ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

উপভোগ্য বিপিএল

প্রকাশিত: ২০:৩১, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উপভোগ্য বিপিএল

বিতর্ক থেকে যেন বেরুতেই পারছে না বিপিএলÑ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। অথচ এই উপভোগ্য টুর্নামেন্ট ১১ মৌসুম পার করল। দুর্বল ফ্র্যাঞ্চাইজিকে নিয়ে সমস্যা, স্থানীয়-বিদেশী ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক না পাওয়ার অভিযোগ, স্পট ফিক্সিংয়ের বিষবাষ্পÑ এগুলো থেকে কবে মুক্ত হবে বিপিএল? যদিও গত শুক্রবার স্টেডিয়ামভর্তি দর্শক উপস্থিতি জানিয়ে দিয়েছে দেশের মানুষ এ টুর্নামেন্ট কতটা উপভোগ করে। এটি ক্রিকেটেরই বিজয়। দর্শকরা এসেছেন খেলার টানে, চার-ছক্কার রোমাঞ্চে ডুব দিতে। একাদশ বিপিএল সে প্রত্যাশা মেটাতে কার্পণ্য করেনি, এমনকি ফরচুন বরিশালের পরপর দ্বিতীয় শিরোপা জেতা ফাইনালটাও নয়। নিজেদের সর্বশেষ বিপিএলেও ফাইনাল খেলে হেরেছিল চিটাগং। আরও একটি ফাইনাল, আরও একবার হতাশায় ডোবাল তাদের। অন্যদিকে ফরচুন বরিশাল পরপর দুবার ফাইনালে উঠে ভেসেছে ট্রফি জয়ের আনন্দ উৎসবে। চিটাগংকে ৩ উইকেটে হারিয়ে যোগ্য দল হিসেবেই চ্যাম্পিয়ন তারা।
৪০ দিনের খেলা হলো, রানের ফোয়ারা ছুটল, সেঞ্চুরি দেখা গেল ৮টি, ব্যাটিং উইকেটেও বোলাররা ম্যাচ জেতালেন অনেক সময়, রোমাঞ্চকর অঘটন ঘটেছে, বড় দল বাদ পড়েছে, গ্যালারি পূর্ণ থেকেছে টিকিট কেনা দর্শকে। কিন্তু মাঠের বাইরে ছিল অনেক উত্তাপ। বিসিবির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বদলেছে, বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলেও পরিবর্তন এসেছে। তবু কমেনি বিশৃঙ্খলা। একটা গোছানো বিতর্কমুক্ত টুর্নামেন্ট করা যায়নি এবারও।
বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রিয় জাতি। আমরা দেখেছি বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরের পরই ক্রিকেট বিশ্বে উত্তাপ ছড়িয়ে আসছে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। বাংলাদেশও সে ধারায় বিশ্বে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে একটা অবস্থান করে নিয়েছে। বিপিএল আসরে এক ধরনের উত্তেজনায় পেয়ে বসে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। বলা যায়, খেলা চলাকালীন বিপিএল জ্বরে বেশ শক্তভাবেই আক্রান্ত হয়ে থাকে দেশের লাখ লাখ ক্রিকেটপ্রেমী। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। বিপিএল বাংলাদেশের জন্য একটি দারুণ অভিজ্ঞতা। এ ধরনের আয়োজন পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার আগে বাংলাদেশ করে দেখিয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য গৌরবের। দর্শকপ্রিয়তা পাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারের জন্য বিপিএল আর্থিক নিশ্চয়তার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। বিপিএল আয়োজনে কিছু অব্যবস্থাপনা লক্ষ্য করা গেছে অতীতে, কিছু কলঙ্কও লেগেছে এর গায়ে। এবার যদি তেমনটা না হতো তাহলে কত ভালোই না হতো!
টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ক্রিকেটারদের স্বল্প সময় ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় কিছু করার এক দারুণ উপভোগ্য লড়াই। এতে দায়িত্বশীলতা, পেশাদারিত্ব এবং টিমওয়ার্কের চূড়ান্ত রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। সে কারণেই আইপিএল এবং বিপিএল ক্রিকেট দর্শকদের কাছে এত বেশি আকর্ষণীয়। বিদেশী খেলোয়াড়দের সহযোগী (টিমমেট) এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে যত বেশি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া যাবে ততই দেশীয় ক্রীড়ার উৎকর্ষ ঘটবে। বিশেষ করে দেশের মাটিতে এ ধরনের আয়োজনে খেলোয়াড়রা আরও বেশি উদ্বুদ্ধ ও সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে দেশী-বিদেশী ক্রিকেটারদের সময়মতো পারিশ্রমিক না দেওয়া নিয়ে এবার যে ব্যাপক আলোড়ন উঠেছে, ভবিষ্যতে তা এড়াতে এখন থেকেই উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।   বিপিএল ও দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, এখন     থেকে বিপিএলের ড্রাফটে থাকা সব বিদেশী ক্রিকেটারের দায়িত্ব   নেবে বোর্ড। ক্রিকেটপ্রেমীরা আশাবাদী আগামীতে যেন কলঙ্কমুক্ত   হয় বিপিএল।

×