![এআই থেকে আইনি সুরক্ষা এআই থেকে আইনি সুরক্ষা](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/editor-picture-final-2502151430.jpg)
বিশ্বব্যাপী দ্রুত উত্থান ঘটছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই)। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা বিতর্ক। প্রযুক্তির নব নব আবিষ্কার মানবকল্যাণে ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি এটিকে নেতিবাচকভাবেও প্রয়োগ হতে দেখি আমরা। তাই এআই প্রয়োগে প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণ ও আইনগত সুরক্ষা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাইয়ে গ্লোবাল গভর্নমেন্ট সামিট ২০২৫-এর ওয়ার্ল্ড রেগুলেটরি ফোরামে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বক্তব্যে এআই প্রয়োগ সম্পর্কিত তাৎপর্যপূর্ণ পরামর্শ ও নির্দেশনা উঠে এসেছে। বিশেষ করে এআইয়ের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার বিষয় এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এআইয়ের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামো তৈরিতে রেগুলেটরি ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোকপাত করেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আধুনিক বিশ্বে এআই স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, অর্থনীতি, প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নৈতিক ও আইনি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত হতে হবে।
স্মরণ করা যেতে পারে, গত বছরের প্রথমার্ধে সংবাদপত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভূমিকা নিয়ে ইতালির পেরুগা শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা উৎসবে প্রশ্ন উঠে এসেছিল নিউজরুমগুলোকে সহায়তা বা সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কতটুকু ভূমিকা রাখতে সক্ষম? নিউজরুম সাংবাদিকেরা যে ধরনের কাজ করেন, যেমনÑ অডিও ফাইলের প্রতিলিপি তৈরি, অনুবাদ বা টেক্সট সংক্ষেপ করার মতো কাজগুলো এখন সহজেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন টুলগুলো করতে সক্ষম। ২০২৩ সালের শুরুতে জার্মানির এক্সেল স্প্রিঙ্গার গ্রুপ ঘোষণা দেয়, তারা বিল্ড ও দায়ে ওয়েল্ট পত্রিকার কর্মী ছাঁটাই করবে। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, সাংবাদিকের অনেক কাজ এখন এআই টুল করতে সক্ষম। প্রতিদিন ছোটখাটো অনুরোধ বা নির্দেশ দিয়েই জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে টেক্সট বা ছবি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। এটি নিউজরুমের জন্য একদিকে যেমন সম্ভাবনা তৈরি করছে, অন্যদিকে চাকরি কেড়ে নেওয়ার উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম তাদের ‘দ্য ফিউচার অব জবস রিপোর্ট ২০২৫’-এ বিশ্বের এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান এআই ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের ব্যবসার কাঠামো পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করেছে। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে জনসংখ্যার বড় অংশ এখনো মানসম্মত শিক্ষার আওতার বাইরে, সেখানে এআই শিক্ষার সামগ্রিক মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যা সমতাভিত্তিক শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি ও বিস্তারে বিরাট অবদান রাখবে। এআইর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি। শিক্ষার্থীদের জন্য এআই ও অন্যান্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তি শেখা অত্যন্ত জরুরি, যা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশ্বমঞ্চে প্রধান বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থাপন বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে সচেতনতা ও সতর্কতার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। আধুনিক বিশ্বে এআই-এর ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন নৈতিক ও আইনি যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেসব মোকাবিলায় পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ অস্বীকার করা যায় না।