ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১

লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ জানুয়ারি-জুনের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ঘোষিত মুদ্রানীতির বিভিন্ন কৌশল তুলে ধরে বলেন, আপাতত সরকারের প্রধান লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। তাই এই মুহূর্তে জাতীয় প্রবৃদ্ধিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। সরকার চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ জিডিবি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জিডিবি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাবে তা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশে। একই সঙ্গে কমেছে মানুষের মাথাপিছু আয়। সেই সঙ্গে কমেছে কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি। সবচেয়ে বেশি কমেছে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি। এসব তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর পরিসংখ্যানে।
নতুন মুদ্রানীতিকে সংকোচনমূলক অভিহিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এই মুহূর্তে সরকারের লক্ষ্য আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৭-৮ শতাংশে কমিয়ে আনা। তবে নীতিসুদহার বা রেপো রেট ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকগুলোর দেওয়া ঋণের সুদ নতুন করে বাড়ছে না। গত দুই মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসায় নেওয়া হয়েছে এই সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, সরকারের সামনে আপাতত প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে চারটি। সেগুলো হলোÑ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা, রিজার্ভ বাড়ানো এবং ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা বৃদ্ধি। সরকারও বাংলাদেশ ব্যাংকের এসব পদক্ষেপে সমর্থন দিয়েছে। যে কারণে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন মুদ্রানীতি সম্পর্কে এক প্রতিক্রিয়ায় সিপিডির ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, শুধু মুদ্রানীতি দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এর জন্য রাজস্বনীতির পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায় নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহীত সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ, কর্মস্থান ও সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে স্বস্তির দিক হলো আপাতত রিজার্ভের পতন কমানো গেছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে, আমদানির মাধ্যমে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। এর পাশাপাশি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিকল্প কিছু করা বাঞ্ছনীয়।
দেশে অনেকদিন ধরে মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বহুল আলোচিত। রমজান ও ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে বাজার আরও অস্থিতিশীল হতে পারে। অবশ্য সরকার তথা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য সব রকম চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী চক্র সবসময় ওত পেতে থাকে বাজার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলে মুনাফার হার যাতে বেশি বাড়ানো যায়। সরকার বাজারব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। বর্তমান বিশেষ পরিস্থিতিতে নিয়মিত পণ্য সরবরাহ অব্যাহত রাখা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেই প্রত্যাশা।

×