ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

পাসপোর্টে ভেরিফিকেশন জটিলতা

-

প্রকাশিত: ২০:৩২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

পাসপোর্টে ভেরিফিকেশন জটিলতা

সম্পাদকীয়

আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের কর্মপরিধি দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। চাকরি-বাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা এবং ভ্রমণ- সর্বত্রই পথচলা  আজ বেগবান। আদিকালে ভৌগোলিক স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের দাপ্তরিক অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল না। মানুষ যখন যেখানে যেতে চাইত, সেখানেই যেতে পারত অনায়াসে।

কিন্তু আধুুনিক রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে ওঠার পর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পাসপোর্ট প্রথার প্রচলন হয় বিশ্বব্যাপী। তবে মধ্যযুগে ইসলামি খেলাফত কালে, শুল্ক প্রদানের রসিদ ছিল এক ধরনের পাসপোর্ট। আধুনিক রাষ্ট্রের ইতিহাসে ১৮৬৬ সালে জাপান প্রথম পাসপোর্ট সিস্টেম চালু করে। ১৯২০ সালে আধুনিক পাসপোর্ট সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয় দুনিয়াজুড়ে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে পূর্ণাঙ্গ রূপে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর স্থাপিত হয়। সরকার জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে অনেক আঞ্চলিক অফিস চালু করেছে। তবে ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় নাগরিক দুর্ভোগ এখনো কমেনি।
সাধারণত পাসপোর্টের জন্য আবেদনের কয়েকদিন পর প্রার্থীর ভেরিফিকেশনের জন্য যোগাযোগ করে পুলিশ। দাপ্তরিক চাহিদা অনুযায়ী যাবতীয় সঠিক কাগজপত্র দেওয়ার পরও আবেদনকারীর কাছে পাসপোর্টের জন্য ভেরিফিকেশন করতে গেলে পুলিশকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা দেওয়ার একটি অলিখিত রেওয়াজ আছে।

কাগজে-কলমে এর কোনো বিধান নেই। ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট হাইকোর্টের এক বিচারপতির দুই মেয়ের পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনে পুলিশ দুই হাজার টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট  পুলিশের দুই বছরের কারাদ- হয়। তবু থেমে থাকেনি অর্থ আদায়ের এই অপসংস্কৃতি। পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নে পুলিশ ভেরিফিকেশনে হয়রানি ও টাকা নেওয়ার অপসংস্কৃতি নতুন কিছু নয়।

তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা প্রদান করলে তবেই পাসপোর্ট মেলে, অন্যথায় নয়। এতে বিদেশগামী ব্যক্তিগণ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। শুধু পুলিশ প্রতিবেদনের বাধ্যবাধকতা থাকায় নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব ও হয়রানির মুখে পড়তে হয়। 
পুলিশি ভেরিফিকেশনের প্রতিবেদন পেতে নাগরিকদের যথেষ্ট আর্থিক ও মানসিক ভোগান্তি হরহামেশাই পোহাতে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, পুলিশি প্রতিবেদন-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। বিগত সরকারগুলো পুলিশি ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে নানা উদ্যোগ নিলেও অদৃশ্য কারণে তা কার্যকর হয়নি।

প্রায়ই আবেদনকারীর তথ্যের স্বচ্ছতা যাচাই করতে যাওয়া পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তথ্য সংগ্রহকালে নানা ধরনের ভোগান্তি, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং ঘুষ নেওয়ার অভিযোগÑ এ পদ্ধতিকে কলুষিত করছে দীর্ঘদিন থেকে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে পুলিশি ভেরিফিকেশনের জটিলতা নিরসন করে পাসপোর্ট জারি ও নবায়নের নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সভায়। যা খুবই ইতিবাচক দিক।

আমরা মনে করি, পাসপোর্ট ইস্যুর মূলভিত্তি হওয়া উচিত জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন সনদ। এগুলো সঠিক হলে এবং রাষ্ট্রবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত না থাকলে পাসপোর্ট দেওয়া যেতে পারে। পুলিশি ভেরিফিকেশনের নামে নাগরিকদের হয়রানি করা কোনো সভ্য সমাজেই কাম্য নয়।

×