ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১

মহানগর সরকার

প্রকাশিত: ২১:০০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মহানগর সরকার

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট ব্যবস্থা চালুর কথা বলেছে। ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় রেখে ভারতের নয়াদিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট বা রাজধানী মহানগর সরকার গঠনের সুপারিশ করা হলো। ঢাকা মহানগরী, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও টঙ্গী নিয়ে রাজধানী নগর সরকার ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা নিয়ে ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট গঠনের মাধ্যমে জনপ্রশাসন ও শাসনকাঠামোয় বড় রকমের পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। একই সঙ্গে বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে দেশের পুরানো চারটি বিভাগের (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা) সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। সরকারের প্রান্তিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত যাবতীয় কমর্কাণ্ডে গতিশীলতা আনতে দেশের আটটি প্রশাসনিক (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ) বিভাগের সঙ্গে কুমিল্লা ও ফরিদপুরকে বিভাগ করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
বর্তমানে পৌরসভার মেয়ররা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন কিন্তু কমিশন সুপারিশ করেছে, পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হবেন ওয়ার্ড কমিশনারদের ভোটে। উপজেলা প্রশাসন শক্তিশালী করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রস্তাবিত নাম উপজেলা কমিশনার। একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদের সচিব নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান বাতিল। স্থায়ী বেতন কমিশন গঠন, ১৫ বছর চাকরি করলে স্বেচ্ছায় অবসরের সুযোগ রাখা। উপসচিবদের গাড়ি কেনায় ঋণ সুবিধা বাতিল, শূন্যপদ ছাড়া পদোন্নতি না দেওয়া এবং প্রশাসনিক ন্যায়পাল নিয়োগ করাসহ শতাধিক সুপারিশ করেছে কমিশন। মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সংখ্যা কমানো। বিসিএস ‘ক্যাডার সার্ভিস’ বাদ দিয়ে, ২৬টি ক্যাডারকে কমিয়ে ১৩টি প্রধান সার্ভিসে বিভক্ত করা। কাজের ধরন অনুযায়ী সার্ভিসের নামকরণ। ৪৩টি মন্ত্রণালয়কে ২৫টি এবং ৬১টি বিভাগকে ৪০টি করা।
প্রশাসন ক্যাডারকে ‘বাংলাদেশ প্রশাসনিক সার্ভিস’ করে পদগুলো মাঠপ্রশাসনে সীমাবদ্ধ রাখা এবং এসইএসের মাধ্যমে পরিচালিত হবে সচিবালয়। এ ছাড়া বিগত সময়ে যারা মেগা দুর্নীতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের অর্থপাচার, পাতানো নির্বাচনে ভোট কেলেঙ্কারি, জুলাই-আগস্টের গণহত্যার যঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে জনপ্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বাভাবিক ইমেজ নষ্ট করেছেন যারা, তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেছে।
প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ বর্তমান জনবহুল বাংলাদেশের এক কঠিন বাস্তবতা। সামান্য পেনশনের টাকা ওঠানো কিংবা উচ্চ আদালতে মামলা মোকদ্দমায় লড়তে একজন নাগরিককে টেকনাফ-তেঁতুলিয়া থেকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে দিনের পর দিন রাজধানী ঢাকায় ছুটতে হয়। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ এমনভাবে করা দরকার যেন জনদুর্ভোগ লাঘব হয় এবং শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক দুশ্চিন্তা থেকে নাগরিকগণ পরিত্রাণ পান।

×