![কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/7-2502151433.jpg)
সংবাদপত্রে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শিল্পোন্নত দেশগুলোয় দক্ষ ও অতি দক্ষ জনসংখ্যা গড়ে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। জার্মানিতে ৭৩ শতাংশ, জাপানে ৬৬ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৬৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ায় ৬০ শতাংশ, চীনে ৫৫ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫০ শতাংশ, এমনকি মালয়েশিয়ায় ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় অধ্যয়ন করে। বিপরীতে বাংলাদেশে সার্বিকভাবে স্বল্পদক্ষ ও দক্ষ জনশক্তি ৩৮ শতাংশ বলা হলেও কারিগরিভাবে দক্ষ, মধ্যমানের দক্ষ কিংবা স্বল্পদক্ষ জনশক্তি মাত্র ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮ হাজারের মতো। জনসংখ্যা ও শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা অনুযায়ী এটি খুবই কম। এমন একটি পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বর্তমান সরকার একটি ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের বহুমুখী ও যুগোপযোগী কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে স্নাতক (পাস) এবং স্নাতক (সম্মান) কোর্সের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ১০২তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাদ্রাসাগুলোতেও আরবি ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে সাজানো হচ্ছে কারিকুলাম। আগামীতে আর শিক্ষিত বেকার সৃষ্টি না করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে নেওয়া হচ্ছে কিছু নতুন নতুন পরিকল্পনা। প্রচলিত শিক্ষা কাঠামোতেও ব্যাপক পরিবর্তন আনা হবে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে।
গত কয়েক বছরে দেশে উচ্চ শিক্ষার হার বাড়লেও সমানতালে বেড়েছে বেকারত্ব। ফলে, দেশে এখন শিক্ষিত বেকারের হার আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি। অন্যদিকে দেশ থেকে প্রতিবছর বড় সংখ্যার কর্মী বিদেশে যাচ্ছে। সেখানে দক্ষ কর্মীর সংকট থাকায় তারা আশানুরূপ অর্থ আয় করতে পারছে না। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার দিকে ঝুঁকে পড়ে। তারা স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পাস করে শুরু করে কর্মসংস্থানের চেষ্টা। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে স্নাতক ডিগ্রিধারী শিক্ষিত বেকারের পরিমাণ ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ মোট স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অর্ধেকই বেকার থেকে যাচ্ছে। ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের দেওয়া তথ্যমতে, প্রতিবেশী দেশ ভারতে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেকার ৩০ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৮ শতাংশ। ইউরোপের প্রায় সকল রাষ্ট্র, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ায়, জাপানের মতো উন্নত বিশ্বে স্নাতক ডিগ্রিধারী বেকার নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া শেষ করে ৫০ ভাগের কম শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার দিকে যায়। বাকি ৫০ ভাগ স্বল্প মেয়াদে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ করে কাজ খুঁজে নেয়। বর্তমানে এর পরিমাণ আরও বাড়ছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাইমারি (অষ্টম শ্রেণি) শিক্ষার পরই শুরু হয় বাছাই প্রক্রিয়া। লেখাপড়ার প্রতি যাদের আগ্রহ কম, তাদের পাঠানো হয় ভোকেশনাল শিক্ষায়। দ্বাদশ শ্রেণির পর আবারও বাছাই করে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাঠানো হয় কারিগরি শিক্ষায়। বাকিরা উচ্চশিক্ষার জন্য অনুমতি পায়।
উন্নত বিশে^র রাষ্ট্রগুলোতে কারিগরি শিক্ষায় মেধার প্রমাণ দিতে পারলে ওখান থেকেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকে। সরকারের পক্ষ থেকেও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া হয়। যেসব শিক্ষার্থী দ্বাদশ শ্রেণিতে ভালো রেজাল্ট করছেন, তারা উচ্চশিক্ষার জন্য মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য পড়ার সুযোগ পান। অপেক্ষাকৃত কম ভালো রেজাল্ট নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চাইলে তাদের গুনতে হয় মোটা অঙ্কের অর্থ। সরকার তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করে। আমাদের দেশেও সময় এসেছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষায় নিরুৎসাহিত করে কারিগরি শিক্ষার পরামর্শ দেওয়া। এজন্য অবশ্য আরও অনেক বেশি কারিগরি শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। রয়েছে নানা সংকট। এগুলো খুঁজে বের করে সমাধানের পাশাপাশি আরও বেশি কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। সৃষ্টি করতে হবে কর্মক্ষেত্র। উচ্চশিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষার কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি অপেক্ষাকৃত সহজ।
