ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩ ফাল্গুন ১৪৩১

বইমেলা কবি-সাহিত্যিকদের উৎসব

এস এ বিপ্লব

প্রকাশিত: ২০:৩৭, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বইমেলা কবি-সাহিত্যিকদের উৎসব

কথায় আছে- পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই। একদম সত্যি কথা। আজও আমরা আলোকিত হতে পারিনি। কারণ, এখনো বই থেকে মানুষ অনেক দূরে রয়েছে। বই থেকে দূরে থাকা মানে নিজ থেকে দূরে থাকা। নিজ থেকে দূরে মানে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের সে হয় বোঝা, না হয় সমস্যা তৈরির অন্যতম একজন। তাই আমরা বই পড়ি আর আলোকিত হই। তা নাহলে চিরতরেই যেন অন্ধকারে রই। এই অন্ধকার থেকে আর বের হওয়া যায় না। এজন্যই একটি কথা আছে যে, অন্ধকার জগতে যাওয়া যতটা সোজা বা সহজ, সেই অন্ধকার জগৎ থেকে বের হয়ে আসা তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। অন্ধত্ব কয়েকভাবে হয়ে থাকে। একটা আছে জন্মগত অন্ধত্ব, আরেকটা আছে দুর্ঘটনাবসত অন্ধত্ব, আরেকটি হলো টাকার অন্ধত্ব আর সর্বশেষ হলো চোখ থাকতে অন্ধত্ব। অর্থাৎ চোখ থাকতেও যে পড়তে পারে না বা চায়না। তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কেউ নেই। যত রকমের অন্ধত্ব থাকুক না কেন, চোখ থাকতে আমরা কেউ যেন অন্ধ না থাকি। যে চোখ থাকতে অন্ধ, তাকেই মানুষ ঠকায় বেশি।
প্রবাদ আছে ‘যে বই ভালোবাসে তার সঙ্গে বই কথা বলে’। আপনি কাউকে ভালোবাসলে কিংবা কাউকে সম্মান দিলে সেও আপনাকে সম্মান দেবে। তাই আমি, আপনি যদি বইকে ভালোবাসি, সেও আপনাকে ভালোবাসবে। এক একটা বই এক একটা সন্তানের মতো। আর বই যে সন্তানের মতো সেটা একমাত্র তারাই বুঝতে পারে, যারা বই লেখেন। আরও বেশি উপলব্ধি করতে পারেন এমন লেখক, যাদের কোনো সন্তান নেই। কেন বলছি বই সন্তানের মতো। কারণ, একটা সন্তান জন্ম দিতে মায়ের জঠরে যেমন দশ মাস থাকতে হয়, বইতো তার চেয়ে বেশি জঠরে থাকে এক লেখকের। একটা বই লেখার কাজ শেষ করতে দশ মাসের বেশি সময় লাগে। তাহলে বইকি সন্তান নয়? কোনো এক সময় এক রাজা বলেছিলেন যে, আমি এমন রাজা হতে চাই না, যে বই ভালোবাসে না। কারণ, যে বই ভালোবাসে তার সঙ্গে বই কথা বলে। বই কখনো রাগ করে না, বই কখনো ছেড়ে যায়, বই কখনো মিথ্যা বলে না, বই কখনো খারাপ কিছু শেখায় না। যে বই ভালোবাসে সে কখনো ছিনতাই, গুম, খুন করতে পারে না। বইয়ের এত গুণ যে বলে শেষ করা যাবে না। বই হচ্ছে আপনার জীবনের চরম, পরম এবং শ্রেষ্ঠ সঙ্গী।
অন্যদিকে বই আছে বলেই বইমেলা হচ্ছে, হবে এবং হওয়া উচিত বলে মনে করি। ভালোবাসা দিবসকে বলা হয় তরুণ-তরুণী বা প্রেমিক-প্রেমিকাদের দিন। আমরা বলি, বইমেলা হচ্ছে কবি- সাহিত্যিকদের উৎসব। এই উৎসব থেকে আমরা দূরে থাকতে চাই না। কারণ, বইমেলা সকলের জন্য, এখানে ছোট-বড় সর্ব শ্রেণির লোক সমবেত হয়ে থাকে। তাই এটা শুধু লেখকদের নয়, বরং সকলের জন্য এই উৎসব হয়ে থাকে। বলতে গেলে দুই ঈদের আনন্দ উৎসবের চেয়ে এক বিন্দুও কম নয় আমাদের বইমেলা। বইমেলা মানে কবিদের মিলনমেলা। যেখানে সকল কবি-সাহিত্যিকদের বই থাকে, সকলে এক সঙ্গে মেলায় এসে প্রাণ প্রায়। একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারে। আমাদের জীবনে বইমেলার প্রয়োজন ছিল, আছে, থাকবে। কবিরা কখনো কিছু পাওয়ার আসা করে না। তারা শুধু দেওয়ার আসা করেই বই বের করে থাকে। বাবা-মা যেমন সন্তানের কাছ থেকে কখনো কোনো কিছু আশা করে না, হাজার কষ্টেও দোয়া করে সন্তান যেন সুখে থাকে। ঠিক তেমনি কবিরাও কখনো কোনো কিছু পাওয়ার আসা করে না। শুধু ভাবে একটি বই বের হোক। বইমেলা হলো পাঠক-লেখকদের একটা বন্ধন। একটা অন্যতম মিলনমেলা। সবশেষ কথা হলো, যার যে কাজ সে কাজ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি একজন লেখকের কাজ লেখালেখি করা। কিন্তু আমাদের দেশে একজন লেখককে তার লেখালেখির পাশাপাশি সংসার চালাতে অন্য কাজ করতে হয়। কারণ হলো, লেখকদের কোনো সম্মান দেওয়া হচ্ছে না। লেখকদের নেই কোনো ভাতা, না আছে বেতন। এমনকি প্রকাশকরাও ঠকিয়ে থাকেন লেখকদের। তাই এদিকে যদি একটু দৃষ্টি দিত সরকার, ভালো হতো। বিশেষ করে বলব, অন্তত যাদের একক বই আছে, সেসব  লেখকদের তালিকা করে তাদের থেকে শুরু হোক ভাতা বা কিছু সুযোগ-সুবিধা। এতে করে লেখকরা উৎসাহ-উদ্দীপনা আর সাহস পাবেন। মানুষও দেখবে জানবে যে, লেখকদের মূল্যায়ন করছে বাংলাদেশ।

×