ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১

পুঁজিবাজারে আস্থার সংকটে করণীয়

ড. মো. আইনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯:০০, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পুঁজিবাজারে আস্থার সংকটে করণীয়

বাংলাদেশের পুঁজিবাজার পুরোপুরি কার্যকর ও গতিশীল তো দূরের কথা, কোনো বিচারেই মানসম্পন্ন নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে সেখানকার পুঁজিবাজার। এশিয়ার উদীয়মান দেশগুলোর অর্থনীতিতে জিডিপির বিপরীতে পুঁজিবাজারের মূলধনের অবস্থানও অনেক শক্তিশালী। এক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে বাংলাদেশ। দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া শ্রীলঙ্কা কিংবা অর্থনৈতিক সংকটে পর্যুদস্ত পাকিস্তানের পুঁজিবাজার গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বেশ ভালো সক্ষমতা দেখিয়েছে। এশিয়ার উদীয়মান পুঁজিবাজারগুলোয় সবচেয়ে বেশি রিটার্ন এসেছে এ দুই দেশের পুঁজিবাজারে। এ সময় ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডের পুঁজিবাজারে রিটার্ন ছিল কিছুটা নেতিবাচক। অন্য দেশগুলোর পুঁজিবাজার গত বছর ইতিবাচক ধারায় ছিল। শুধু সূচকের রিটার্ন নয়, বাজার মূলধন, লেনদেন, বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণসহ আরও অনেক সূচকেই এগিয়ে ছিল এসব দেশের পুঁজিবাজার। এশিয়া ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার এবং জিডিপির তুলনামূলক চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার আকার ও গভীরতার দিক থেকে অনেক দেশের তুলনায় বেশ পিছিয়ে রয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে যেখানে ৩৬০টি কোম্পানি, সেখানে তুলনামূলকভাবে ভারতের পুঁজিবাজারে ৫,৫৬৪টি, পাকিস্তানে ৫২৩টি, থাইল্যান্ডে ৮৮৫টি, ভিয়েতনামে ৪৩৫টি এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৯৪৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।
২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের মূলধন ছিল ২,৯৯৬ কোটি ডলার, যা জিডিপির মাত্র ৬.৬ শতাংশ। ২০২৫ সালের প্রক্ষেপণে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আকার ১৩২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে বলা হয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের বাজার মূলধন ছিল ৫,২৮,৭৪৮ কোটি ডলার (জিডিপির ১৩৬ শতাংশ), পাকিস্তানের ৪,৬৩৫ কোটি ডলার (জিডিপির ১২.৪ শতাংশ), থাইল্যান্ডের ৫৫,৯২২ কোটি ডলার (জিডিপির ১০৫.৭ শতাংশ), ভিয়েতনামের ২১,১৮৪ কোটি ডলার (জিডিপির ৪৫.২ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়ার ৭৫,৫৮০ কোটি ডলার (জিডিপির ৫৪ শতাংশ) এবং ফিলিপিন্সের ৩৪,২৮৬ কোটি ডলার (জিডিপির ৭৩ শতাংশ)। পুঁজিবাজারের গভীরতা পরিমাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হলো জিডিপির অনুপাতে বাজার মূলধন। ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশের এই অনুপাত ছিল মাত্র ৬.৬ শতাংশ, যা এশিয়ার অন্যান্য উদীয়মান অর্থনীতির দেশের তুলনায় সর্বনিম্ন। তুলনামূলকভাবে, ভারতে এই অনুপাত ১৩৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ১২.৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ২২.১ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ১০৫.৭ শতাংশ, ভিয়েতনামে ৪৫.২ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৫৪ শতাংশ এবং ফিলিপিন্সে ৭৩ শতাংশ। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের দৈনিক গড় লেনদেনে উন্নত বিশ^ তো দূরের কথা, এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায়ও উল্লেখযোগ্যভাবে কম। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল প্রায় ৩ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার। তুলনামূলকভাবে, একই সময়ে ভারতের পুঁজিবাজারে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ২,৩৩১ কোটি ডলার, পাকিস্তানে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, শ্রীলঙ্কায় ৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার, থাইল্যান্ডে ১১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, ভিয়েতনামে ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ৮৮ কোটি ডলার এবং ফিলিপিন্সে ১০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অপরদিকে, উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর পুঁজিবাজারে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নাসডাক বিশ্বের বৃহত্তম স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম। ২০২৪ সালে এই দুটি এক্সচেঞ্জে