ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

ঢাকার দিনরাত

মারুফ রায়হান

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ঢাকার দিনরাত

সারাদেশে গত শনিবার বিশেষ অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। এ অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ অভিযানের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।  এতে আরও বলা হয়, গত শুক্রবার রাতে পতিত স্বৈরাচারের সন্ত্রাসীদের হামলায় কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
গাজীপুরে শুক্রবার গভীর রাতে মারধরের শিকার হন ১৫-১৬ জন। তাঁদের প্রায় সবাই শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, আহত শিক্ষার্থীরা শুক্রবার রাতে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেলের বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের মারধর করা হয়।
এ ঘটনার পর দিনভর গাজীপুরে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাঁদের বিক্ষোভের মুখে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বত্রিশ নম্বর বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা

বত্রিশ নম্বর বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা নিয়ে জনকণ্ঠের প্রতিবেদনটির কিছু অংশ:
“ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ।
রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে একদল বিক্ষুব্ধ ছাত্র। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে স্লোগান দিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে জড়ো হতে থাকে শত শত ছাত্র। পরে তারা ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবের বাড়িতে হামলা করে।
পুলিশ ও সেনাবাহিনী তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যারিকেড ভেঙে তারা ৩২ নম্বর বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। রাত ১০টার দিকে তারা ওই বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ধানমন্ডি ৫ নম্বরে অবস্থিত শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনেও আগুন দেয় ছাত্র-জনতা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা বলেন, এই বাড়ি থেকে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি শুরু হয়েছে। তাই দেশের মাটি থেকে এই বাড়ি মুছে ফেলতে চায় দেশের জনগণ। বিশেষ করে গত ১৬ বছর শেখ হাসিনা সরকার দেশের মানুষের রক্ত চুষে আবার দেশের মানুষকে মারার পরিকল্পনা করছে।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে বলা হয়, ‘ধানমন্ডি-৩২ অভিমুখে ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ বুলডোজার মিছিল। হাজারো ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা চালিয়ে দিল্লি পালিয়ে গিয়ে সেখান থেকেই খুনি হাসিনার বাংলাদেশবিরোধী অপতৎপরতার প্রতিবাদে ২৪-এর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার উদ্যোগে আজ রাত ৯টায় এ কর্মসূচি পালিত হবে।
মঙ্গলবার রাতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে জানানো হয়, ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার রাত ৯টায় ছাত্রদের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন। এর প্রতিবাদে বুধবার রাত ৯টায় ‘লং মার্চ টু ধানমন্ডি-৩২’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে ছাত্ররা। তবে তাদের পূর্ব ঘোষিত ঘোষণার আগেই ভাঙচুর শুরু করা হয়।
সর্বশেষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের এই ঐতিহাসিক বাড়িটি ভাঙার জন্য বুলডোজার নিয়ে আসা হয়। বুধবার রাত ১১টার দিকে ক্রেনযুক্ত বিশাল বাহন বাড়ির ভেতরে ঢোকে। রাত ১২টার দিকে ঐতিহাসিক ভবনটি বুলডোজার দিয়ে ভাঙা শুরু হয়। ইতোমধ্যে ধানমন্ডি ৩২ বাড়িটির মূল ফটক, শেখ মুজিবের ভাস্কর্য, ম্যুরাল, বাড়ির দরজা জানালাসহ অনেক কিছুই ভেঙে ফেলেন ছাত্র-জনতা। পরে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বুলডোজার নিয়ে ঢোকার আগ পর্যন্ত কাউকেই আগুন নেভাতে দেখা যায়নি।”

ইতিহাসের পাতায় বত্রিশ নম্বর
 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর বা সংক্ষেপে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঢাকা শহরের ধানমন্ডিতে অবস্থিত একটি বিশেষ জাদুঘর ছিল যা বাঙালি জাতির অন্যতম নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণার্থে স্থাপন করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে সংঘটিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী সহিংসতায় এটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে এটি ভেঙে ফেলা হয়।...
 শেখ মুজিবুর রহমান এই বাড়ি থেকে ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক-কালীন সময়ে জনতার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য ও জরুরি সিদ্ধান্ত দিতেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর এই বাড়ি থেকে যে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হতো সেই মোতাবেক দেশ পরিচালিত হতো।
তিনি যখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তখন এই ভবনেই ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সামরিক বাহিনীর একদল সশস্ত্র সদস্যের আক্রমণে সপরিবারে নিহত হন। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাড়িটি জিয়া সরকার কর্তৃক সিলগালা করে দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে বাড়িটি শেখ হাসিনার পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধুর দুই জীবিত উত্তরাধিকারী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ১৯৯৪ সালের ১১ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট গঠন করে এই বাড়িটি ট্রাস্টের হাতে অর্পণ করেন। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত কিছু সামগ্রীর সংগ্রহ নিয়ে এ বাড়িতেই ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ নামে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর এই বাড়িটি ও টুঙ্গিপাড়ার বাড়িটি দেখাশোনার পাশাপাশি বর্তমানে এর অধীনে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ছাড়াও শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজটিও পরিচালিত হচ্ছে।
(সূত্র: উইকিপিডিয়া)

