![প্রাথমিক শিক্ষার সেকাল-একাল প্রাথমিক শিক্ষার সেকাল-একাল](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/12-2502121437.jpg)
ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত দেশীয় এবং পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থা ও পদ্ধতির সম্মিলিত ফল। হাজার বছরের আর্য বা হিন্দু শিক্ষাব্যবস্থা, বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা এবং সর্বশেষ মুসলিম শিক্ষাব্যবস্থার সংমিশ্রণ, সঙ্গে রয়েছে পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো। প্রকৃতপক্ষে ১৪৯৮ সালে ভাস্কো-দা-গামা কর্তৃক ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কারের পর থেকেই এই উপমহাদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রচার ও প্রসার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কালক্রমে পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি, দিনেমার এবং ইংরেজ মিশনারিগণ এদেশে শিক্ষা বিস্তারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার সূচনা হয় ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯১৯ সালে। তবে তা পৌর এলাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৩০ সালে বেঙ্গল (রুরাল) প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্ট প্রবর্তনের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে ৬-১১ বছরের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত হয়। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং ১৯৫৯ সালে শিশু অধিকারের ঘোষণায় প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
ব্রিটিশ-উত্তর পাকিস্তানে ১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদে পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে বাধ্যতামূলক অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালে ২১ দফায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে। ১৯৫৯ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে পাঁচ বছর মেয়াদি সর্বজনীন ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তন এবং ১৫ বছরের মধ্যে আট বছর মেয়াদি বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করে। প্রায় একই সময়ে ইউনেস্কোর উদ্যোগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২০ বছর মেয়াদি ‘করাচি পরিকল্পনা’ প্রণীত হয়। তাতে বলা হয়, এই অঞ্চলের ১৫টি দেশে সাত বছর মেয়াদি সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য দেশগুলোর দেশজ উৎপাদনের অন্তত ৭ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দের সুপারিশ করা হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে। ১৯৭৪ সালে ড. কুদরাত-এ-খুদা প্রণীত ‘বাংলাদেশ শিক্ষা কমিশন’ ১৯৮৩ সালের মধ্যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষার সুপারিশ করে। ১৯৮১ সালে পৃথক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতিসংঘ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০১৫ সালের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষায় লিঙ্গবৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য সব দেশ একমত হয়। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯১৮ সালের মধ্যে দেশে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। তাতে আরও বলা হয়, ‘প্রাথমিক শিক্ষা হবে সর্বজনীন, বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক এবং সবার জন্য একই মানের।’ ২০১০-১১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হবে। প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলা হয়Ñ কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি সব ধরনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বাধ্যতামূলক করা; মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীর দেশাত্মবোধের বিকাশ ও দেশ গঠনমূলক কাজে উদ্বুদ্ধ করা; শিশুর মনে ন্যায়বোধ, কর্তব্যবোধ, শৃঙ্খলা, শিষ্টাচার, অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, মানবাধিকার, কৌতূহল, প্রীতি, সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করা; বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিমনস্ক করা এবং কুসংস্কারমুক্ত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে উৎসাহিত করা; শিক্ষার্থীকে জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় জ্ঞান, বিষয়ভিত্তিক দক্ষতা, জীবন-দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ, সামাজিক সচেতনতা অর্জন এবং পরবর্তী স্তরের শিক্ষা লাভের উপযোগী করে গড়ে তোলা; কায়িক শ্রমের প্রতি আগ্রহ ও মর্যাদাবোধ এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা সম্বন্ধে প্রাথমিক ধারণা সৃষ্টি; সব ক্ষুদ্র জাতিসত্তার স্ব-স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করা; সব ধরনের প্রতিবন্ধীসহ সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ইত্যাদি।
বলা হয়, বহুধাবিভক্ত শিক্ষাব্যবস্থার (কমিউনিটি বিদ্যালয়, রেজিস্ট্রিকৃত ও রেজিস্ট্রিহীন বিদ্যালয়, সরকারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন, গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসা ইত্যাদি) মধ্যে বিরাজমান প্রকট বৈষম্য দূর ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে আট বছর মেয়াদি সমন্বিত শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা হবে। গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা, মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে আনন্দদায়ক সৃজনশীল পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থী যাতে চিন্তা ও কল্পনাশক্তির বিকাশ ও অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে মানসম্মত প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা নিশ্চিত করা হবে।
শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে স্তরভিত্তিক কৌশলে উল্লেখ করা হয়েছে যে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা বাস্তবতা ও চাহিদার আলোকে পুনর্বিন্যাস করা এবং স্থানীয় জনসাধারণকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হবে। ব্যবস্থাপনার সামগ্রিক বিকেন্দ্রীকরণ, ব্যবস্থাপনা কমিটিকে আরও ক্ষমতা প্রদান, নারী অভিভাবকদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, যথাযথ মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষক নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রধান শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষকদের বার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রণয়ন, কার্যকর পরিবীক্ষণের লক্ষ্যে পরিদর্শন ও মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন সাধন করা হবে। এ ছাড়া শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, দেশে-বিদেশে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষকের মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষকের দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, ২০১৮ সাল নাগাদ শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৩০-এ উন্নীত করা, ছুটির সময় ব্যতীত শিক্ষাসংক্রান্ত কাজের বাইরে অন্য কাজে শিক্ষকদের সম্পৃক্ত না করার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার ৬২০টি। দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৩৪ হাজার ৭৯৯টি বিদ্যালয়ে শুধু প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষ রয়েছে। তবে ৩৭ হাজার ৬৭২ জন শিক্ষক প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কর্মরত আছেন। ভৌত অবকাঠামোগত বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখা যায়, দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনগুলোর যথেষ্ট উন্নতি সাধিত হয়েছে। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকার কানেক্টিং রোড করে দিয়েছেন। এর ফলে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত সহজ হয়েছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার দিকটা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, প্রায় শিক্ষকই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। প্রতিটি শিক্ষকই পিটিআই কোর্স সম্পন্ন। প্রতিটি উপজেলাকে ক্লাস্টার জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি বছর নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতিটি ক্লাস্টারে দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে ক্লাস্টারের আওতাধীন বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কারিকুলাম এবং সিলেবাস অনুযায়ী পাঠদানের বিষয়টি ক্লাস্টার অনুসারে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। এক কথায় বলা যায়, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগের তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, এত সমৃদ্ধ হওয়ার পরও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গ্রাম ও শহরের মানুষ নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়াতে চায় না।
উল্লেখ্য, পূর্বে সরকারিভাবে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকলেও বর্তমানে ৭ ডিসেম্বর, ২০১০ সালে জাতীয় সংসদে পাসকৃত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০’-এ ৫ বছর বয়স থেকে ১ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছে। তবে দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেনে আগে থেকেই এ ধরনের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু ছিল। যেখানে শিশুদের খেলাধুলা ও আনন্দের মাধ্যমে বর্ণমালা, সংখ্যা, ছড়া প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত গঠিত অধিকাংশ জাতীয় শিক্ষা কমিশন ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ৫ বছরের স্থলে ৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি ২০০০ সালে প্রাথমিক শিক্ষার ওপরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যেখানে ৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়। তাদের মতে, প্রাথমিক শিক্ষা দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য সমাপনী স্তর। এই স্তরের উপযোগী শিক্ষা গ্রহণের পর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীকে জীবন ও জীবিকার জন্য বিভিন্ন পেশা গ্রহণসহ শ্রমবাজারে প্রবেশের চিন্তা করতে হয়। ফলে ৮ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষা তাদের জীবনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে দেশীয় সম্পদের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যবস্থাপনাগত অসুবিধা ইত্যাদি বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা উপযোগী নয় বলে আপাতত প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ ৫ বছরেই রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
গুণগত শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রাসঙ্গিক পরিবর্তন কাম্য। কিন্তু পরিবর্তনগুলো নির্ধারিত পরিকল্পনা অনুসারে হচ্ছে কিনা, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বড় ধরনের পরিবর্তনের জন্য আজ থেকে বছর পনের আগে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছিলে দেশের দ্বিতীয় শিক্ষানীতি (জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০)। এ শিক্ষানীতিতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল তার বড় অংশ এখনো বাস্তবায়নের বাইরে। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, সেগুলোও দৃশ্যমান নয়।
প্রাথমিক শিক্ষা যদি গুণমানসম্পন্ন করা যায়, তাহলে এর প্রভাব পড়বে মাধ্যমিকে। একইভাবে গুণগত মাধ্যমিক শিক্ষা উচ্চশিক্ষায় গুণ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। দেখা যাচ্ছে, এভাবে চেইন প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপটি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে যতই হতাশা প্রকাশ করা হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয় কখনই একা সেটি নিশ্চিত করতে পারবে না। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে আসেন, তাদের মূল ভিত্তি তৈরি হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেটি মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় স্থায়ী হয়ে যায়। সুতরাং প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে তৈরি হয়ে এলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে সেটি পরিপূর্ণভাবে বিকাশের সুযোগ মেলে। অন্যথায়, ডিগ্রিধারী মানুষ তৈরি হয় সত্যি, কিন্তু দক্ষ জনসম্পদে ঘাটতি বাড়তেই থাকে।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে উপযোগভিত্তিক শিক্ষার সঙ্গে জোরালো সামাজিক ও মানসিক মূল্যবোধে বলীয়ান শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। একই স্তরের শিক্ষার্থীদের শেখার ক্ষেত্রে অসমতা, বিভিন্ন ধরনের শিক্ষার মধ্যে ব্যাপক ফারাক, দুর্বল শিখন মূল্যায়ন, শিক্ষকের উন্নয়ন ও জবাবদিহির সীমাবদ্ধতা, শিক্ষক প্রণোদনার অভাব, ঝরে পড়ার উচ্চহার, অতি দরিদ্র বা দুর্গম এলাকার শিশু ভর্তি না হওয়া, প্রাথমিক পরবর্তী পর্যায়ে শিক্ষার্থী বিশেষ করে নারীশিক্ষার্থী হ্রাস, নগর অঞ্চলে দরিদ্র জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানসম্মত দক্ষতা প্রশিক্ষণমূলক শিক্ষার অভাব প্রভৃতি কারণ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায়।
লেখক : সরকারি কর্মকর্তা