![পদের দায়ভার: ব্যক্তির সততা বনাম প্রতিষ্ঠানের রাজনীতি পদের দায়ভার: ব্যক্তির সততা বনাম প্রতিষ্ঠানের রাজনীতি](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2024April/pabna-92-2502071943.jpg)
আমি যাদের বই বা লেখা পড়তে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তাদের মধ্যে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী এবং অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অন্যতম। যাদের দুইজনই বাংলাদেশের শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের জীবন ও কর্মে আমরা দেখি, ব্যক্তির সততা ও নৈতিকতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী, যিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, তার কারণ ছিল গভীরভাবে চিন্তা-provoking। তিনি বলেছিলেন, "আমি ব্যক্তিগতভাবে সৎ হলেও, পদটি সততার নয়।" তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, পদটি স্বাধীন নয়, বরং উর্ধ্বচাপ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অযোগ্যদের নিয়োগের মতো বাধ্যবাধকতার মুখে পড়তে হবে।
একইভাবে, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীও তিনবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তার যুক্তিও ছিল একই পদের স্বাধীনতা নেই, রাজনৈতিক প্রভাব এবং অযোগ্যদের নিয়োগের চাপে তিনি তার আদর্শিক অবস্থান বজায় রাখতে পারবেন না।
এই দুই ব্যক্তিত্বের সিদ্ধান্ত আমাদের মনে করিয়ে দেয় আইনস্টাইনের কথা। ১৯৫২ সালে ইজরায়েলের রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "রাজনীতির থেকে সমীকরণেই আমি বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি।" আইনস্টাইনের এই সিদ্ধান্ত ইজরায়েলের মানুষের কাছে তার মর্যাদা বাড়িয়েছিল, কমায়নি। তার নামে রাস্তা, স্মৃতিসৌধ, এমনকি ইজরায়েলের নোটেও তার ছবি ছাপা হয়েছিল।
বাংলাদেশের সংগীত জগতেও আমরা এমন উদাহরণ দেখি। মমতাজ বেগম, যিনি নিম্নমানের পরিবার থেকে উঠে এসে বাংলাদেশের সংগীত ভুবনে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর সমালোচিত হয়েছেন। তার রাজনৈতিক বক্তব্য অনেককে হতাশ করেছে, এমনকি হৃদয়ে রক্তক্ষরণও করেছে।
অন্যদিকে, রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, বাংলাদেশের সংগীত জগতের এক জীবন্ত কিংবদন্তী, সম্প্রতি রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন। তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। যদিও রাজনীতি খারাপ কিছু নয়, তবুও তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে এর নেতিবাচক প্রভাবই বেশি। কনকচাঁপার মতো একজন মার্জিত ও রুচিশীল শিল্পীর জন্য রাজনীতির এই জটিল জগতে প্রবেশ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।
ব্যক্তির সততা যখন পদের দায়ভারের মুখোমুখি হয়, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু যারা তাদের আদর্শিক অবস্থান বজায় রাখেন, তাদের সম্মান ও মর্যাদা কালের পরিক্রমায় আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
জেসমিন আক্তার
দিনাজপুর মেডিক্যাল কলেজ, দিনাজপুর
E-mail:[email protected]
তাবিব