ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

জনসংযোগে প্রচার, লবিং ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স

প্রকাশিত: ২২:০২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জনসংযোগে প্রচার, লবিং ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স

ছবিঃ সংগৃহীত।

জনসংযোগে প্রচার, লবিং ও পাবলিক অ্যাফেয়ার্স একটি প্রতিষ্ঠানের, সংগঠনের, বা ব্যক্তি বিশেষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই তিনটি ক্ষেত্র একে অপরের সাথে সম্পর্কিত, তবে প্রতিটি আলাদা উদ্দেশ্য ও কৌশল নিয়ে কাজ করে। এই প্রতিটি ক্ষেত্র সমাজের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে এবং তা বজায় রাখতে সহায়ক।

১. প্রচার (Publicity)
প্রচার হলো একটি জনসংযোগ কার্যক্রমের অংশ যেখানে কোনো প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির কার্যক্রম, পণ্য বা সেবা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এটি প্রচারণা বা প্রকাশ্য প্রচেষ্টা যা সংস্থার অথবা ব্র্যান্ডের উপস্থিতি বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

প্রচারের উদ্দেশ্য:
জনসাধারণের মনোযোগ আকর্ষণ: এটি একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং প্রভাব বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

ইমেজ তৈরি: প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড এবং তার পণ্য বা সেবার পরিচিতি বাড়াতে।

সংকট মোকাবেলা: কোনো নেতিবাচক ঘটনার পর সঠিক তথ্য প্রচার করে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি দূর করা।

প্রচারের উপকরণ:
প্রেস রিলিজ: সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের সাফল্য, নতুন পণ্য বা সেবা এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করা।

সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারণা: ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদিতে কার্যক্রম প্রচার করে ব্র্যান্ডের পরিচিতি বৃদ্ধি করা।

সংবাদ সম্মেলন: একটি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা ঘোষণাকে প্রচারের জন্য সাংবাদিকদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা।

প্রচারের বৈশিষ্ট্য:
মুক্ত প্রকাশ: মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদগুলি সাধারণত কোম্পানির ব্যয়ে প্রকাশিত হয় না, কিন্তু এটি তাদের ব্র্যান্ড ইমেজ নির্মাণে সহায়ক।

বিশ্বস্ততা: মিডিয়াতে খবর প্রকাশিত হলে এটি সাধারণত জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়, কারণ এটি তৃতীয় পক্ষ দ্বারা প্রতিবেদিত হয়।

২. লবিং (Lobbying)
লবিং একটি কার্যক্রম যেখানে বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারী নীতিমালা, আইন, অথবা বিধি-বিধান পরিবর্তন বা প্রণয়ন করার জন্য প্রভাবিত করতে চায়। এটি সাধারণত একটি সংগঠনের বা বৃহৎ ব্যবসার উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহৃত হয়।

লবিংয়ের উদ্দেশ্য:
আইনি প্রভাব: আইন বা বিধির পরিবর্তন করার মাধ্যমে ব্যবসা বা সংস্থার উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন।

অর্থনৈতিক লাভ: সরকারের নীতি পরিবর্তন করতে যাতে ব্যবসা বা খাতের জন্য সুবিধাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

সম্পর্ক স্থাপন: সরকারী বা আইন প্রণয়নকারী সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করা, যাতে ভবিষ্যতে সুবিধা পাওয়া যায়।

লবিংয়ের উপকরণ:
সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সম্পর্ক: সরকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বা নীতিনির্ধারক কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও সম্পর্ক স্থাপন করা।

অ্যাডভোকেসি গ্রুপ ও সংগঠন: গ্রুপ এবং সংগঠনগুলি সরকারের কাছে প্রভাব বিস্তার করতে সহায়ক হতে পারে।

গোপনীয় বৈঠক ও আলোচনা: সরকারী কর্মকর্তা এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সোজাসাপ্টা আলোচনা এবং বৈঠক।

লবিংয়ের বৈশিষ্ট্য:
আর্থিক প্রভাব: ব্যবসা, শিল্প বা সংস্থার স্বার্থ রক্ষা করতে লবিং ব্যবহার করা হয়।
আইনি বা পলিসি পরিবর্তন: সরকারি নীতি বা আইনের পরিবর্তন বা সংশোধনের লক্ষ্যে চাপ তৈরি করা।

৩. পাবলিক অ্যাফেয়ার্স (Public Affairs)
পাবলিক অ্যাফেয়ার্স একটি প্রক্রিয়া যা সরকারের, নীতি নির্মাতাদের, এবং জনগণের মধ্যে সম্পর্ক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত। এর লক্ষ্য হলো সরকারের কাছে সমাজের সমস্যাগুলি তুলে ধরা এবং নিয়মনীতি বা আইনগুলির মধ্যে পরিবর্তন আনা যাতে সামাজিক উন্নতি ঘটে।

পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের উদ্দেশ্য:
সরকারি নীতি প্রভাবিত করা: এটি একটি কার্যক্রম যা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য সরকারের নীতি বা আইন পরিবর্তন বা সংশোধন করার চেষ্টা করে।

সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণকে বিভিন্ন সামাজিক, পরিবেশগত বা অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কে সচেতন করা।

জনগণের অংশগ্রহণ: জনসাধারণকে রাজনৈতিক বা সামাজিক বিষয়ে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করা।

পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের উপকরণ:
এডুকেশনাল ক্যাম্পেইন: সামাজিক, পরিবেশগত, বা অর্থনৈতিক বিষয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে ক্যাম্পেইন চালানো।

সরকারি সম্পর্ক: পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করা।

সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্ল্যাটফর্ম: সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের বার্তা প্রচার এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন।

পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের বৈশিষ্ট্য:
সম্প্রসারিত প্রভাব: এটি শুধুমাত্র আইন বা নীতিমালা পরিবর্তন নয়, বরং জনগণের মধ্যে সচেতনতা এবং অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।

ধীরে ধীরে প্রভাব: প্রাথমিকভাবে এর প্রভাব ধীর হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য পূরণের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

সামাজিক দায়বদ্ধতা: পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কর্মকাণ্ডে সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান তার সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে।

প্রচার, লবিং এবং পাবলিক অ্যাফেয়ার্স তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা জনসংযোগ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হয়, তবে প্রতিটির নিজস্ব লক্ষ্য, কৌশল এবং উপকরণ থাকে। প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যে ধরনের উদ্দেশ্য অর্জন করতে চায়, সেই অনুযায়ী এই তিনটি কৌশল একত্রে বা পৃথকভাবে ব্যবহার করা হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির সুনাম ও সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে এই তিনটি ক্ষেত্রের দক্ষ ব্যবহারের প্রয়োজন।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×