![সংস্কার প্রতিবেদন সংস্কার প্রতিবেদন](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/editor-picture-final-2502101346.jpg)
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত ৬টি সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে শনিবার সন্ধ্যায় এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্দেশ্যে গঠন করেন ৬টি সংস্কার কমিশন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের প্রধান করে সংশ্লিষ্ট কমিশনকে ৯০ দিনের মধ্যে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর ছিল প্রতিবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর পরই সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ সংস্কার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, ৬টি কমিশনের সুপারিশের আলোকে চলতি মাসের মাঝামাঝি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংস্কার সম্পর্কে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য শুরু হবে আলাপ-আলোচনা। সেসব বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে জুলাই অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। আইন উপদেষ্টা আরও বলেন, দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র মেরামতের মৌলিক শর্ত পূরণ করতে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে যেসব সংস্কার অতি জরুরি, সেগুলো করার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদায় নিতে ইচ্ছুক অন্তর্বর্তী সরকার।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন তিন ভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। একটি হলো আশু করণীয়। দ্বিতীয়টি হলো মধ্যমেয়াদি। তৃতীয়ত, দীর্ঘমেয়াদিগুলো নির্বাচন পরবর্তী সরকার বাস্তবায়ন করবে। জরুরি করণীয়গুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা হবে নির্বাচনের আগে। সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি ৫টি কমিশনের আশু করণীয় কিছু সুপারিশ রয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিটি সুপারিশ গ্রহণ করা হবে কিনা, তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ছয় কমিশনের প্রধানদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’Ñ যার নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এই কমিশন রাজনৈতিক দল এবং জুলাই অভ্যুত্থানের অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ক্ষমতার পটপরিবর্তন ঘটে। এরপর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। এই সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের দাবি ওঠে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে জনমনে রাষ্ট্র সংস্কারের যে গভীর আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রের সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্যবিষয়ক, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার, নারী বিষয়ক ও স্থানীয় সরকার সংস্কারে বিভিন্ন খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এ ধরনের কমিশন গঠন অপরিহার্য। রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে যে কয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে, তাদের কাছে প্রত্যাশাÑ সংস্কার যেন কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য না হয়, সবার জন্য হয়। সেই সঙ্গে তাদের সুপারিশমালায় যেন জনআকাক্সক্ষা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পায় এবং অধিকাংশের মতের প্রতিফলন ঘটে।