ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

বাজার সিন্ডিকেটের কবলে সাধারণ মানুষ

ফাহিম হাসনাত

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাজার সিন্ডিকেটের কবলে সাধারণ মানুষ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব কোনো আবাসন ব্যবস্থা নেই। এটা কি সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য সেটা জানা নেই। তবে পড়াশোনাটা যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই করতে হচ্ছে সেহেতু একপ্রকার বাধ্য হয়েই আমার মতো ১৮ হাজার শিক্ষার্থীকে মেসে থেকে পড়াশোনাটা চালিয়ে নিতে হচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা বাজারের ঝামেলা থেকে একপ্রকার দূরে থাকে। তবে, মেসে থাকার কল্যাণে আমাদের প্রায় প্রতিদিনই বাজারের দিক অল্প সময়ের জন্য হলেও যাওয়া আসা করতে হয়।
এই তো সেদিন মেসে রান্না করার তেল নেই। সেজন্য তেল কিনতে গেলাম পুরান ঢাকার ধুপখোলা বাজারে। সেখানে প্রায় ১০ থেকে ১৫ টা দোকান ঘুরলাম। কিন্তু কোথাও ১ লিটারের সয়াবিল তেল পেলাম না। কি আজব ব্যাপার! হঠাৎ করে বাজার থেকে তেল উধাও। এরপর আরও বেশকিছু দোকান ঘোরাঘুরির পর এক দোকানে তেলের সন্ধান পেলাম। দোকানের কর্মচারী তেল আছে শব্দটা বলা মাত্রই দোকানের মালিক তাকে ধমকের সুরে বলল, ‘তেল আছে এটা বলতে কে বলছে তোরে। মানা করে দে বাজারে কোনো তেল নেই’। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরির পর আরেক দোকানেও তেলের সন্ধান পেলাম। তবে শর্ত দিল নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত আরও ১৫ টাকা বেশি দিলে তবেই সেটা বিক্রি করবে। এই হলো আসন্ন মাহে রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীদের একটা হালচাল।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসেবে, দেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলের চাহিদা রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যের মতে, গত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অপরিশোধিত সয়াবিন তেল খালাস হয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার টন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৯ শতাংশ বেশি । সয়াবিন বীজের আমদানিও এ বছর বেড়েছে। গত জানুয়ারিতে সয়াবিন বীজ আমদানি হয়েছে প্রায় তিন লাখ টন। যেটি গত এক বছরের মধ্যে সয়াবিন বীজ আমদানিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ। এটা তো শুধু একটা পণ্যের পরিসংখ্যান। এরকম প্রায় প্রতিটা পণ্যের ক্ষেত্রেই কিছু লোভী ব্যবসায়িক শ্রেণি রমজান মাস উপলক্ষে পণ্য মজুত রেখে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির অপচেষ্টা করছে। এতে করে ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ। অর্থনীতিতে পড়েছিলাম, কোনো দ্রব্যের চাহিদার তুলনায় জোগান বৃদ্ধি পেলে দাম কমে। আবার চাহিদার তুলনায় জোগান হ্রাস পেলে দাম বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, জোগান ও চাহিদার মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু বাংলাদেশ হয়ত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে চাহিদার তুলনায় যোগান বৃদ্ধি পেলে, সমান হারে দামও বৃদ্ধি পায়।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমরা জানি, এই সরকারের দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদও আমাদের মতো মেসে থেকে পড়াশোনা করেছেন। তারা জানেন, ঢাকা শহরে মেসে থেকে পড়াশোনা করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে কি পরিমাণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। তার ওপর নতুন করে যোগ হয়েছে অবৈধ বাজার সিন্ডিকেট। বাজার থেকে সব ধরনের সিন্ডিকেট দূর হবে- এটা কেবল মেসে থাকা একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরই আশা নয়, বরং দেশের প্রত্যেকটা মানুষেরই আকাক্সক্ষা। সুতরাং, অন্তর্বর্তী সরকার এবং প্রশাসন এই ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং সর্বদা সজাগ দৃষ্টি রাখবেন, এমনটাই আশা ব্যক্ত করছি।

শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

×