ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

সড়ক ব্যবস্থাপনায় টাস্কফোর্সের সুপারিশ

ওবায়দুল কবির

প্রকাশিত: ২১:০৪, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সড়ক ব্যবস্থাপনায় টাস্কফোর্সের সুপারিশ

সম্প্রতি ‘অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্র্নির্ধারণ সংক্রান্ত সরকারি টাস্কফোর্স’ রাস্তার যানজট কমাতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ তুলে ধরেছে। এসব সুপারিশের অনেক ইতোমধ্যে নানাভাবে প্রচারিত হয়েছে গণমাধ্যমে। বিষয়গুলো আরও সুস্পষ্ট করে তুলে ধরেছে সুপারিশ আকারে। বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্র্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণে গত বছরে ১০ সেপ্টেম্বর এই টাস্কফোর্স গঠন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৩০ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। এর অংশবিশেষ প্রকাশিত হয়েছে প্রচার মাধ্যমে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক এ এস মুর্শিদ ছিলেন টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান। টাস্কফোর্সের সদস্য সংখ্যা ছিল ১২ জন। প্রতিবেদনের ‘অবকাঠামো ও সংযোগ : অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ’ শীর্ষক অংশটি প্রণয়ন করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক।
টাক্সফোর্সের সুপারিশে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারে রাশ টানার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, রাজধানীতে কত গাড়ি চলতে পারবে সেটি আগে নির্ধারণ করতে হবে। সে অনুযায়ী রাস্তায় গাড়ি নামানোর অনুমোদন দিতে হবে। সড়ক ব্যবহারে গাড়ির জন্য ধার্য করতে হবে মাশুল। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে গাড়ি কেনার ঋণ কমিয়ে আনা এবং গাড়ির অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য জরিমানা বাড়ানোরও প্রস্তাব করা হয় সুপারিশে। এ ছাড়া প্রকল্পের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি ক্রয় নিষিদ্ধ, রাইড শেয়ারিং সেবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, লেগুনা, দুরন্তের মতো যানের চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়ে বড় ও দ্বিতল বাস বাড়ানোর কথা বলেছে টাস্কফোর্স কমিটি। ঢাকার মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে উড়ালসড়ক নির্মাণ বন্ধ এবং বাস-ট্রেনসহ গণপরিবহনে জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে। অবশ্য চাষযোগ্য জমি বাঁচাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শহরের বাইরে উড়ালসড়ক ও উড়াল রেলপথ নির্মাণের। সুপারিশে রেল, নৌ ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়কে এক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আলাদা আলাদা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ নিজেদের মতো করে উন্নয়ন প্রকল্প নেয়। এতে সমন্বয়ের অভাব দেখা যায়। বিশেষ করে জমি অধিগ্রহণ কিংবা জমি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে তৈরি হয় নানা জটিলতা। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়, রেল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনাল করতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জমি দিতে রাজি হয়নি। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত জটিলতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না। একই কারণে মাল্টিমোডাল হাব করা যাচ্ছে না কমলাপুর  রেলস্টেশনকে। রেলের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ রয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের।
প্রতিবেদনে বৈশ্বিক বাসযোগ্যতা সূচক, বায়ুদূষণ সূচক, যানবাহনের গতির সূচকসহ আটটি বৈশ্বিক গবেষণা ও সমীক্ষার উদাহরণ টেনে বলা হয়, এর সবটিতেই ঢাকার অবস্থান সবার নিচে কিংবা নিচের দিকে। এ পরিস্থিতিতে দীর্ঘমেয়াদে ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের পরামর্শ দেওয়া হয়। ঢাকার ৮৫ শতাংশ অবকাঠামো অননুমোদিত এবং তা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য উপযোগী নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে এটিকে উদ্বেগজনক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। ১৯৯৭ সালে ঢাকায় যানবাহনের গড় গতিবেগ যেখানে ঘণ্টায় ছিল ২৫ কিলোমিটার, তা ২০১৫ সালে ৬ দশমিক ৭ কিলোমিটারে এসে ঠেকেছিল। এখন তা আরও কমেছে। নগরে একটি সমন্বিত গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরামর্শ  দেওয়া হয়েছে। এতে বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ, ট্রাম, বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট), এলআরটি (লাইট  রেল ট্রানজিট), মনোরেল, সাব আরবান কমিউটার রেল, মেট্রোরেল ও রাইড শেয়ারিংয়ের মতো সব ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
