ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

পাঠকের চেয়ে দর্শক বেশি!

হুমায়ুন আহমেদ নাইম

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পাঠকের চেয়ে দর্শক বেশি!

অমর একুশে বইমেলা শুধু বই কেনাবেচার স্থান নয়, এটি আমাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের প্রতিচ্ছবি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাঠকের সংখ্যা বাড়লেও বই কেনার হার ও পাঠের প্রতি আগ্রহ ক্রমশ কমছে। তরুণদের মধ্যে বিশেষ করে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রযুক্তির বিকাশ, ব্যস্ত জীবনযাপন, অর্থনৈতিক চাপ এবং পারিবারিক পাঠচর্চার অভাব এর মূল কারণ হিসেবে উঠে আসছে। ডিজিটাল মাধ্যমের আধিপত্য বই পড়ার অভ্যাসকে অনেকাংশে প্রভাবিত করেছে। সোশ্যাল মিডিয়া, ইউটিউব, ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, শর্টফর্ম ভিডিও এবং গেমিং এখন অবসরের প্রধান উপকরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে যেখানে বই ছিল বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম, এখন মোবাইল স্ক্রিন সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে। ফলে বই পড়ার প্রতি মানুষের ধৈর্য ও মনোযোগ দুটোই কমে যাচ্ছে।
পাঠ্যবইয়ের চাপে সাহিত্য থেকে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা সারা বছর পরীক্ষার বই পড়তে বাধ্য হয়, ফলে সাহিত্য বা সৃজনশীল পাঠের প্রতি আগ্রহ কমে যায়। বই পড়া যদি কেবল পরীক্ষার জন্য হয়, তাহলে তা আনন্দের বিষয় হয়ে উঠতে পারে না। অন্যদিকে বইয়ের উচ্চমূল্যও একটি বড় সমস্যা। বর্তমানে অধিকাংশ নতুন বইয়ের দাম এত বেশি যে সাধারণ পাঠকের পক্ষে নিয়মিত বই কেনা কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা বইয়ের চেয়ে ইন্টারনেট ডেটা কিনতেই বেশি আগ্রহী। এ ছাড়া পারিবারিক পাঠচর্চার সংকট এবং লাইব্রেরির অভাবও বইপড়ার সংস্কৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আগে পরিবারে বই পড়ার অভ্যাস ছিল, ঘরে বুকশেলফ রাখা হতো, লাইব্রেরিতে যাওয়া হতো। এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। অনেকেই বইমেলায় যান শুধু ঘোরাঘুরি ও ছবি তোলার জন্য, বই কেনার আগ্রহ কম দেখা যায়।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমে পাঠচর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অনলাইন বই, ই-বুক, অডিওবুক জনপ্রিয় করা গেলে পাঠকদের ফেরানো সম্ভব হতে পারে। পাশাপাশি, স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে সাহিত্য ও সৃজনশীল বই অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আকর্ষণ বাড়বে। বইয়ের দাম কমানোর জন্য প্রকাশক ও সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার, যাতে সাধারণ পাঠকও বই কেনার সামর্থ্য রাখে।
সবচেয়ে জরুরি হলো লাইব্রেরি সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনা। স্থানীয় ও স্কুল লাইব্রেরিগুলোতে বইয়ের সংগ্রহ বাড়াতে হবে এবং পাঠচক্র গঠন করতে হবে। যদি পাঠকের সংখ্যা না বাড়ে, পাঠের সংস্কৃতি লুপ্ত হয়, তাহলে একদিন অমর একুশে বইমেলা শুধুই স্মৃতিচারণের জায়গা হয়ে থাকবে, পাঠকের মেলা হয়ে উঠবে না।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে

×