
ছবি: সংগৃহীত
‘পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল।কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।’বাংলাদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে পাখির গানে। দিনের আলো ফোটে, ফুল ফোটার মতো। মানুষ ব্যস্ত হয়ে পড়ে নানান কাজে। সকাল-দুপুর-বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। পাখির কূজন শুনতে শুনতে গ্রাম-বাংলার কৃষক ঘুমিয়ে পড়ে। এ নিয়ম চলছে যুগ যুগ ধরে।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতু তার আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। গ্রীষ্মে গরম, বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টি, শরতে সাদা মেঘ, হেমন্তে ফসলের মৌ মৌ গন্ধ, শীতে কুয়াশার চাদর, আর বসন্তে চারপাশ রঙিন হয়ে ওঠে। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে মানুষের মন-মানসিকতাও বদলায়।
মানুষ প্রকৃতির সন্তান। তাই প্রকৃতির প্রভাবে মানুষ কখনো কোমল, কখনো হিংস্র হয়। ভূগোলের ওপর নির্ভর করে মানুষের গঠন, বৈশিষ্ট্য, খাবার ও আচরণ। তেমনি বেঁচে থাকার তাগিদে পশুপাখি এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি দেয়। শীতকালে বাংলাদেশে আসে পরিযায়ী পাখি। এদেশে প্রায় ৬৫০ প্রজাতির পাখি দেখা যায়, যার মধ্যে ৩৫০টি আবাসিক ও ৩০০টি পরিযায়ী।
আগে ধারণা ছিল, রাশিয়া ও সাইবেরিয়া থেকে পরিযায়ী পাখি আসে। কিন্তু বর্তমানে জানা গেছে, উত্তর মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, চীন, রাশিয়া, সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলসহ হিমালয়ের আশপাশ থেকে পাখিগুলো বাংলাদেশে আসে। মার্চের শেষ দিকে যখন দেশে গরম পড়ে, তখন তারা আবার ফিরে যায়। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, যে পাখি যেখানে থাকে, সেটিই তার দেশ। তাই ‘অতিথি পাখি’ বলা ঠিক নয়।
বাংলাদেশে শীতকালে প্রায় ২৯০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে। সিলেটের হাওর-বাঁওড়, উপকূলীয় চরাঞ্চল, সুন্দরবন, রাজশাহীর পদ্মার চরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এদের বিচরণ। কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে মহাবিপন্ন চামচঠুঁটো বাটান পাখি দেখা যায়। হাওরাঞ্চলে ছোট ডুবুরি, পানকৌড়ি, কানিবক, পাতি শরালি, মেটে রাজহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখি আসে। সুন্দরবনেও বিপন্ন ও মহাবিপন্ন পাখির উপস্থিতি রয়েছে।
একসময় শীতকালে যে সংখ্যক পাখি আসত, তা এখন অনেক কমেছে। জলাশয় ভরাট, পাখি শিকার, রাসায়নিক সার-কীটনাশকের ব্যবহার, শব্দদূষণ, খাবারের অভাব—এসব কারণে পাখির সংখ্যা কমছে। সরকার অভয়ারণ্য তৈরি ও আইনের কঠোর প্রয়োগ বাড়িয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাখি প্রকৃতির অলংকার। এরা জমির উর্বরতা বাড়ায়, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। তাই সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পাখি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তবেই প্রকৃতিতে টিকে থাকবে পাখি।
লেখক: প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
এম.কে.