ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

আ মরি বাংলা ভাষা

শেখ একেএম জাকারিয়া

প্রকাশিত: ১৮:৩৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আ মরি বাংলা ভাষা

ভাষা শুধু বাক্প্রকাশের মাধ্যম নয়; এটি জাতির আত্মপরিচয়, অনুভূতির নিবিড়তম প্রকাশ, ইতিহাসের ধারক ও সংস্কৃতির বাহক। মাতৃভাষা হৃদয়ের গভীরতম স্পন্দন, যেখানে মিশে থাকে এক জাতির স্বপ্ন, সংগ্রাম ও স্বকীয়তার চিহ্ন। তাই মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা  কেবল ভাষার প্রতি নয়, বরং নিজ শেকড়ের প্রতি এক গভীর দায়বোধ।
বাংলা ভাষার ইতিহাস লিখিত হয়েছে ত্যাগের রক্তরাঙা অক্ষরে। ১৯৫২ সালের ২১  ফেব্রুয়ারির ভোরে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে ঢাকার রাজপথে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। তাদের আত্মদানের মধ্য দিয়ে বাংলা শুধু ভাষার মর্যাদা পায়নি, পেয়েছে এক অমর গৌরব, যা বিশ্বদরবারে আমাদের পরিচিত করেছে আত্মত্যাগী জাতি হিসেবে। সেই আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ ২১ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেÑ যেখানে পৃথিবীর প্রতিটি ভাষা ও সংস্কৃতির অস্তিত্ব রক্ষার আহ্বান ধ্বনিত হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কি সত্যিই আমাদের মাতৃভাষাকে ভালোবেসে তার মর্যাদা রক্ষা করছি? আজকের বিশ্বায়নের যুগে বাংলার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বিদেশী ভাষার আগ্রাসন। উচ্চশিক্ষা, পেশাগত  ক্ষেত্র ও দৈনন্দিন জীবনধারায় বাংলার চর্চা কমে আসছে, অনেকেই বাংলাকে শুধু আবেগের ভাষা হিসেবে রেখে দিচ্ছেন, কার্যক্ষেত্রে এর ব্যবহার এড়িয়ে যাচ্ছেন। মাতৃভাষার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা কেবল ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না; এর প্রকৃত বহির্প্রকাশ ঘটতে হবে ভাষার সঠিক চর্চা, সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে।
বাংলার প্রতি ভালোবাসা  মানে তার শুদ্ধ উচ্চারণ, যথাযথ  লিখনরীতি এবং সাহিত্য, শিল্প, সংগীতে এর সমৃদ্ধ চর্চা করা। বাংলা সাহিত্যের বিপুল ভাণ্ডার, রবীন্দ্র-নজরুলের অনির্বাণ সৃষ্টি, জসীমউদ্দীনের নিভৃত পল্লীর চিত্র কিংবা জীবনানন্দের রূপসী বাংলার আবেদনকে হৃদয়ে ধারণ করাই প্রকৃত ভাষাপ্রেম। শুধু কথার ফুলঝুরি নয়, বরং প্রযুক্তির উৎকর্ষে বাংলা ভাষার উন্নয়ন, শিক্ষাব্যবস্থায় এর বিস্তৃতি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর পরিচিতি বৃদ্ধি করাও মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার প্রতিফলন।
ভাষা শুধু কথার সমষ্টি নয়; এটি জাতির আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা মানে নিজের অস্তিত্বের প্রতি ভালোবাসা। একে অবহেলা করা মানে আত্মপরিচয়কে অস্বীকার করা। তাই ভাষাকে শুধু কথায় নয়, কাজে ও চর্চায় লালন করতে হবে, শুদ্ধ ও  গৌরবময় বাংলার আলোকে নিজেদের আলোকিত করতে হবে। তাহলেই মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা হবে পরিপূর্ণ, আর শহীদদের আত্মত্যাগ পাবে
প্রকৃত মর্যাদা।
মল্লিকপুর, সুনামগঞ্জ থেকে

×