প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হাতে কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাই হলো কারিগরি শিক্ষা। এই শিক্ষায় নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ এবং বাস্তবসম্মত জ্ঞানের অধিকারী করে গড়ে তোলা হয়। ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পেশা বেছে নিতে পারেন। কারিগরি শিক্ষা পদ্ধতিতে পাস-ফেল বলে কিছু নেই। পরিপূর্ণ দক্ষতা অর্জনের জন্য যতক্ষণ প্রয়োজন পরীক্ষা দেওয়া এবং নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পাওয়া যায়। তত্ত্বীয় পড়াশোনার চেয়ে বাস্তব প্রয়োগকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে ভালো কাজের সুযোগ খুঁজে নিতে পারেন। বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতায় চাকরির ক্ষেত্রেও খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বেকার হওয়ার চেয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণ অনেক বেশি যৌক্তিক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অনেক। কারিগরি শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে এই শিক্ষায় বিদ্যমান সমস্যার দিকেও নজর দিতে হবে।
শিক্ষার বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হলেও এখন পর্যন্ত গুণগত মান অর্জন সম্ভব হয়নি। এই মুহূর্তে মনোযোগ দিতে হবে কারিগরি শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের দিকে। সবার আগে নজর দিতে হবে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগের প্রতি। শিক্ষার কোর্সগুলোকে নিয়ে যেতে হবে আন্তর্জাতিক মানে। নজর দিতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং ল্যাব সুবিধার দিকে। যুগের চাহিদা অনুযায়ী এই শিক্ষাক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে নতুন নতুন বিষয়। বর্তমানে চালু সিলেবাস যুগের চাহিদা অনুযায়ী আধুনিকীকরণ ও সংশোধন করা প্রয়োজন। দেশ-বিদেশের চাহিদা অনুযায়ী কোর্স কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে। গ্রামের দরিদ্র তরুণদের আর্থিক অসচ্ছলতার বিষয়টিতে নজর দিয়ে কমাতে হবে ড্রপ আউটের সংখ্যা। প্রয়োজনে তাদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যথাযথ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অবকাঠামো ও জনবল বাড়াতে হবে। জনসচেতনতা এবং ইতিবাচক সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির জন্য চালাতে হবে এই শিক্ষার যৌক্তিক প্রচার। দেশে পুরুষ ও মহিলার সংখ্যা প্রায় সমান। মহিলাদের বাইরে রেখে কোনো ক্ষেত্রেই উন্নয়ন সম্ভব নয়। কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যে তাদের জন্য আরও পলিটেকনিক ও টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে হবে। প্রয়োজনে ছাত্রীদের অধিকতর বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান এবং পড়াশোনা শেষে চাকরি প্রাপ্তি সহজ করতে হবে।
কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় আরও একটি সমস্যা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ পদগুলোয় পেশাগত দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং বিশেষজ্ঞ নেতৃত্বের সংকট। এসব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদ দখল করে রয়েছেন প্রশাসনিক ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, আঞ্চলিক পরিচালকের দপ্তরসহ সর্বত্র কারিগরি শিক্ষা খাতের দক্ষ অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের পরিবর্তে সাধারণ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর নেতিবাচক ফল হচ্ছে, এই শিক্ষায় মানহীনতা ও অনগ্রসরতা। ডিপ্লোমা ও বৃত্তিমূলক কোর্সের মেধাবী শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আর এসব প্রতিষ্ঠানে যেত চায় না। যারা গেছেন তারাও নানা দাবিতে ক্লাস ছেড়ে আন্দোলনে নেমে পড়ছে। এক হিসাবে দেখা গেছে, কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষকদের বিদ্যমান পদের ৮২ শতাংশ পদ শূন্য, অর্থাৎ ১৮ শতাংশ শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কাজ চলছে। