গণমাধ্যম বিষয়ে জাতীয় জনমত জরিপের ফল প্রকাশ হয়েছে সম্প্রতি। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের জন্য জরিপটি করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গণমাধ্যমের ব্যবহার নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপকভিত্তিক এ ধরনের জরিপ দেশে এটিই প্রথম। এর আগে এ ধরনের জরিপ কেন করা হয়নি, সেটি একটি প্রশ্ন। তবে জরিপ না করা হলেও নানা মন্তব্য ও অভিমত বিশ্লেষণ করে সমাজবাস্তবতা সম্পর্কে অনেকটা সঠিক অনুমান করা গিয়েছিল। জুলাই আন্দোলনে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে পাঠক, দর্শক ও শ্রোতাদের মনোভাব জানার জন্য পরিচালিত এ জরিপে বিভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। দেখা যাচ্ছে, খবরের বাহন হিসেবে প্রচলিত গণমাধ্যমের চেয়ে মোবাইল সেটের ওপর মানুষের নির্ভরতা বেশি। সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যমের ওপর মানুষ আস্থা হারাননি, তবে রাজনৈতিক, সরকারি ও প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপকে বস্তুনিষ্ঠ খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় হিসেবে দেখা হচ্ছে। জরিপে বলা হয়, মানুষ মুদ্রিত খবরের কাগজ কম পড়লেও অনলাইন সংস্করণ পড়ছেন মোবাইলে। জাতীয় দুর্যোগ বা সংকটে তথ্য খোঁজার জন্য এখনো মানুষ চোখ রাখেন টেলিভিশনের পর্দায়। জরিপে গণমাধ্যমকে স্বাধীন, পক্ষপাতহীন, সরকারি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে।
ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রসারের যুগে মানুষ অনলাইন নির্ভর হবে, এটাই স্বাভাবিক। ক্রেতারা অনলাইনে সহজেই নানা পণ্য পেয়ে যান। তার মানে এই নয় যে, পণ্য কেনার জন্য তারা বাজারে যান না। সংবাদপত্রের বিষয়টা ব্যতিক্রম। মুদ্রিত সংবাদপত্র নগদ টাকায় কিনতে হয়, আর অনলাইনে ছাপা পত্রিকার অবিকল কপি বিনামূল্যে মেলে। সুতরাং অনলাইনই পাঠকের জন্য স্বস্তিকর ও লাভজনক। তাছাড়া সংবাদপত্র ২৪ ঘণ্টায় একবারই প্রকাশিত হয়, দুটি সংস্করণ হয় খুব কম সংখ্যক কাগজেরই। পক্ষান্তরে একই সংবাদপত্রের অনলাইন ভার্সনে কোনো নিউজ সংযোজন-বিয়োজন কিংবা সম্পূর্ণ মুছে দেওয়ার সুযোগ থাকে প্রযুক্তিগত সুবিধার কারণেই। ২৪ ঘণ্টাই অনলাইন চালু থাকে এবং সার্বক্ষণিকভাবেই নতুন নতুন সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ থাকে। ফলে, সংবাদপত্রের তুলনায় অনলাইনের পাঠক বেশি থাকবেই। তাছাড়া টেলিভিশনে কোনো ঘটনার মূল তথ্য আগেভাগে পেলে পরের দিন সকালে একই তথ্যের জন্য সংবাদপত্র দেখার প্রয়োজন পড়ে না। সে কারণেই বিচক্ষণ সংবাদপত্র-সম্পাদকরা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুপরিকল্পনামাফিক সংবাদ পরিবেশন করেন, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং মতামত বিশ্লেষণের ওপর জোর দেন।
জনমত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৭৩ শতাংশ মুদ্রিত সংবাদপত্র পড়েন না, এমন তথ্যে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তারা অনলাইনে সংবাদ পড়েন। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শিক্ষিত, শিক্ষাবঞ্চিত সব শ্রেণির মানুষের হাতেই রয়েছে মোবাইল ফোন। শুধু সংবাদ পাঠ বা দেখাই তো নয়, মোবাইলের রয়েছে বিচিত্র ব্যবহার। মানুষ প্রযুক্তির সুবিধা নেবেই। এখন দেখবার বিষয় হলো আজকের সংবাদ তথা তথ্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী মানুষের কাছে শুধু টেক্সট হিসেবে নয়, বিভিন্ন উপায়েই প্রযুক্তিবান্ধবভাবে কী করে সংবাদ পরিবেশন করা যায়, তার সুগম পথ বের করা। ছাপানো পত্রিকার নতুন পাঠক সৃষ্টি, পাঠক ধরে রাখা এবং পাঠকসংখ্যা বাড়ানোর কৌশলী পরিকল্পনা গ্রহণ সময়ের দাবি।