
আজকালকার দ্রæত গতির জীবনযাত্রায়, আমরা প্রায়ই বড় বড় লক্ষ্য ও আকাক্সক্ষার পিছনে ছুটতে গিয়ে আমাদের চারপাশের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করতে ভুলে যাই। ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসে, তারপর অফিস থেকে আবার ঘরে ফিরে আসাÑ এভাবেই আমাদের দিন কেটে যায়। অথচ, আমাদের জীবনের অনেক অমূল্য মুহূর্ত এই দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার মধ্যে হারিয়ে যায়। বেশিরভাগ সময়ে আমরা লক্ষ্য করি না, কফির কাপ হাতে চায়ের দোকান থেকে বের হওয়ার সময় আকাশে সূর্যাস্তের রং কী অপরূপ! কিংবা পড়ন্ত বিকেলে একবার হেঁটে যাওয়ার সময় গাছের পাতাগুলোর মধ্যে হালকা বাতাসের ছোঁয়া। এই মুহূর্তগুলো আমাদের সবার জীবনেই ঘটে। তবে কিভাবে আমরা তাদের অনুভব করি, সেটা অনেকাংশে নির্ভর করে আমাদের মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। কেন আমরা এসব মুহূর্ত উপভোগ করি না? একটি কারণ হলো আমরা সবসময়ই ভবিষ্যতের চিন্তায় বিভোর থাকি। আমাদের মনে থাকে কেমন সাফল্য আসবে, কত টাকা আয় করা যাবে, কেমন জীবন কাটাতে চাইÑ এ সব চিন্তা। কিন্তু, এই সব চিন্তায় ঘেরা থাকা অবস্থায় আমরা খেয়ালই করি না জীবনের ছোট ছোট সুন্দর মুহূর্তগুলো, প্রতিদিনের ছোট ছোট আনন্দগুলো যেমন প্রিয় মানুষের সঙ্গে হাসি-ঠাট্টা করা, রাস্তায় একটি সুন্দর ফুল দেখতে পাওয়া, বা পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা, উপভোগ করা হয় না। কারণ আমাদের চোখ এক্ষেত্রে ভবিষ্যতের দিকে। আসলে, এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলোর সৌন্দর্যই আমাদের জীবনের আসল রূপ। আমাদের সন্তুষ্টি বা সুখও এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে। জনৈক কবি বলেছিলেন, ‘জীবন কোনো বড় এক মুহূর্তে নয়, বরং হাজার হাজার ছোট মুহূর্তে বাস করে।’
প্রতিদিনের ছোট ছোট সফলতা, হাসি, ভালোবাসা এবং অনুভ‚তি আমাদের জীবনের মানে তৈরি করে। তাহলে, কীভাবে এই মুহূর্তগুলো ধরতে পারি? প্রথমত, আমাদের সচেতন থাকতে হবে। যতটুকু সম্ভব মানসিক চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। বর্তমানের মধ্যে বাস করতে হবে। যখন আমরা কিছু খাচ্ছি, তখন শুধু খাওয়া নিয়ে চিন্তা করবো। পাশের মানুষের সঙ্গে কথোপকথন করতে থাকলে, তখন পুরোপুরি তার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে। এটিই সেই ‘মাইন্ডফুলনেস’ (সরহফভঁষহবংং) যা আমাদের শিখতে হবে। দ্বিতীয়ত, কম সময়ে যতটা সম্ভব প্রকৃতির কাছে চলে যেতে হবে। প্রকৃতি আমাদের প্রশান্তি ও শান্তির অনুভ‚তি দেয়। যা মনকে সতেজ রাখে। এসব ছোট মুহূর্তগুলো যদি আমরা উপভোগ করি, তবে জীবনের বড় গল্পগুলোর মধ্যে আনন্দ সঞ্চারিত হবে। জীবন হয়তো আমাদের হাতে সরাসরি কিছু বড় সফলতা এনে দেবে। তবে ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলো আমাদের সত্যিকারের সুখের উপলব্ধি তৈরি করবে। এজন্য, হয়তো সবচেয়ে ভালো কাজ হলোÑ কখনো কখনো থামুন, নিশ্বাস নিন এবং চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