবি, আর সেই দাবি আদায়ে তারেক রহমান যখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তখন নির্দ্বিধায় বলা যায়—এবারের বিজয় আমাদেরই!
লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক
এম.কে.