![চাই জনবান্ধব প্রশাসন চাই জনবান্ধব প্রশাসন](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/editor-picture-final-2502121431.jpg)
দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, সরকারি কর্মচারীরা নাগরিকদের সঙ্গে শাসকের মতো আচরণ করেন। ঘুষ ছাড়া সরকারি সেবা পাওয়া যায় না। বড় একটি অংশের মতে, দেশের জনপ্রশাসন জনবান্ধব নয়। জনপ্রশাসন খাতে সংস্কারে অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠিত কমিশনের করা এক জরিপে উঠে এসেছে এ তথ্য। জনপ্রশাসন সংস্কারে বিভিন্ন বিষয়ে নাগরিকদের মতামত নিতে অনলাইনে এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এতে অংশ নেয় ১ লাখ ৫ হাজার জন। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। জরিপে নির্ধারিত প্রশ্নের বাইরেও স্বাধীনভাবে মতামত দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন জনপ্রশাসন ও শাসন কাঠামোতে বড় রকমের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। দেশের ৬৬ শতাংশের বেশি নাগরিক মনে করেন, সরকারি কর্মচারীরা নাগরিকদের সঙ্গে শাসকের মতো আচরণ করেন। ৩১ শতাংশের মত, মানুষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়।
৮৪ শতাংশের বেশি নাগরিক মনে করেন জনপ্রশাসন খাতে সংস্কার করা অত্যাবশ্যক। ৮০ শতাংশের মত, দেশের প্রশাসন ব্যবস্থা জনবান্ধব নয়। ৫২ শতাংশ মনে করেন, ঘুষ ছাড়া সরকারি সেবা পাওয়া দুরূহ। এ ছাড়া ৪৬ শতাংশ মানুষ সরকারি সেবা নিতে গিয়ে হেনস্তা হওয়ার কথা বলেছেন। ৫২ শতাংশ মনে করেন, জবাবদিহি নিশ্চিত করাই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রধান কাজ। ৩৬ শতাংশের মতে, দুর্নীতি দূর করা আসল কাজ। ৯৬ শতাংশের মতে, জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ৫৬ শতাংশ মানুষ মনে করেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ জনপ্রশাসনকে জনবান্ধব করার পথে প্রধান বাধা। দুর্নীতিই প্রধান বাধা মনে করেন ৪২ শতাংশ মানুষ। জরিপে অংশগ্রহণকারী নাগরিকদের প্রায় ৬৯ শতাংশের ধারণা, গত সাড়ে ১৫ বছরে জনপ্রশাসনে নিরপেক্ষতার যথেষ্ট অভাব ছিল।
জনপ্রশাসনের সকল সদস্যকে মানবিক হয়ে জনগণকে সেবা দিতে হবে। নিজের জন্মদাতা পিতা-মাতা ও আপন ভাই-বোনকে সেবা দিতে যেমন কোনো ব্যক্তি কার্পণ্য করেন না, অনুরূপ দেশের মানুষকেও আপনজন মনে করে সেবা দিতে পারলেই মানবিক প্রশাসন গড়ে উঠবে। এর জন্য প্রয়োজনে কর্মকর্তাদের সকলকে সুপারভিশন, মনিটরিং ও কাউন্সিলিং করতে হবে। তা না হলে নাগরিক সেবায় ব্যত্যয় ঘটবে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত জনপ্রশাসন গড়তে দেশের রাজনীতিবিদদের আরও নৈতিক হতে হবে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কোমড় দুর্বল হলে তার নেতিবাচক প্রভাব তৃণমূলের মাঠ প্রশাসনেও পড়ে। আমাদের দেশে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে তেলবাজি সংস্কৃতির এক চর্চা বিদ্যমান, যা বিগত ৫৪ বছরে পত্রপল্লবে বিকশিত হয়েছে। দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর একান্ত সদিচ্ছা ছাড়া এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। তোষামোদমুক্ত এমন এক জনপ্রশাসন আমরা প্রত্যাশা করি, যা হবে শতভাগ জবাবদিহিপূর্ণ, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও জনবান্ধব।