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুসারে শিক্ষার্থী বনাম শিক্ষক অনুপাত ১২:১ এর স্থলে এখন ৯২:১ তে উন্নীত হয়েছে। এ হার সম্ভবত গোটা বিশ্বেই বিরল। শিক্ষক নিয়োগে স্বতন্ত্র শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠনে বিশেষজ্ঞদের চাপ থাকলেও মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো এ বিষয়ে নিশ্চুপ। শিক্ষক বিপর্যয়ের এই পরিস্থিতির ফলে কারিগরি শিক্ষায় গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের হার কমছে। কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৭ সালে গ্র্যাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের হার ছিল ৮৫ শতাংশ, ২০২০ সালে নেমে এসেছে ৫৪ শতাংশে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণায় দেখা গেছে ইদানীং অনেক সেক্টরে কারিগরি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কিছুটা বেড়েছে। কারিগরি শিক্ষা অর্জনকারীদের মধ্যে বেকার সংখ্যাও কমছে। ২০১০ সালে কারিগরি শিক্ষায় বেকারত্বের হার ছিল ৭ শতাংশ। ২০২২ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনো প্রয়োজনীয় উপকরণ ও যন্ত্রাংশের অভাব রয়েছে। ল্যাবের সংখ্যা অপ্রতুল এবং মানসম্মত নয়। কম্পিউটার ল্যাবে বেশির ভাগ কম্পিউটার নষ্ট থাকে। কিছু কিছু জেলায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নেই। স্থানীয় যুব নারী-পুরুষ কারিগরি বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। টেকনিক্যাল স্কুল-কলেজগুলোর যে মেয়াদে শিক্ষাকার্যক্রম চলে, সেখান থেকে সার্বিক জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে তৈরি হওয়ার ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে।
নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘কারিগরি শিক্ষা নিয়ে আমরা নতুন করে কিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা ভাবছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কারিগরি শিক্ষাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। কারিগরি শিক্ষা ছাড়া দেশের এত বেকারত্ব দূর করা সম্ভব নয়। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গ্রামগঞ্জে অনার্স-মাস্টার্স দেওয়া হলেও এটা সার্বিকভাবে কিছু বেকার সৃষ্টি করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের অনেক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার মানও সন্তোষজনক নয়। ফলে, তারা অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে না ফিরে যেতে পারছে তাদের বাবার পেশায়, না পাচ্ছে কোনো চাকরি। ফলে, বেকার সৃষ্টি হচ্ছে। এখানে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষর্থীরা যখন দেখবে কলেজে অনার্স পড়ার চেয়ে কারিগরিতে পড়লে একটা কর্মসংস্থান হয় তখন তারা কারিগরি শিক্ষায় আগ্রহী হবে।’
মাধ্যমিক পাসের পর শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পড়তে হয় দুই বছর। এরপরই তারা চলে যান উচ্চশিক্ষার দিকে। শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা কোর্স করতে হয় চার বছরে। যারা ভালো রেজাল্ট করেন, তারা কর্মক্ষেত্রে যোগদান না করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হন। এক্ষেত্রে কারিগরি শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ কম। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (ডুয়েট) নামে একটি মাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার জন্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থাকলেও বেশির ভাগে শিক্ষার্থীর পক্ষে আর্থিক কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এসব কারণে অনেক শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় আসতে অনাগ্রহী হন। মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে।
দেশে অনেক কর্মক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। দেশ থেকে চাহিদা মিটাতে না পারায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ লোক আনতে হয়। তারা বছরে একটি বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের তরুণদের দক্ষ কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে কমে যাবে বিদেশ নির্ভরতা। বাঁচবে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। একই সঙ্গে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। যথাযথ শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনবল গড়ে তুলতে পারলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানেরও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কারিগরি শিক্ষা অর্থবহ করার জন্য ব্যাপক সম্প্রসারণ এবং মানসম্মত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষতা বাড়িয়ে মানবসম্পদ কাজে লাগিয়ে নিশ্চিত করতে হবে প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার। তবেই সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থান। বৃদ্ধি পাবে উৎপাদনশীলতা। মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে দারিদ্র্য থেকে। এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে কারিগরি শিক্ষার হার এবং মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