সম্মিলিত দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৮ বিলিয়ন পাউন্ড স্টার্লিং, যা প্রায় ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। জাপানের টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন জাপানি ইয়েন, যা প্রায় ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট স্টক এক্সচেঞ্জে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন ইউরো, যা প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ সূচকেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অনেক পিছিয়ে। ২০২৪ সালে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেনে বিদেশীদের অংশগ্রহণ ছিল মাত্র ১ শতাংশ, যেখানে ভারতে এ হার ছিল ১২ শতাংশ। পাকিস্তানে ৪ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ১০ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৫১ শতাংশ, ভিয়েতনামে ১৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ায় ৩৩ শতাংশ এবং ফিলিপিন্সে ২৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজার বিকাশে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা বিদ্যমান। সাম্প্রতিক গবেণায় যেসব সমস্যা বা অন্তরায় উঠে এসেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হচ্ছেÑ
১. বাজারের গভীরতা ও তারল্য স্বল্পতা : বাংলাদেশে শেয়ারবাজারে লেনদেনকারী বিনিয়োগকারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, যা বাজারে তারল্যের অভাব সৃষ্টি করে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কম অংশগ্রহণ : অধিকাংশ বিনিয়োগ ব্যক্তি পর্যায়ের। ফলে বাজার স্থিতিশীল থাকে না এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। অথচ এমন অনেক টেক্সটাইল গ্রুপ ও কোম্পানি আছে, যাদের অবকাঠামো বিশ্বের সর্ববৃহৎ, ৫ বিলিয়ন ডলার বার্ষিক টার্নওভার, লক্ষাধিক কর্মী। কিন্তু তারা পুঁজিবাজারে আসতে ভয় পায় পুঁজি হারানোর ভয়ে। আবার এমনও গ্রুপ আছে যাদের ব্যাংকে খেলাপি ঋণ লাখ কোটি টাকা। তারা ব্যাংকেরও টাকা দেয় না, আবার পুঁজিবাজারেও কারসাজি করে।
৩. পর্যাপ্ত ভালো মানের কোম্পানির অভাব : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা কম এবং অনেক প্রতিষ্ঠান বাজারে আসতে অনাগ্রহী। যার ফলে বিনিয়োগের সুযোগ সীমিত থাকে।
৪. সুশাসনের অভাব ও কারসাজি : বাজারে নানা সময়ে শেয়ার কারসাজি, অস্বচ্ছ লেনদেন ও অনিয়ম দেখা যায়, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমায়।
৫. বিনিয়োগকারীদের জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব: অনেক বিনিয়োগকারী মৌলিক বিশ্লেষণের পরিবর্তে গুজবের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগ করেন, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
৬. নীতি ও বিধিবিধানের দুর্বলতা : নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যকারিতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন। যাতে বাজার স্বচ্ছ ও স্থিতিশীল হয়। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার শক্তিশালী হতে পারে।
৭. ঝুঁকি নিতে অনীহা ও সর্বদা মুনাফা মানসিকতা: এখানে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চান না, শুধু লাভের চিন্তা করেন। কিন্তু ব্যবসায় তো লাভ-লোকসান স্বাভাবিক ধর্ম।
৮. নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর স্বার্থে আইন প্রণয়ন : পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রক্ষার কথা বলে গত ১৫ বছরে অসংখ্য নীতি, বিধি-বিধান প্রণয়ন ও আদেশ জারি করেছে। তবে বেশিরভাগই ব্যর্থ হয়েছে। ফলে আস্থার সংকটে পড়েছে পুঁজিবাজার। আইনগুলো এমনভাবে করা হয়, যাতে নির্দিষ্ট গোষ্ঠী লাভবান হয়।
৯. অন্যায্য বিধিবিধান : ফ্লোর প্রাইস আরোপ, মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানো ও শেয়ারের লভ্যাংশকে তাদের রিটার্ন হিসেবে অনুমোদন দেওয়া এবং দুর্বল পারফরমেন্স রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাথমিক পাবলিক অফারিং করার অনুমতি দেওয়াসহ ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
১০. বিচারহীনতায় তীব্র আস্থার সংকট : ২০০৯ সালে, ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারে ধস নামানোর মূল হোতাদের বিচার করা হয়নি। বরং পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়েছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের ধারে-কাছে যান না।
