ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১

আইন মানতে হবে

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আইন মানতে হবে

অবিলম্বে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সকল নাগরিককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েও দলীয় সন্ত্রাসীদের একত্রিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য। বিগত সরকার সাড়ে ১৫ বছর জনগণের ওপর অত্যাচার ও নিপীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল। সংগত কারণেই  বিক্ষোভকারী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা বছরের পর বছর নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। ফলে তাদের মনে ক্ষোভ রয়েছে। এ সত্ত্বেও সরকার দেশের সকল নাগরিককে আইন  মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। এতে করে আমরা নিজেদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল একটি জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারব। ফ্যাসিবাদী শাসনের অধীনে পুরানো বাংলাদেশ থেকে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করছি, আইন মেনে চলার মধ্য দিয়েই সেটি করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘আসুন, আমরা বাংলাদেশীদের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতার অনুভূতি ক্ষুণ্ন না করি। আইনের প্রতি যে কোনো অবজ্ঞা নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।’
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরশাসক  শেখ হাসিনা ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে বক্তব্য প্রচার করার নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট এবং বিগত সময়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতা ফেসবুকে  ধানমণ্ডি ৩২ অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ এবং ‘মার্চ টু ধানমণ্ডি ৩২’ কর্মসূচি পরিচালনা করে। এক পর্যায়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের পর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হলেও তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বুলডোজার কর্মসূচিতে সব নিঃশেষ হয়ে গেল। বিধ্বস্ত বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অপলক নেত্রে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এই মহিলা নিজের জিদ দিয়ে দলটাকে একেবারে  শেষ কইরা দিয়া গেল।’ শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের কূটনীতিককে ডেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবাদলিপি দিয়েছে। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, ‘৩২ নম্বরে ভাঙচুর অনভিপ্রেত, হাসিনার উস্কানি থেকে এ ক্ষোভের বহির্প্রকাশ।’
ভুলে গেলে চলবে না, আখেরে এ দেশেই আমরা থাকব কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরস্পরের পাশে বিপদে-আপদে, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে। দিন শেষে সবার সঙ্গে সবার দেখা হবে। দেশের সকল ঐতিহাসিক স্থাপনা জাতীয় সম্পদ। কোনো ব্যক্তি, পরিবার কিংবা কোনো দলের একক আধিপত্য আদৌ ন্যায়সঙ্গত নয়। তরুণরা আমাদের জাতীয় সম্পদ। আগামীর শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণরাই হবে নিয়ামক শক্তি। তারা পথহারা বাংলাদেশকে আলোর পথ দেখাবে। সাড়ে পনেরো বছরের জগদ্দল শাসনের অবসান ঘটিয়েছে তরুণরাই। একটি দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য পরবর্তী প্রজন্মকে আলোর পথের সন্ধান দেয়। ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণে তরুণদের হতে হবে ভ্যানগার্ড। তরুণদের আবেগ-অনুভূতিরও মূল্যায়ন করতে হবে। শুধু পতিত আওয়ামী লীগ সরকারই নয়, কারও তরফ থেকেই কোনো ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য কাম্য নয়। যার ফলে তরুণরা আবারও আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে। যে কোনো পক্ষের আক্রমণাত্মক বক্তব্য শান্তি, সুস্থিতি ও স্থিতির পথে চরম অন্তরায়।

×