বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের রাজনীতিতে তরুণদের ভ‚মিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি বড় অংশ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকলেও তাদের স্বাধীন চিন্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে। তরুণরা যখন আদর্শিক ও সৃষ্টিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্যকেই অগ্রাধিকার দেয়, তখন তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ছাত্র ও যুব রাজনীতি মূলত ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণে চলে, যেখানে তরুণদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করার সুযোগ সীমিত থাকে। রাজনৈতিক কর্মীদের একটি বড় অংশ ছাত্রাবস্থায় দলীয় নেতাদের দ্বারা আর্থিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যা তাদের লেজুড়বৃত্তিক হতে বাধ্য করে। সুশৃঙ্খল ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি লাভের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেক তরুণ রাজনীতিকে ক্যারিয়ারের মাধ্যম হিসেবে দেখে এবং দলীয় আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে চায়। তরুণদের মধ্যে একটি বড় অংশ রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে সামাজিক প্রতিপত্তি ও অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যেই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
স্বতন্ত্র চিন্তার অভাবের ফলে তারা প্রকৃত রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠতে পারে না। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা নির্ভরশীল হয়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতে তাদের ক্ষমতা অর্জনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়। ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ তারা কেবল ক্ষমতাসীনদের ছায়ায় বেড়ে ওঠে। এ ধরনের তরুণরা সমাজে নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্য ব্যক্তিদের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়। স্বাধীন চিন্তার অভাবে তারা ব্যবসা, চাকরি বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে টিকে থাকতে সমস্যায় পড়ে।
লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থেকে উত্তরণে দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে হবে। তরুণদের জন্য রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও আদর্শভিত্তিক নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষায় সমালোচনামূলক চিন্তা ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নিরপেক্ষ ছাত্ররাজনীতির চর্চা করতে হবে। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে তারা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী হওয়া থেকে বিরত থাকবে। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের স্বাধীন ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
পরিশেষে, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি স্বল্পমেয়াদে সুবিধা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি তরুণদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়। আদর্শগত ও নীতিনির্ভর রাজনীতির অনুপস্থিতি তাদের স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও সৃষ্টিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এজন্য রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ে তুলতে পারে এবং রাজনীতির একটি সুস্থ ধারার প্রতিষ্ঠা হয়।
লেখক : সাংবাদিক