ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৮ ফাল্গুন ১৪৩১

জনসংযোগ এর একাল সেকাল 

প্রকাশিত: ২১:২১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জনসংযোগ এর একাল সেকাল 

ছবিঃ সংগৃহীত।

জনসংযোগ (Public Relations বা PR) হল একটি সংগঠন বা ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্ক তৈরি এবং উন্নত করার প্রক্রিয়া, যা পছন্দসই প্রচারণা, তথ্য প্রদান, এবং বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির মাধ্যমে জনগণের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর মূল উদ্দেশ্য হল জনগণের কাছে একথা পৌঁছানো যে তারা যেটি চায়, সেটি পেয়েছে বা বুঝতে পারছে। জনসংযোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর লক্ষ্য হল নিজস্ব ভাবমূর্তি তৈরি করা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাদের বার্তা পৌছানো।

জনসংযোগের ইতিহাস:

সেকাল (প্রাচীন যুগ): প্রথমে জনসংযোগের ধারণা ছিল না, তবে কিছু প্রাচীন সভ্যতায় (যেমন রোমান যুগ বা গ্রীক সভ্যতা) সরকার বা শাসকগণ জনগণের কাছে তাদের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করার জন্য কিছু প্রচারণা চালাত। এটি ছিল মূলত শাসকগণের জন্য, যাতে জনগণ তাদের আদেশ মেনে চলে এবং তারা জনপ্রিয়তা লাভ করে।

রোমান যুগে: রোমান শাসকরা জনগণের মনে তাদের জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে প্রচারণা চালাত। তাদের বিজয়, সামাজিক অবস্থা বা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি জনগণের কাছে পৌঁছানোর জন্য জনসংযোগের কিছু মৌলিক কৌশল ব্যবহার করা হতো।

গ্রীক সভ্যতা: গ্রীক সভ্যতায় বক্তৃতা এবং আচার অনুষ্ঠানগুলি গণপ্রতিক্রিয়া তৈরি করার জন্য ব্যবহৃত হতো।

একাল (আধুনিক যুগ): বর্তমানে, জনসংযোগ একটি প্রতিষ্ঠিত পেশাগত ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এবং এটি ব্যবসা, রাজনীতি, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক জনসংযোগের ইতিহাস ১৯০০ সালের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত:

আইভি লী (Ivy Lee): ১৯০০ সালের শুরুর দিকে আইভি লী প্রাথমিকভাবে জনসংযোগের ক্ষেত্রে আধুনিক কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। তিনি প্রথম জনসংযোগ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি তৈরি করতে গণমাধ্যমের মাধ্যমে তথ্য প্রচার শুরু করেন। আইভি লী প্রথম প্রাইভেট সংস্থাগুলোর জন্য জনসংযোগ পরিচালনা করতে শুরু করেন।

এডওয়ার্ড বার্নেইস (Edward Bernays): বার্নেইস জনসংযোগকে বিজ্ঞাপন এবং মনস্তত্ত্বের সাথে সংযুক্ত করে এটিকে একটি বিজ্ঞাপন শিল্পে পরিণত করেন। তিনি জনগণের মনোভাব গঠন করার জন্য বিভিন্ন কৌশল উদ্ভাবন করেন এবং তাকে "প্রচারাভিযান প্রিন্সিপাল" হিসেবে অভিহিত করা হয়। তার কাজ জনসংযোগের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।

১৯৪০ থেকে ১৯৬০-এর দশক: এই সময়টায় জনসংযোগ এক প্রফেশনাল শিল্প হিসেবে উন্নীত হয়। কোম্পানিগুলি বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার প্রচারে জনসংযোগ পদ্ধতিগুলি ব্যবহার করা শুরু করে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও জনসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনা করতে থাকে।

ইন্টারনেট যুগ: ১৯৯০ এর দশকে ইন্টারনেটের আগমন জনসংযোগে এক নতুন অধ্যায় যোগ করে। ই-মেইল, ওয়েবসাইট, এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তথ্য দ্রুত শেয়ার করা সম্ভব হয়। এটা জনসংযোগের কাজকে আরও দ্রুত এবং বহুমুখী করে তোলে।

এখনকার দিনে জনসংযোগ শুধু একটি পেশা নয়, এটি একটি শক্তিশালী ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক কৌশল হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সঠিক কৌশল এবং প্রযুক্তির ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×