ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ মার্চ ২০২৫, ২৮ ফাল্গুন ১৪৩১

তথ্য সন্ত্রাস প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা

সালমান আমীন

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৫:২৬, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তথ্য সন্ত্রাস প্রতিরোধে আলেম-ওলামাদের ভূমিকা

বিখ্যাত আরবি কবি ইয়াকুব হামাদানী বলেছেন— “তলোয়ারের আঘাত সেরে যায়, কিন্তু জিহ্বার আঘাত কখনো সারে না।” ভাষা অত্যন্ত শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মাধ্যমে যেমন মানুষের মন জয় করা যায়, তেমনি কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করাও সম্ভব। ইতিহাস সাক্ষী, প্রাচীনকাল থেকেই সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুর্বল করতে শত্রুর বিরূদ্ধে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এই অপপ্রচারের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে। এখন মতামত প্রকাশ বা প্রচারের জন্য বড় কোনো কবি-সাহিত্যিক হওয়ার দরকার হয় না; একটিমাত্র স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই মুহূর্তের মধ্যে সত্য-মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উন্মুক্ত পরিবেশে সত্য-মিথ্যার যাচাই ছাড়াই যে কেউ যে কোনো তথ্য প্রচার করতে পারে। বিশেষ মহল এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সাদাকে কালো আর কালোকে সাদা বানিয়ে তুলতে উঠে-পড়ে লেগেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, ইসলামপ্রিয় ব্যক্তিবর্গ—বিশেষ করে আলেম-ওলামা ও ইসলামী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তথ্য সন্ত্রাসের প্রধান শিকার। বিগত ফ্যাসিবাদী আমলে ইসলামি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হয়েছে। গুম, খুন ও নির্যাতনের পাশাপাশি তথ্য সন্ত্রাসও চালানো হয়েছে। শাপলা চত্বরের ঘটনার পর নির্যাতিতদের লাশকে নিয়েও কটূক্তি করা হয়েছে। নানা ধরণের গুজব ও ইস্যু তৈরি করে ঘটনাকে বারবার অন্য খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। মাদ্রাসার ছাত্র ও আলেমদের ‘জঙ্গি’ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এসব অপপ্রচারের ফলে অনেক সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে, যা ইসলামপ্রিয়দের জন্য এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

ইসলাম যাচাই-বাছাই ছাড়াই তথ্য প্রচারকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—

“কোনো ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তা যাচাই-বাছাই না করেই প্রচার করে।” (মুসলিম)

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন—

“তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করো না।” (সূরা আল-বাকারা, ২:৪২)

এছাড়াও, সূরা আল-হুজুরাতে বলা হয়েছে—

“হে ঈমানদারগণ, যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা যাচাই করে নাও। এ আশঙ্কায় যে, তোমরা অজ্ঞতাবশত কোন কওমের ক্ষতি করে বসবে, ফলে তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।” (আল-হুজুরাত, ৪৯:৬)

তথ্য সন্ত্রাস প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলেও বাস্তবতা হলো, ইসলামি নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই অপপ্রচার বেশি চালানো হয়। তাই আলেম-ওলামাদের নিজেদের উদ্যোগে সচেতন হতে হবে এবং এর বিরূদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এজন্য যা করা দরকার:

ফ্যাক্ট-চেকিং টিম গঠন করা: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্য যাচাই করতে আলেমদের নেতৃত্বে একটি টেকনিক্যাল টিম গঠন করতে হবে।

সত্য অনুসন্ধানে সরেজমিন তদন্ত: সন্দেহজনক কোনো ঘটনা ঘটলে নিরপেক্ষ দল গিয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করবে।

আইনি ব্যবস্থা: যেকোনো অপপ্রচার বা মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষকে বোঝাতে হবে যে, যাচাই ছাড়া কোনো সংবাদ প্রচার করা ইসলামের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ।

• প্রচার মাধ্যমে বিজ্ঞ আলেমদের সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।

তথ্য সন্ত্রাস শুধু একটি গোষ্ঠীর সমস্যা নয়; এটি পুরো সমাজের জন্য হুমকি। তাই সকলকে সচেতন হতে হবে। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দেয়, সত্য-মিথ্যা যাচাই করা, ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা এবং অন্যায় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আমরা যদি সঠিকভাবে তথ্য যাচাই করে গুজব প্রতিরোধ করি, তবে সমাজে সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে, ইনশাআল্লাহ।

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

×