বিশিষ্ট ২৬ নাগরিকের বিবৃতি

বিশিষ্ট ২৬ নাগরিকের বিবৃতিতে বলা হয়: ‘৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়।’
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ, নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন দেশের বিশিষ্ট ২৬ নাগরিক। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে নির্মমতার সঙ্গে বাড়িটি ধ্বংস করা হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে ঘটনা-পরবর্তী একটি বিবৃতি দিয়ে এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
বিবৃতিদাতারা এ-ও বলেন, ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারির ঘটনার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের ওপরেই অনেকাংশে বর্তায়। তাঁরা এসব ঘটনার বিচার দাবি করেছেন। শুক্রবার এ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
২৬ নাগরিকের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘৫ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) যেভাবে ৩২ নম্বর ধানমন্ডিতে অবস্থিত শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বাড়িটি ক্রেন, বুলডোজার ব্যবহার করে নির্মমভাবে ধূলিসাৎ করা হয়েছে এবং তার সঙ্গে অন্য যেসব স্থাপনা পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পূর্ণ জ্ঞাতসারে নির্মমতার সঙ্গে ধ্বংস করা হয়েছে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা দেখে একটি সভ্য দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত, স্তম্ভিত ও লজ্জিত। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই।’

বহুমুখী দূষণে জর্জরিত ঢাকা মহানগরী
বিবৃতিদাতারা বলেন, ‘এমন লজ্জাজনক ঘটনার নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর উপযুক্ত ভাষা আমাদের জানা নেই। ঘটনাটির আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এর সম্পূর্ণ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি আমরা জানাতে চাই; কিন্তু কার কাছে জানাব? আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো হয় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে, কিংবা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় ছিল; কিন্তু কেন? তাদের জনগণের ট্যাক্স ও অর্থে লালনপালন করা হয় কি নীরব দর্শক হয়ে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করার জন্য? যখন তাদেরই নাকের ডগায় প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন তারা নীরব-নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা পালনের অর্থ কী? অপরাধের সহযোগী হওয়ার সমার্থক নয়?’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কোনো ধরনের গণ-উত্তেজক সহিংসতা বা মব ভায়োলেন্স কেবলমাত্র ফ্যাসিবাদের কর্মী-সমর্থক এবং তাদের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের নাশকতা সৃষ্টির প্রচেষ্টাকেই উৎসাহিত করবে। বিগত পতিত সরকার ও তার সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে নানা নাশকতার পরিকল্পনা যেমন করেছে, তেমনি দেশে এখন আইনের শাসন নেই বলেও দেশ-বিদেশে যে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, তার হাতও এতে শক্তিশালী হবে। তাই পতিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কোনো অসত্য ভাষণ বা উসকানিমূলক উক্তিকে উসিলা করে এমন কোনো কাজ করা বা তাকে সমর্থন করা চলবে না, যাতে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। ইতোমধ্যে যা ঘটানো হয়েছে, সেই সব ঘটনাকে আইনের আওতায় এনে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সুলতানা কামাল, রাশেদা কে চৌধূরী, আনু মুহাম্মদ, খুশী কবির, পারভীন হাসান, ইফতেখারুজ্জামান, শামসুল হুদা প্রমুখ।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের বিবৃতি

ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতি এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে যার বহির্প্রকাশ ঘটেছে।
গত ছয় মাসে ৩২ নম্বর বাড়িটিতে কোনো ধরনের আক্রমণ, ধংসযজ্ঞ হয়নি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, গতকাল রাতে এটি ঘটেছে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে যার দুটো অংশ আছে। একটা অংশ হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা আত্মদান করেছেন শেখ হাসিনা তাদেরকে অপমান করেছেন, অবমাননা করেছেন। শহীদের মৃত্যু সম্পর্কিত অবান্তর, আজগুবি ও বিদ্বেষমূলক কথা বলে পলাতক শেখ হাসিনা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অবজ্ঞা করেছেন ও অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, শেখ হাসিনা দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও অমানবিক প্রক্রিয়ায় নিপীড়ন চালিয়ে ক্ষমতায় থাকাকালীন যে সুরে কথা বলতেন গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে যাওয়ার পরেও তিনি একই হুমকি-ধমকির সুরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে কথা বলে চলেছেন, হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির হুমকি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, মানুষের মনে জুলাই গণহত্যা নিয়ে যে ক্ষত রয়েছে সে ক্ষততে শেখ হাসিনা একের পর এক আঘাত করে চলছেন। তার এই সহিংস আচরণের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

৫ উপদেষ্টাই বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী
তবু বিপন্ন ঢাকা

সংবাদপত্র বণিক বার্তায় আল ফাতাহ মামুনের ‘ বিশ্বের অন্যতম দূষিত রাজধানীর পরিবেশে কোনো উন্নতি নেই’ শিরোনাম সম্বলিত প্রতিবেদনটি বেশ ইন্টারেস্টিং। অংশবিশেষ পাঠকসমীপে নিবেদন করছি :
‘অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ দায়িত্ব পাওয়ার আগে দেশব্যাপী পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনে সক্রিয়তার জন্য পরিচিত ছিলেন তিনি। পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত ড. আসিফ নজরুল এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি মন্ত্রণালয় সামলাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদও ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বাপার সহসভাপতি এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে পরিবেশ আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন। পরিবেশসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের অর্থনৈতিক প্রভাব ও অভিঘাত নিয়ে নিয়মিত বিশ্লেষণ করতেন তিনি। অন্তর্বর্তী সরকারের মোট পাঁচজন উপদেষ্টা জীবনের বিভিন্ন সময়ে পরিবেশকর্মী হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তাদের অন্তর্ভুক্তি দেশের প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ সুরক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বেশ আশাবাদী করে তুলেছিল। পরিবেশ-প্রতিবেশের বিভিন্ন উপাদানের দূষণ কমানোর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার কার্যকর ও যথাযথ দিকনির্দেশনামূলক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু গত ছয় মাসে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের কোথাও পরিবেশ সূচকের তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। এখনো বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীগুলোর অন্যতম ঢাকা, বিশেষ করে বায়ুদূষণের দিক থেকে। প্রায়ই বৈশ্বিক বায়ুদূষণ সূচক আইকিউএয়ারের বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে আসছে ঢাকা।’
‘এবারের শীতের মৌসুমে ঢাকার বায়ুদূষণ অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। মাসভিত্তিক হিসাবে নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ঢাকার বায়ুদূষণ ছিল আট বছরে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ গত মাসেও বায়ুদূষণ আগের আট বছরকে ছাড়িয়ে গেছে। আইকিউএয়ারের মানসূচকে বায়ুর মান ৩০০ পার হলেই সেটিকে ‘দুর্যোগপূর্ণ’ বা জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকির কারণ হিসেবে দেখা হয়। গত ২২ জানুয়ারি সকালে আইকিউএয়ারের মানসূচকে ঢাকার সার্বিক বায়ুর মান ছিল ৫১৮। আর সারা দিনে বায়ুর মান ছিল ৬২২। সাম্প্রতিক অতীতে এমন ভয়াবহ দূষণ আর দেখা যায়নি। জানুয়ারিতে এক দিনও নির্মল বায়ু পায়নি রাজধানীবাসী। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) তথ্য অনুযায়ী, গত মাসের বায়ুদূষণ আগের আট বছরের জানুয়ারির গড় মানের তুলনায় ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি ছিল। এ আট বছরে (২০১৭-২৪) জানুয়ারিতে গড় দূষণের মান ছিল ২৫৫ দশমিক ৪৮। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে তা ছিল ৩১৮।
সার্বিক বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, সরকার এখনো দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন তো আনতে পারেনি, নীতিগত পর্যায়েও কার্যকর কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। পাহাড়-বন উজাড়, নদী দূষণ ও দখল প্রতিরোধ, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী ঢাকার বায়ুমানের  উন্নয়নসহ দেশের প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশের সুরক্ষায়  এখনো দৃশ্যমান কোনো উন্নতি দেখাতে পারেনি অন্তর্বর্তী সরকার।’

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
[email protected]

×