টাস্কফোর্সের দেওয়া প্রতিটি সুপারিশ বাস্তবসম্মত। এর মধ্যে কিছু সুপারিশ এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব। কিছু সুপারিশের জন্য কিছুদিন সময় লাগতে পারে। বাকি সুপারিশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জড়িত এবং বাস্তবায়নও সময়সাপেক্ষ। এজন্য সুপারিশগুলোকে তিন ভাগ যথাÑ স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যায়। যেমনÑ বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি, রাইড শেয়ারিংয়ের সেবার মান উন্নয়ন, ব্যাটারিচালিত যানবাহন বন্ধ ও স্বল্প গতির যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন রুটে বড় ও দ্বিতল বাস সার্ভিস চালু ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদে করা সম্ভব। নগরীর রুট ফ্র্যাঞ্চাইজি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কয়েক বছর আগে। একবার পরীক্ষামূলকভাবে দুটি রুট চালুও করা হয়েছিল। প্রভাবশালী বাস মালিকদের দৌরাত্ম্যে এই পরিকল্পনা সফল হয়নি। বর্তমান সরকারও এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি গোলাপি রঙের বাস দিয়ে চালু করা হয়েছে আবদুল্লাহপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন রুটের বাস সার্ভিস। কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে অথবা ই-টিকিটের মাধ্যমে এই বাসে চড়তে হবে। কেউ টিকিট ছাড়া এই বাসে ভ্রমণ করতে পারবে না। নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড ছাড়া যাত্রী ওঠানামাও করতে পারবে না। খুব শীঘ্রই মিরপুর, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর থেকে বিভিন্ন রঙের বাস চলবে নগরীর বিভিন্ন রুটে।   
রাইড শেয়ারিং গোটা বিশে^ জনপ্রিয় পাবলিক পরিবহন। বাংলাদেশেও এটি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগে। শুরুতে এর সেবার মান ভালো থাকলেও এখন আর নেই। পিক আওয়ারে এগুলো পাওয়া খুবই কঠিন, গন্তব্য পছন্দ না হলে এরা যেতে চায় না। বারবার ক্যাব পরবর্তন করেও গাড়ি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। জরুরি প্রয়োজনে এখন আর রাইড শেয়ারিং ক্যাবের ওপর নির্ভর করা যাচ্ছে না। আমাদের দেশে ট্যাক্সি কালচার গড়ে ওঠেনি কোনো দিনই। সুতরাং রাইড শেয়ারিংয়ের সেবার মান বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সিএনজি অটোতে মিটার লাগানো এবং মিটারে ভাড়া নির্ধারণের আইন বিদ্যমান থাকলেও কোথাও এর কার্যকারিতা নেই। যাত্রীদের পকেট কেটে তারা ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে।
বিগত সরকারের আমলে একবার এবং বর্তমান সরকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা নিষিদ্ধ করলেও তাদের আন্দোলনের মুখে দুই সরকারকেই আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে। এখন রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিক্সার দাপটে অতিষ্ঠ নাগরিক জীবন। এই অবৈজ্ঞানিক যানে দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে প্রতি নিয়ত। ব্যাটারিচালিত যানবাহন চলাচলে নীতিমালা তৈরি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত তিন মাসেও তাদের কোনো কর্মতৎপরতা চোখে পড়েনি। অবিলম্বে মূল রাস্তায় এগুলো চলাচল নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া স্বল্প গতির যান রিক্সার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি। আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে হলে বিকল্প ব্যবস্থা করে স্বল্প গতির এই যান তুলে দেওয়ার চিন্তা করতে হবে। একই সঙ্গে নগরীর রাস্তাগুলোতে বড় ও দ্বিতল পাবলিক বাস বাড়াতে হবে। এই বাস রাস্তার কম জায়গা নষ্ট করে বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারে। তবে অবশ্যই বাসগুলো হতে হবে মানসম্মত এবং চলতে হবে কঠোর নিয়ম মেনে।
মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো একীভূত কিংবা সমন্বয় সাধনের উদ্যোগ নিতে হবে। মহানগরগুলোতে যানজটের অন্যতম কারণ সংশ্লিষ্ট বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। এতে শুধু রেল, সড়ক ও জনপথ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ নয়, স্বরাষ্ট্র, স্থানীয় সরকার ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ও জড়িত। এ কারণে মন্ত্রণালয় একীভূত করতে না পারলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্য সকল বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি কর্তৃপক্ষ গঠন করা যেতে পারে। নগরীর সকল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করার আগে এই কমিটিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শতভাগ সমন্বয় নিশ্চিতের পরই শুরু করতে হবে কাজ। এমন একটি সমন্বয় পরিকল্পনায় অতীতে ‘সিটি গভর্নরের’ ধারণা দেওয়া হয়েছিল। ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফ এই দাবি তুলেছিলেন। অতীতে কোনো সরকারের পক্ষ থেকেই বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়নি। বর্তমান সরকার গঠিত সংস্কার কমিটি অবশ্য নগর সরকারের সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে বড় শহরগুলোতে আধুনিক মিটার ট্যাক্সি চালু করা হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে থাকতে পারে ট্রাম, বিআরটি (বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট), এলআরটি (লাইট রেল ট্রানজিট), মনোরেল, সাব আরবান কমিউটার  রেল, মেট্রোরেল ইত্যাদি। ট্রাম, বিআরটি, এলআরটি লাইন নির্মাণে নগরীতে জায়গা পাওয়া যাবে কিনা তা পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। শহরের সব স্থানে না হলেও কিছু কিছু স্থানে হয়তো আধুনিক এই পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চালু করা যাবে। তবে মনোরেল ও মেট্রোরেল নগরীতে আনতে পারে যুগান্তকারী পরিবর্তন। মেট্রোরেলের প্রস্তাবিত ছয়টি প্রকল্পের একটি বাস্তবায়নেই মতিঝিল থেকে মিরপুর হয়ে উত্তরা যাতায়াতকারী যাত্রীদের অনেক সুবিধা হয়েছে। এই রাস্তায় কমেছে যানবাহনের চাপ। বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রো চালু হলে রাজধানীর উত্তর-দক্ষিণের যোগাযোগ সম্পূর্ণ হবে। বাকি থাকবে পূর্ব-পশ্চিম যোগাযোগ। পর্যায়ক্রমে প্রস্তাবিত সকল মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর কিছু পুনর্মূল্যায়নও করা যায়। দু’একটি প্রকল্পে মেট্রোর পরিবর্তে স্থাপন করা যায় মনোরেল। শহরের বড় রাস্তার পাশে বা মধ্যেই স্থাপন করা যায় মনোরেল। বিশে^র প্রায় সকল উন্নত শহরেই মেট্রোরেলের পাশাপাশি মনোরেল চালু রয়েছে। এ ছাড়া সাব আরবান কমিউটার রেল চালু করতে পারলে মূল শহরের ওপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমবে। যাত্রীরা ঢাকার আশপাশের শহরগুলোতে বাস করেও রাজধানীতে অফিস করতে পারবেন।
সাব আরবান কমিউটার রেল সার্ভিস চালু করা অপেক্ষাকৃত সহজ। অল্প খরচে বিদ্যমান রেললাইন কাজে লাগিয়ে এই সার্ভিস চালু করা যায়। ঢাকা থেকে গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, ভাঙ্গা পর্যন্ত রেললাইন বিদ্যমান। সংযোগ স্থাপন করতে হবে মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের মধ্যে। বিদ্যমান রেল লাইনের মাধ্যমে কমিউটার ট্রেন চালু করতে প্রয়োজন হবে সকল রেল ক্রসিং তুলে দেওয়ার। সকল ক্রসিংয়ে তৈরি করতে হবে ওভার বা আন্ডার পাস। এজন্য একটু খরচ হবে। ক্রসিংগুলো তুলে দিয়ে মেট্রোরেলের মতো টিকিটিং পদ্ধতিতে চালু করতে হবে কমিউটার ট্রেন। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর সময় মাথায় রেখে গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ভাঙ্গা ও মানিকগঞ্জের মধ্যে প্রতি ৫/১০ মিনিট পর পর ট্রেন চালু করতে পারলে রাজধানীর ঢাকার জনসংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। রাজধানীতে বসবাসকারী অনেক মানুষ এ দূষিত পরিবেশ, উচ্চ বাসা ভাড়া ও অতিরিক্ত দ্রব্যমূল্য দিয়ে অতিষ্ঠ।
তারা আশপাশের শহর কিংবা শহরতলিতে অর্ধেক দামে বাসা ভাড়া নিতে পারবেন। হাতের কাছে পাবেন টাটকা শাক-সবজি, মাছ-মাংস অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে। স্বাভাবিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে অনেকে শহর ছাড়বেন। সকালে এসে সন্ধ্যায় চলে যাবেন নিজ শহরে। বিশ্বের আধুনিক শহরগুলোতে এই কনসেপ্টেই জনসংখ্যার চাপ কমানো হয়েছে। লাখ লাখ লোক সকালে শহরে প্রবেশ করেন আবার বিকালে শহর ছেড়ে যান। দীর্ঘমেয়াদে হলেও প্রকল্পগুলো নিয়ে এখনই চিন্তাভাবনা শুরু করতে হবে। অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে পর্যায়ক্রমে।
টাস্কফোর্সের অবকাঠামো ও সংযোগ অংশের প্রণেতা, পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সামছুল হক একটি জাতীয় পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের চলমান উন্নয়নকে ‘জট লাগানো’ উন্নয়ন উল্লেখ করে বলেন, ‘এজন্য লাখো  কোটি টাকা খরচ করেও সুফল মিলছে না। টাক্সফোর্স জট ছোটানোর প্রস্তাব দিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ এগুলো বাস্তবায়ন করে উপকৃত হয়েছে। প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে শক্ত রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। আমলাতন্ত্রের জটিলতায় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন না হলে ভবিষ্যতে কোনো উন্নয়নই সেভাবে কাজে লাগবে না।’

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, জনকণ্ঠ

×