ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

রক্তরঞ্জিত একুশের ইতিহাস

অলিউর রহমান ফিরোজ

প্রকাশিত: ১৮:৪২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রক্তরঞ্জিত একুশের ইতিহাস

একুশে ফেব্রুয়ারি হলো ভাষার মাস। এ মাসেই বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দিতে হয়েছিল অনেককে। একটি শিশু জন্ম নিয়েই যে মধুর ভাষায় মা ডাকের বুলি আওড়ায় তা হলো মধুময় বাংলা ভাষা। এ ভাষাতেই কত সুরের লহরী সৃষ্টি হয়েছে। আবহমান গ্রাম বাংলার রূপছন্দ নিয়ে তৈরি হয়েছে রবীন্দ্রনাথের লেখা অমর জাতীয় সংগীত। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। এ গানের মর্মস্পর্শী সুরে যেন পুরো গ্রাম বাংলার চিত্রটিই চোখের সামনে ভেসে আসে। তাইতো এ ভাষা রক্ষায় অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেননি দেশের দামাল ছেলেরা। তাদের আত্মত্যাগের মহিমায় আজও শিশুর মুখে বুলি ফোটে এ ভাষাতেই। পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা উর্দু ঘোষণা করায় তাইতো রাজপথ মিছিলে মিছিলে গর্জে ওঠে। ভাষার জন্য দেশের ছেলেরা রাজপথে রক্ত ঢেলে দিতে পর্যন্ত পিছপা হননি। তাই বিশ্বের দরবারে এ মহিমান্বিত ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দান করেছেন। আর ইউনেস্কোর জরিপে বাংলা ভাষাকে সবচেয়ে মধুর ভাষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এ ভাষা বিশ্ব ভাষাভাষী মানুষের কাছে চতুর্থ ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার অনেক দেশের অফিসিয়াল ভাষাও বাংলা করা হয়েছে। তবে আদি এ ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা গোত্রে। আবার সংস্কৃত ভাষাকে বাংলার জননী হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। অনেক উপভাষার জন্ম দেওয়ার শেষে বাংলায় রূপান্তরিত হয়ে এখনো আমাদের মুখের ভাষা হিসেবে রূপছন্দে দোলায়িত হচ্ছে এ ভাষা। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ পাকিস্তানের শাসক মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ রেসকোর্স ময়দানে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা করেন। আর তখনই তার প্রতিবাদ করা হয়। কিন্তু তিনি  প্রতিবাদের কোনো কর্ণপাতই করেননি। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলার সমগ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। তারা ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা দিবস পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এতে ছাত্র-জনতার মধ্যে অভূতপূর্ব সাড়া জাগে। ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকেই তখনকার শাসকগোষ্ঠী ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে রাখে। কিন্তু পরের দিন ২১ ফেব্রুয়ারি হাজার হাজার ছাত্র-জনতা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে মিছিলে গুলি করা হয়। রাজপথ হয়ে পড়ে রক্তে রঞ্জিত। গুলিতে নিহত হন-সালাম, জব্বার, রফিক, বরকতসহ অনেকেই। রাজপথে অনেক রক্তের বিনিময়ে আমরা আমাদের মধুর ভাষা রক্ষা করতে পেরেছি। যে ভাষাতে শিশুর মুখে বুলি ফোটে সে ভাষাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে পেরেছি। আর এটাই বাংলার দামাল ছেলেদের সার্থকতা।

রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ থেকে

×