ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

ওষুধের বাড়তি মূল্য

-

প্রকাশিত: ২০:৩৩, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ওষুধের বাড়তি মূল্য

সম্পাদকীয়

দেশে জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন ওষুধের দাম দফায় দফায় বাড়ছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের দাম বেশি বেড়েছে। এসব ওষুধ রোগীকে নিয়মিত সেবন করতে হয়। সেই সুযোগে কোম্পানিগুলো সেসব ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে। ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির যে চিত্র জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ স্বাভাবিক।

বিগত বছরগুলোতে ডেঙ্গু, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের সময় নাপা, ফেক্সো-ফেনাডিন, ডক্সিভা, সেকলো, অমিডনের মতো ওষুধগুলোর দাম বাড়ে কয়েক দফায়। পরবর্তীকালে সরকারি সিদ্ধান্তেই জরুরি ১১৭টি ওষুধের দাম বাড়ানো হয় গত বছর। কিন্তু গত ছয় মাসে সরকারিভাবে কোনো ওষুধের দাম বাড়ানো না হলেও কোম্পানিগুলোই সমন্বয়ের নামে একের পর এক ওষুধের দাম বাড়াচ্ছে।

যার কারণ জানে না খোদ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও। ফলে, দিনের পর দিন ওষুধের বাড়তি দাম দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে রোগী ও তাদের স্বজনদের।
গত বছরের শুরু থেকেই ওষুধের বাজারে চলছে অস্থিরতা। ২০ টাকার নাপা সিরাপ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৩৫-৪৫ টাকায়। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধের দাম। এমন পরিস্থিতিতে অন্যান্য খরচ কাটছাঁট করে চিকিৎসা খরচ চালাতে হচ্ছে মানুষকে। তবে ব্যবসায়ীরা ওষুধের দাম বৃদ্ধির জন্য বরাবরই ডলারের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করে আসছেন।

ওষুধ হোক আর অন্য কোনো পণ্য, দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের কখনোই যুক্তির অভাব হয় না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনকণ্ঠ প্রতিনিধিকে যা বলেছেন, সেটি দায়সারা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন একটা পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ আমলের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে নানাক্ষেত্রে দুর্বৃত্তরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল।

বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে একটা হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছিল। আমরা সেই অবস্থা থেকে বের হতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ওষুধের বাজারে যদি কোনো কারসাজি হয়, তাহলে সে বিষয়েও নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অতীতের ওপর দায় চাপানো এবং হচ্ছে হবে করে সময়ক্ষেপণ আর কত? 
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস ১৯৯৭-২০২০’ প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যব্যয়ের একটা হিসাব মিলেছিল। তাতে দেখা যায়, স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয়ের অংশ বছর বছর কমছে। বিপরীতে ব্যক্তির পকেটের ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যয়ের তিন-চতুর্থাংশ বহন করছেন ব্যক্তি নিজেই। এটি ভাবনার বিষয়। স্বাস্থ্য খাতে শুধু বাজেট বাড়িয়ে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।

এর জন্য প্রয়োজন প্রধানত ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ। আমরা মনে করি, নিয়মিত বাজার তদারকির ব্যবস্থা না থাকলে ওষুধের দাম আরও বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, সাধারণ মানুষ ওষুধ কেনার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে। গত কয়েক বছরে এই খাতের উন্নতি বেশ দৃশ্যমান। তবে অযৌক্তিকভাবে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

এভাবে যদি ওষুধের দাম বাড়তেই থাকে, তাহলে সাধারণ রোগী, যারা স্বল্প আয়ের মানুষ এবং প্রবীণ ব্যক্তি অবসরে আছেন, তাদের অবস্থা কী হবে! আমাদের প্রত্যাশা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথাযথ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে সাধারণ মানুষের কল্যাণ নিশ্চিত করবে।

×