ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

জনসংযোগের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৯:৪১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জনসংযোগের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী

ছবিঃ সংগৃহীত।

জনসংযোগ (Public Relations বা PR) হলো এমন একটি কার্যকলাপ যা প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির সুনাম এবং সম্পর্ক গড়ে তুলতে সহায়তা করে। এটি সাধারণত তথ্য, বার্তা এবং কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে লক্ষ্য গোষ্ঠীর কাছে একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে কাজ করে। জনসংযোগের উদ্দেশ্য হল সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও বিশ্বাস সৃষ্টি করা।

জনসংযোগের কার্যাবলী:

জনসংযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা প্রতিষ্ঠানের সুনাম, সম্পর্ক এবং সমাজে ইতিবাচক চিত্র তৈরি করতে সহায়ক। এই কার্যাবলী মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দিক থেকে নিজেদের সুনাম প্রতিষ্ঠা এবং মানুষের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে। এখানে কিছু মূল কার্যাবলী বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল:

মিডিয়া রিলেশন:
মিডিয়া রিলেশন হলো সংবাদমাধ্যমের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বার্তা সঠিকভাবে প্রচার করার প্রক্রিয়া। এটি প্রেস রিলিজ, সাংবাদিক সম্মেলন, মিডিয়া সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে করা হয়। মিডিয়া সম্পর্কের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তাদের বার্তা সঠিকভাবে জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে এবং মিডিয়ার মাধ্যমে আরও বৃহত্তর জনগণের কাছে তার ইমেজ ও তথ্য তুলে ধরতে সক্ষম হয়।

ক্রাইসিস কমিউনিকেশন:
ক্রাইসিস কমিউনিকেশন এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে যখন প্রতিষ্ঠান কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়, তখন সেটি সঠিকভাবে মোকাবিলা করে এবং জনসাধারণের কাছে পরিষ্কার বার্তা পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়। এটি প্রতিষ্ঠানকে একটি সংকটপূর্ণ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়ক হয় এবং জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি প্রতিরোধ করে।

ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট:
জনসংযোগের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হলো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। ইভেন্টগুলির মাধ্যমে জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠানের বার্তা পৌঁছানো সহজ হয়। উদাহরণস্বরূপ, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। এই ইভেন্টগুলির মাধ্যমে জনসাধারণের মধ্যে ইতিবাচক ধারণা তৈরি হয় এবং সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

সামাজিক দায়বদ্ধতা (CSR):
প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সামাজিক দায়বদ্ধতা তাদের সুনাম বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। CSR কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সমাজের জন্য সৃজনশীল ও পরিবেশবান্ধব কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সুরক্ষা ইত্যাদির দিকে মনোনিবেশ করে প্রতিষ্ঠান তাদের সুনাম এবং খ্যাতি বৃদ্ধি করতে পারে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসায়িক লাভ নয়, সমাজের উন্নতিতে অবদান রাখে।

জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা:
প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির প্রতি জনসাধারণের মনোভাব এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো জনসংযোগের অন্যতম লক্ষ্য। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রম সঠিকভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরা হয়, যাতে তাদের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা:
ডিজিটাল যুগে অনলাইন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং ব্র্যান্ডের উপস্থিতি শক্তিশালী করা সম্ভব। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দ্রুত তথ্য পেতে এবং ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জানতে পারে। সঠিকভাবে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করে।

রিপুটেশন ম্যানেজমেন্ট:
এটি প্রতিষ্ঠানের খ্যাতি নিয়ন্ত্রণ এবং সঠিকভাবে উপস্থাপন করার প্রক্রিয়া। জনসংযোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের সুনাম এবং খ্যাতি বজায় রাখতে সহায়তা করা হয়। এর মধ্যে ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট, মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভূমিকা অন্যতম।

উপদেষ্টা ভূমিকা:
জনসংযোগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তির জন্য উপদেশ দেওয়া হয়, যাতে তারা তাদের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথ অনুসরণ করতে পারে। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন কৌশল ও সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করা হয়। উপদেষ্টা ভূমিকা পালন করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে।

জনসংযোগ একটি প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা সুনাম গঠন, সম্পর্ক উন্নয়ন, এবং ক্রাইসিস মোকাবিলায় সাহায্য করে। বিভিন্ন কার্যকলাপের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম হয় এবং জনসাধারণের কাছে ইতিবাচক চিত্র তুলে ধরে।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×