নানা প্রতিবন্ধক ও বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের প্রতি যত দ্রুত সম্ভব আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। কারণ, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি টেকসই ও শক্তিশালী কি না, তা পরিমাপ হয় পুঁজিবাজারের সক্ষমতার মাধ্যমে। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে নীতিনির্ধারকদের বহুমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছেÑ
১. বাজারের গভীরতা বৃদ্ধি : পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আরও মানসম্পন্ন কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করার মাধ্যমে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে হবে। সরকারি, আধা-সরকারি ও লাভজনক সংস্থাগুলোর শেয়ারবাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
২. প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি : প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশ  গ্রহণ বাড়ানো দরকার। মিউচুয়াল ফান্ড, বিমা কোম্পানি ও ব্যাংকগুলোকে শেয়ারবাজারে সক্রিয় করতে নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। আইনি কাঠামোয় এমন বিধান থাকতে হবে, যাতে করে কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য হয়। তবে তাদের জন্য আকর্ষণীয় প্রণোদনার ব্যবস্থা এবং যথাযথ আইনি রক্ষাকবচ থাকতে হবে। পুঁজিবাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ভালো কোম্পানি বাছাই করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। এসব বাজারের স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করবে।
৩. সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত : পুঁজিবাজারে আস্থা ফেরাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে শেয়ার কারসাজি, ইন্সাইডার ট্রেডিং এবং অনিয়ম বন্ধ করতে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বাজার নজরদারি জোরদার করতে হবে।
৪. বিনিয়োগকারীদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব প্রদান : এখানে বিনিয়োগকারীরা মৌলিক বিশ্লেষণের বদলে গুজবের ওপর নির্ভর করেন, যা বাজারকে অস্থিতিশীল করে। বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
৫. সেকেন্ডারি মার্কেটকে শক্তিশালীকরণ : বাজারে তারল্য বাড়াতে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে আরও কার্যকর করতে হবে। স্বল্প সুদে মার্জিন লোনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শেয়ারবাজারে স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং সিস্টেম উন্নত করতে হবে।
৬. নীতি ও আইন সংস্কার জরুরি : বাজারে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে নিয়ম সহজ করতে হবে। কর কাঠামো বিনিয়োগবান্ধব করতে হবে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নীতি-নির্ধারকদের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
৭. বিএসইসির জবাবদিহি : অতীতে দেখা গেছে, ক্ষমতাকাঠামোর কাছে থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থার লোকজন এমন অনেক নীতি ও বিধান করেছে, যা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে সুবিধা দিয়েছে। এক্ষেত্রে বিএসইসি দায় এড়াতে পারে না। এ জন্য তাদের জবাবদিহি বাড়াতে হবে।
৮. অটোমেশন : পুঁজিবাজারে সর্বক্ষেত্রেই ম্যানুয়াল পদ্ধতি থাকায় দুর্নীতির সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। তাই দ্রুত অটোমেশনের মাধ্যমে দুর্নীতি রোধ করতে হবে।
এসব ছাড়াও বিশেষ করে প্রযুক্তি ও ব্লুচিপ কোম্পানিগুলোকে দেশের পুঁজিবাজারে আসতে হবে। আমাদের এখানে এমন বিধান রয়েছে, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একই গ্রুপের অন্য একটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হতে পারবেন না। এটি অন্যায়। তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যাচাই করতে হবে। শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতিটি আরও যুগোপযোগী করতে হবে, যাতে করে কোম্পানিগুলো যৌক্তিক মূল্য পায়। অতীতে যেসব কারসাজি হয়েছে, সেগুলোর কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক বিদেশী বিনিয়োগকারী চলে গেছেন। এর কারণ হচ্ছে, তারা এখানে বিনিয়োগ করার জন্য পর্যাপ্ত কোম্পানি পায়নি। লভ্যাংশের পরিমাণের ভিত্তিতে কোম্পানির ক্যাটাগরি নির্ধারণ পদ্ধতিতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও রোধ করতে হবে। এসব সমস্যা দূর করা গেলে আশা করা যায়, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার অচিরেই ঘুরে দাঁড়াবে এবং শক্ত ভিত্তি পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে? সবার প্রত্যাশা, অন্তর্বর্তী সরকার এক্ষেত্রে অন্তত মৌলিক কিছু পদক্ষেপ নেবে।
লেখক : অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

×