![অপারেশন ডেভিল হান্ট অপারেশন ডেভিল হান্ট](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/editor-picture-final-2502101345.jpg)
বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরমতসহিষ্ণুতার বড়ই অভাব। মতাদর্শিক ভিন্নতায় দলে দলে কোন্দল, অভ্যন্তরীণ দলীয় বিবাদ ও প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপসংস্কৃতি চলমান বহুকাল থেকে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা এবং সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনতে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে যৌথ বাহিনীর অংশগ্রহণে চলছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। সম্প্রতি গাজীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর পতিত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পরিকল্পিত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার এ ঘটনায় সংগঠনের জেলা আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ মোহিত বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ কর্মী আমজাদ মোল্লাকে প্রধান আসামি করে, ২৩৯ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। সারাদেশে ১৩০৮ জন গ্রেপ্তার, আইনশৃঙ্খলার নিবিড় পর্যবেক্ষণে সেন্ট্রাল কমান্ডের যাত্রা শুরু। ডেভিল শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চলবে।
৭ ফেব্রুয়ারি রাতে নগরীর ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ খবর শুনে গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের নেতারা হামলা প্রতিহত করতে যান। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ‘মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে’ ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালে একদল লোক বাড়িটি ঘিরে ফেলেন এবং শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ১৫ জনকে গুরুতর আহত করে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ শিক্ষার্থী মাথার পেছনে ও ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের দাবি, তাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই এই নৃশংস হামলা করা হয়েছে। ডিবি অফিসের সামনে মোটরসাইকেল আরোহী সন্ত্রাসীর গুলিতে এক ছাত্র আহত হন। পুলিশকে তৎক্ষণাৎ জানিয়েও ত্বরিত সাহায্য পায়নি ছাত্ররা। এ ঘটনায় গাজীপুর সদর থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং ক্ষমা চেয়েছেন পুলিশ কমিশনার। পুলিশ রাষ্ট্রের নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার অতন্দ্র প্রহরী কিন্তু পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনো সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগ বহুকালের, কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও যে নেই তাও নয়। আমাদের সন্তানতুল্য নিরীহ ছাত্রদের সুরক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আহত ছাত্রদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।
নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে পলাতক শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ৫ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে বুলডোজার কর্মসূচি চালায়। এরপর বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও বিতর্কিত নেতাদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে। ইতোপূর্বে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে চারদলীয় জোট সরকার ২০০২ সালের ১৭ অক্টোবর গভীর রাতে অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে। মোট ৮৪ দিনের অভিযানে ১২ হাজার গ্রেপ্তার, ২ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৩০ হাজার গুলি উদ্ধার হয়। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত অপারেশন ক্লিনহার্টে ৪০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়, যার এক-তৃতীয়াংশ বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মী। এ অভিযানে আওয়ামী লীগের কিছু সন্ত্রাসীও নিহত হয়। নিকট ইতিহাসের এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে ড. ইউনূস সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। অপারেশনে একজন নিরীহ মানুষও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, কোনো অবস্থাতেই দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের কাছে হেরে যাওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার হারলে, হারবে বাংলাদেশ, জিতবে স্বৈরাচার। এমনটি আমাদের কাম্য নয়।